ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

দুই মেয়াদে উপ-উপাচার্যের দায়িত্ব পালন

প্রশাসক হলেও শিক্ষকতায় কখনো বিঘ্ন ঘটেনি

একান্ত সাক্ষাৎকারে ড. শাহিনুর রহমান

প্রিয় ক্যাম্পাস ডেস্ক
🕐 ৩:৫২ অপরাহ্ণ, মার্চ ০২, ২০২১

প্রশাসক হলেও শিক্ষকতায় কখনো বিঘ্ন ঘটেনি

২০১৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম দফায় উপ-উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শাহিনুর রহমান। প্রথম মেয়াদের সফল সমাপ্তির পর ২০১৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তাকে পুনরায় নিয়োগ দেয় সরকার। চলতি মাসের ২২ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় মেয়াদও সফলভাবে সম্পন্ন করেন ইবির ইংরেজি বিভাগের জ্যেষ্ঠ এই অধ্যাপক। ইবিতে রেকর্ড দুই মেয়াদে উপ-উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করা অধ্যাপক ড. মো. শাহিনুর রহমানের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সোহাগ ফেরদৌস।

খোলা কাগজ : শিক্ষকতা ও উপ-উপাচার্য হিসেবে প্রশাসনে দায়িত্ব পালনের মধ্যে পার্থক্য কী দেখেন?
ড. শাহিনুর রহমান : শিক্ষকতা মানে শিক্ষার্থী আর ক্লাসরুমের সঙ্গে নিবিড় আত্মিক ও নৈতিক সম্পর্কের মাধ্যমে জ্ঞানের সেতুবন্ধন, লালন ও চর্চার এক চলমান প্রক্রিয়া। আর একজন শিক্ষক প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পেলে তার দায় ও দায়িত্ব বেড়ে যায় ঠিকই; তবে মূল পেশা অর্থাৎ শিক্ষক হিসেবে পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত রাখতেই হয়। এই দুই দায়িত্বই সুন্দরভাবে সমন্বয় করতে যিনি সফল হন তিনি হয়ে ওঠেন একজন সফল শিক্ষক ও প্রশাসক।

খোলা কাগজ : উপ-উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে একাডেমিক দায়িত্ব পালনে কতটুকু দায়িত্ববান ছিলেন আপনি মনে করেন?
ড. শাহিনুর রহমান : প্রথমত, আমি একজন শিক্ষক, তারপর আমি উপ-উপাচার্য। আমার মূল দায়িত্ব শিক্ষকতা। শিক্ষক ছাড়া কখনোই নিজেকে প্রশাসক মনে করিনি। একজন শিক্ষকের এমনটি মনে করাও অনুচিত। প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও আমি নিয়মিত ক্লাস নিয়েছি, শিক্ষকতায় কখনো বিঘœতা ঘটেনি। আমি কখনো একজন শিক্ষকের দায়িত্ব ও কর্তব্য ভুলে যাইনি। দুই মেয়াদে উপ-উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেছি ঠিকই, কিন্তু ক্লাস ছিল সব কিছুর আগে, আমার প্রাণের ঠিকানা। বিশ^বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কর্মকা- পরিচালনাসহ শিক্ষার্থীদের সেবা দেওয়াই ছিল আমার প্রধান লক্ষ্য।

খোলা কাগজ : দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছেন। উপ-উপাচার্য হিসেবে আপনি কতটা সফল?
ড. শাহিনুর রহমান : আমি কতোটা সফল সেই উত্তর দিতে পারব না। আমার প্রিয় শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সহকর্মীরা এটি বলতে পারবেন। তবে সর্বোচ্চ নিষ্ঠার সঙ্গে আমি আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছি। এছাড়া আমার শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সহকর্মীদের সেবা দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। সাফল্য-ব্যর্থতার মূল্যায়নের ভার তাদের ওপরই ছেড়ে দিতে চাই। পাশাপাশি এটুকু বলবো, আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সব সময় সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছি, যার ফলে সুষ্ঠুভাবে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন পরিচালিত হয়েছে বলে আমি বিশ্বাস করি। আমার দায়িত্ব পালনের প্রাণশক্তি ছিল শিক্ষাথীদের কাছে আমার সেবা দেয়ার অঙ্গিকার।

খোলা কাগজ : আপনার ছাত্রজীবন ও শিক্ষকতার পেশাজীবন সম্পর্কে বলুন।
ড. শাহিনুর রহমান : আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তরে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জনের পর আমেরিকার ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি থেকে এম.ফিল সমতুল্য ফোকলোর-এ আরও একটি এমএ ডিগ্রি অর্জন করি। এরপর ২০০২ সালে ইংরেজি সাহিত্যে পি.এইচ.ডি ডিগ্রি সম্পন্ন করি।
১৯৯১ সালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করি। একই বছরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিই। একাডেমিক দায়িত্ব পালনের ধারাবাহিকতায় ইংরেজি বিভাগের সভাপতি, মানবিক ও সামজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন, ফোকলোর স্টাডিজ ও সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার বিভাগেরও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। এর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে অধ্যাপনা করেছি। এছাড়া আমেরিকায় অধ্যায়নকালে ব্লুমিংটনে ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহযোগী প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেছি। বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সিন্ডিকেট সদস্য ছাড়াও দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণা ও জ্ঞানভিত্তিক বিভিন্ন কমিটির সদস্য ও সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ হয়েছে।

খোলা কাগজ : শিক্ষাব্যক্তিত্ব ছাড়াও লেখক, সংস্কৃতিকর্মী হিসেবেও বিশেষ খ্যাতি আছে আপনার। এ সম্পর্কে কিছু বলুন।
ড. শাহিনুর রহমান : একাডেমিক জীবনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রচনা করেছি। এর মধ্যে রয়েছে ‘বেঙ্গলি পোয়েট ফকির লালন শাহ : ওরাল পোয়েট এন্ড ট্রেডিশন ইন দ্য সোস্যাল কনটেক্সট অব কন্টেম্পোরেরি বাংলাদেশ’- মূল বইটি ইংরেজিতে আমেরিকার ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি প্রকাশ করে এবং ১৯৯৯ সালে গুগল লাইব্রেরি বইটি ডিজিটাইজড করে। লেখার মধ্যে- ইংলিশ লিটারেচার : প্রস্পেক্টিভ এন্ড ক্রিটিসিজম, এ কালেকশন অব লিটারেরি এসেইজ এবং প্র্যাকটিকাম ইন সোস্যালওয়ার্ক এন্ড সোস্যাল ডেভলপমেন্ট প্র্যাকটিস লার্নিং প্রসেস অন্যতম। এছাড়াও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণা নিবন্ধ রয়েছে আমার। আমি বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের একজন তালিকাভুক্ত শিল্পী। লোকগীতি ও লালন গবেষক হিসেবে কাজ করে আসছি বহুদিন ধরে। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ বিতর্ক ফেডারেশনের রেক্টর পদ অর্জনসহ ২০০৪ সালে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি থেকে সেরা বিএনসিসি (আর্মি) অফিসারের স্বীকৃতি পাই। ওই বছরই আমি প্রেসিডেন্ট কমিশন অর্জন করি।

খোলা কাগজ : উপ-উপাচার্য হিসেবে দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করলেন। সরকারের কাছে আপনার প্রত্যাশা কী?
ড. শাহিনুর রহমান : মহামান্য রাষ্ট্রপতি আমাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন, আমি সর্বোচ্চ নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করেছি। আমার ওপর আস্থা রাখায় আমি বিনম্রচিত্তে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা উপমন্ত্রী ও বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যানের প্রতিও আমি কৃতজ্ঞতা জানাই। শিক্ষকতা আমার পেশা ও একমাত্র কাজ। পেশার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কোন দায়িত্ব দেওয়া হলে তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পালনের চেষ্টা করব।

খোলা কাগজ : দুই মেয়াদে উপ-উপাচার্যের দায়িত্ব সফলভাবে পালনের পেছনের কথা জানতে চাই।
ড. শাহিনুর রহমান : আমি সর্বদা নিয়ম-কানুন এবং সরকারের আদেশ নির্দেশ মেনে কাজ করেছি। কখনোই নিয়মের বাইরে যাইনি। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ সময় দায়িত্বপালনকালে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্তরিক সহযোগিতা করেছেন। সাফল্যের জন্য কোনো জাদুমন্ত্র নেই। নির্ভেজাল দায়িত্ব পালনই একমাত্র পথ। যারা আমার কাজটা সহজ করে দিয়েছেন তাদের প্রতি আমি অশেষ কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই।

খোলা কাগজ : বিশ্ববিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে কিছু বলবেন কী?
ড. শাহিনুর রহমান : আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও একজন শিক্ষক হিসেবে বলতে চাই- স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকের উচিত দেশকে প্রাণভরে ভালোবাসা। আজকের তরুণ-তরুণীরা আগামীর বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবে। তাদের বাস্তবসম্মত আধুনিক জ্ঞানলাভের পাশাপাশি আদর্শ মানুষ হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের মানুষকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। তাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে শিক্ষার্থীদের আগামী বাংলাদেশ নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তৈরি হতে হবে।

খোলা কাগজ : গুরুত্বপূর্ণ সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ড. শাহিনুর রহমান : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।

 

 
Electronic Paper