ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

অবশেষে মেঘনায় তলিয়ে গেলো ঝুলে থাকা সেই বিদ্যালয় ভবনটি

জিল্লুর রহমান রাসেল, হাতিয়া (নোয়াখালী)
🕐 ৩:৩৪ অপরাহ্ণ, মার্চ ০২, ২০২১

অবশেষে মেঘনায় তলিয়ে গেলো ঝুলে থাকা সেই বিদ্যালয় ভবনটি

অবশেষে মেঘনা নদীতে তলিয়ে গেলো গত দু’মাস ধরে ঝুলে থাকা হাতিয়ার চানন্দী ইউনিয়নের জনতাবাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সেই দোতলা ভবনটি। সেই সাথে তলিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় হেমায়েতপুর ও ফরিদপুর বিদ্যালয়ের ভবন দুটিও।

সোমবার চোখের সামনে নিজের বিদ্যালয়টি তলিয়ে যেতে দেখে হাউ মাউ করে কাঁদছে চানন্দী ইউনিয়নের জনতা বাজার এলাকার মো. ইউসুফের ছেলে রাশেদ (১১)।

রাশেদ জানায়, তার বাবা মানুষের কাজ করলেও তার স্বপ্ন পড়ালেখা শিখার। কিন্তু স্কুলটাও নদীতে তলিয়ে যাওয়ায় তার পড়ালেখা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে মেঘনার করাল গ্রাসে রাশেদের মত হাজারো শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন হুমকিতে পড়েছে।



জানা যায়, ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে জনতা বাজারে নির্মিত হয় ‘জনতা বাজার বহুমুখী আশ্রয়ণ কেন্দ্র ও প্রাথমিক বিদ্যালয়থ ভবনটি। প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ, নেদারল্যান্ডস সরকার ও ইফাদের যৌথ অর্থায়নে চর উন্নয়ন ও বসতি স্থাপন প্রকল্প-৪ (সিডিএসপি) দোতলায় ১০ কক্ষ বিশিষ্ট ভবনটি নির্মাণ করে। ছয় বছরের মাথায় তলিয়ে গেছে এ ভবনটি। বন্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলোচ্ছাসের সময় বিদ্যালয়ে এ ভবনটিতে আশ্রয় নিত হাজার হাজার মানুষ। বাকি সময় বেসরকারিভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান চলত।

একাধিক সূত্রে জানা যায়, ২০১১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত উপজেলার চানন্দি ইউনিয়নে নির্মাণ হয়েছে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩০টি পাকা ভবন। যেগুলো আবার ঘূর্ণিঝড়, বন্যা বা জলোচ্ছাসে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হতো। এগুলোর মধ্যে গত সাত বছরে চর বাসার, শেখ হাসিনা বাজার, আদর্শ গ্রাম, বাতানখালি, জয় বাজার, মুজিব বাজার, রেহানা বাজার, মসজিদ মার্কেট, এম আলী, শাবনাজ বাজার, হাজী গ্রাম ও কিল্লার বাজার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আশ্রয় কেন্দ্র ভবন নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এছাড়াও নদীগর্ভে তলিয়ে গিয়েছে প্রায় ১৩টি মসজিদ, ৮টি বাজার, ২৫টি দাখিল, এবতেদায়ি ও নূরানী মাদ্রাসা। বাস্তুচ্যুত হয়েছে অন্তত ১৫ হাজার পরিবার। আর এ পরিবারগুলো বর্তমানে বিচ্ছিন্নভাবে পাশ্ববর্তী এলাকাগুলোর সড়কের পাশে বসতি করে রয়েছে।

চানন্দী ইউনিয়নের বাসিন্ধা মনির উদ্দিন বলেন, নদীতে বিলীন হয়ে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, তেমনি ক্ষতির মুখে এ অঞ্চলের শিশুদের শিক্ষা ব্যবস্থা। একই সঙ্গে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাসে আশ্রয়হীন হয়ে পড়বে স্থানীয়রা। আর এ ভবনগুলো ভেঙে নদীতে পড়ে যাওয়ায় পানিতে যাচ্ছে সরকারের কোটি কোটি টাকা। তাই সরকারিভাবে নদী ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।

হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইমরান হোসেন বলেন, ভেঙে পড়া বিদ্যালয়গুলোর কাছাকাছি অন্য কোনো জায়গায় অস্থায়ীভাবে বিদ্যালয় করে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চালানোর ব্যবস্থা করতে পরিচালনা কমিটিকে বলা হয়েছে।

হাতিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মাহবুব মোরশেদ জানান, আমরা নদী ভাঙন রোধে কাজ করছি। একনেকে থাকা একটি বড় আকারের বিলটি পাস হওয়ার পথে। এটি পাশহলে দ্রুত নদী ভাঙনের রোধে কাজ শুরু করা হবে।

 
Electronic Paper