ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ঠাকুরগাঁও নারী ও শিশু আদালত: দুই বছরে ১১শ’ মামলা নিষ্পত্তি

হাসান বাপ্পি, ঠাকুরগাঁও
🕐 ৬:৩৭ অপরাহ্ণ, মার্চ ০৬, ২০২১

ঠাকুরগাঁও নারী ও শিশু আদালত: দুই বছরে ১১শ’ মামলা নিষ্পত্তি

একটা সময় ছিল যখন গ্রামের অসহায় মানুষদের ভিটে মাটি বিক্রি করে ন্যায্য বিচারের আশায় ঘুরতে হতো আদালতের দ্বারে দ্বারে। তবে সে চিত্র এখন পাল্টে গেছে অনেকটাই। বদলে গেছে ঠাকুরগাঁও-এ বিচার বিভাগের চিত্র। গত দুই বছরে নারী ও শিশু আদালতে নিষ্পত্তি হয়েছে প্রায় ১১শ’ মামলা। যা আগের চেয়ে প্রায় ছয়শ’ মামলা বেশি।

ঠাকুরগাঁওয়ের নারী ও শিশু ট্রাইবুনালের বিচারক গোলাম ফারুকের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় এই অগ্রগতি হয়েছে বলে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা অভিমত প্রকাশ করেছেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ঠাকুরগাঁও নারী ও শিশু ট্রাইবুনালে ২০১৯ সালে জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ১১শ’ মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। বর্তমানে এই আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা প্রায় ১৩শ’। ২০১৯ সালে যা ছিল ১৭শ’ ৩৮।

সংশ্লিষ্ট আদালত সূত্রে জানা যায়, নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইবুনালে বিচারক গোলাম ফারুক প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে এজলাসে ওঠেন এবং কার্য তালিকার সব মামলার শুনানি করেন। এক্ষেত্রে তিনি পেশকারের কাছে রাষ্ট্রপক্ষের প্রস্তাবিত সাক্ষীর সব তালিকা সংগ্রহ করেন এবং সব সাক্ষীর সাক্ষ্য নেন। এছাড়া তিনি নিজেই উদ্যোগী হয়ে বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটরের সঙ্গে সাক্ষী উপস্থিত করাসহ মামলা নিষ্পত্তি কর্ম কৌশল নির্ধারণ করেন।

এছাড়াও বেশিরভাগ মামলাই হয়ে থাকে হয়রানিমূলক। আদালত সেসব আমলে নেওয়ার সময় সূক্ষ্মভাবে পরীক্ষা করায় হয়রানিমূলক মামলার সংখ্যা কমে গেছে এবং অভিযোগ গঠনের সময় কাগজপত্র পরীক্ষা করায় অনেকে প্রাথমিক পর্যায়েই মামলায় অব্যাহতি পায়। ১০ বছরের অধিক পুরাতন মামলা গুরুত্ব দিয়ে বিশেষ যতœ নেওয়া হয়। ফলে পুরাতন মামলা আশাতীতভাবে হ্রাস পেয়েছে।

এতে আদালতে বিচারপ্রার্থী মানুষের হয়রানি ও আর্থিক ক্ষতি থেকে মুক্তি পেয়েছে। এর উদাহরণ লক্ষ্য করা যায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির ২৮ তারিখে ২০০৬ সালের একটি মামলার রায়ের মধ্য দিয়ে। যেখানে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ২০০০ সালের সংশোধনী ২০০৩ এর ১০ ধারায় আসামি কসির উদ্দিনকে ৩ বছরের সশ্রম কারাদ- প্রদান ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অনাদায়ে আরও ছয়মাসের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।

এদিকে, করোনার কারণে আদালত বন্ধ থাকার পর গত আগস্ট মাসে শুরু হয় দেশের সব আদালতের বিচার কাজ। এতে প্রভাব পড়ে মামলা নিষ্পত্তিরও। দীর্ঘদিন আদালত বন্ধ থাকায় মামলা নিষ্পত্তির হার গিয়ে পৌঁছে শূন্যের কোটায়।

ঠাকুরগাঁও নারী ও শিশু আদালতের বিচারক গোলাম ফারুক করোনার সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভার্চুয়াল আদালতের মাধ্যমে ৮৫টি মামলা হলে সবকটি মামলাই নিষ্পত্তি করেন। যা বিচার বিভাগে ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে।

বিচারপ্রার্থীরা জানান, সময়মতো অফিস করলে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা সম্ভব। যা তিনি করতে পেরেছেন। তারা আরও বলেন আদালতে কোনো সাক্ষী এলে ফেরত দেওয়া হয় না, আদালতের সময় শেষ হলেও সাক্ষীর সাক্ষ্য নিয়ে তাকে বিদায় করা হয়। এ ব্যাপারে আদালতে কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং আইনজীবীদের সহযোগিতার কথা উল্লেখ করেন তারা।

নারী ও শিশু ট্রাইবুনালে বিপিপি এটিএম নাজমুল হুদা বলেন, বিচার নিষ্পত্তি ও আপসের ক্ষেত্রে ঠাকুরগাঁও নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইবুন্যাল নজির স্থাপন করেছে। এ ধারা অব্যাহত থাকবে।

ঠাকুরগাঁও আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পদক মোস্তাক আলম টুলু জানান, বিচার বিভাগের গতিশীলতা ও আইজীবীদের সহযোগিতার কারণে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। অধিক মামলা নিষ্পত্তির কারণে অধিক বিচারপ্রার্থী মানুষের ভোগান্তি কমেছে। মাসিক পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেট কনফারেন্স হওয়ার ফলে বর্তমানে মামলা নিষ্পত্তিতে আলাদা গতি এসেছে।

 

 
Electronic Paper