ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ফুঁসে উঠেছেন অবরুদ্ধ কয়লাখনির শ্রমিক

মেহেদী হাসান উজ্জ্বল, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর)
🕐 ১০:৫৬ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ০৮, ২০২১

ফুঁসে উঠেছেন অবরুদ্ধ কয়লাখনির শ্রমিক

বৈশ্বিক করোনা মহামারী পরিস্থিতিতে লকডাউনের কারণে গত বছরের ২৬ মার্চে বন্ধ হয়ে যাওয়া দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর পার্শ্ববর্তী বড়পুকুরিয়া খনিতে ফের কয়লা উৎপাদন শুরু হয় সেপ্টেম্বরে। কোভিড-১৯ পরীক্ষার মাধ্যমে ৬০৪ শ্রমিককে নেওয়া হয় ভিতরে। প্রায় ছয় মাস ধরে সেখানেই আছেন তারা। বাইরে বের হতে দেওয়া হচ্ছে না। আবার বাকি শ্রমিকদেরও ভিতরে নেওয়া হচ্ছে না। এমন এক অবস্থায় ফুঁসে উঠেছেন শ্রমিকরা। খনির প্রধান ফটক উন্মুক্তকরণসহ তিন দফা দাবিতে তিন দিন ধরে খনির ভিতরে ও বাইরে চলছে তাদের বিক্ষোভ। 

গতকালও মিছিলসহ অবরোধ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন তারা। তাদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে খনির গেটে অবস্থান নিয়েছেন ভিতরে প্রবেশাধিকার বঞ্চিত শ্রমিকরা। এদিকে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রশাসনের চার ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা হয়েছে। তবে সে আলোচনার কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি শ্রমিকদের। অন্যদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে খনি এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশসহ ডিবি, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) মোতায়েন করা হয়েছে।

জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতির শুরুতে গত বছরের ২৬ মার্চ খনি থেকে কয়লা উৎপাদন বন্ধ করা হয়। পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে এক হাজার শ্রমিকের মধ্যে ৬০৪ শ্রমিককে করোনা পরীক্ষা করা হয়। তাদের বাইরে না যাওয়ার শর্তে ভিতরে নিয়ে কয়লা উৎপাদন শুরু করা হয়। এরপর থেকে আজ অবধি তারা ভিতরেই আছেন। পরিবারের সঙ্গে মুঠোফোনে আলাপ ছাড়া কোন যোগাযোগ নেই। অন্যদিকে ওই খনির বাকি প্রায় ৪০০ শ্রমিক এখনো কাজে ফিরতে পারেননি। তাদের বিষয়ে কিছুই বলছেন না কর্তৃপক্ষ।

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রবিউল ইসলাম রবি ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক নূর ইসলাম বলেন, ‘দেশের সব কিছুই স্বাভাবিক হয়েছে শুধু কয়লাখনিতেই চলছে লকডাউন। আমাদের দাবি, খনির চলমান লকডাউন প্রত্যাহার করে শ্রমিকদের ভ্যাকসিন প্রয়োগের মাধ্যমে স্ব-স্ব কর্মক্ষেত্রে যোগদানের অনুমতি দিতে হবে। তারা আরও বলেন, খনির প্রধান ফটক উন্মুক্ত করতে হবে, সকল শ্রমিকের প্রোফিট বোনাসসহ বকেয়া বেতন ভাতা ও উৎসব ভাতা প্রদান করাসহ শ্রমিকদের নামে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। এ সময় তারা বলেন, খনি কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত না জানা পর্যন্ত তারা তাদের কর্মসূচি থেকে সরবেন না।

টানা তিন দিনের বিক্ষোভ, অবরোধ ও অবস্থান কর্মসূচিতে উদ্ভূত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে গতকাল রোববার বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামানের সঙ্গে আলোচনায় বসেন দিনাজপুর জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকি, জেলা পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন বিপিএম (বার), পার্বতীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হাফিজুল ইসলাম প্রামাণিক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাশিদ কায়সার রিয়াদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেনসহ নেতৃবৃন্দ। পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নশিদ কায়সার রিয়াদ বলেন, শ্রমিকদের আন্দোলনের বিষয়ে জেলা প্রশাসকসহ খনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বিষয়টি মন্ত্রাণলায়ে জানানো হয়েছে। পরবর্তীতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান বলেন, শ্রমিকদের আন্দোলনের বিষয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আলোচনা শেষে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এছাড়াও বাইরের শ্রমিকদের ভিতরে প্রবেশ এবং বেতন ভাতার বিষয়ে চীনা ঠিকাদারকে কর্মপরিকল্পনা করার কথা বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে দিনাজপুর জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকির সঙ্গে মুঠোফোনে বারবার চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।

এদিকে সকাল থেকেই খনি এলাকায় শ্রমিকদের আন্দোলন করতে দেখা যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে খনি এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশসহ ডিবি, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) মোতায়েন করা হয়েছে।

 
Electronic Paper