নিরপেক্ষতা বলতে স্থায়ী কিছু নেই
রাহমান মনি
🕐 ১২:০৭ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২১
নষ্টরা সত্যিকারের সাংবাদিকদের স্থায়ী বন্ধু হতে পারে না। আর নষ্টরা যদি সাংবাদিকদের স্থায়ী বন্ধু হয় তাহলে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। কথাগুলো বলেছিলেন জাপানি এক সিনিয়র সাংবাদিক। তিনি আরও বলেছিলেন, তুমি যদি সত্যিকার অর্থেই সাংবাদিকতা করতে যাও তাহলে দেখবে দিন দিন তোমার বন্ধুসংখ্যা কমে যাবে এবং আনুপাতিক হারে শত্রু বেড়ে যাবে। স্বার্থে আঘাত লাগলেই তারা তোমার পেছনে লাগবে এবং তাদের সঙ্গে আরও কিছু যোগ হবে। কারণ নষ্টদের পাল্লা ভারী থাকে।
আমি একজন সংবাদকর্মী মাত্র। সংবাদ সংগ্রহ এবং জানান দেওয়া আমার দায়িত্ব এবং কর্তব্যও। সংবাদকর্মীকে আবার কার্যক্ষেত্রে সংবাদপত্র প্রতিনিধি, টেলিভিশন সংবাদদাতা বা বেতার সাংবাদিক ইত্যাদি বিভিন্ন পর্যায়ে বিভাজন ঘটানো হয়েছে। এছাড়াও, অবস্থানের ভিত্তিতেও নামকরণে বিভিন্নতা লক্ষ করা যায়। তন্মধ্যে স্টাফ রিপোর্টার, প্রতিনিধি, সংবাদদাতা ইত্যাদি নামে অভিহিত করা হয়। তারা প্রত্যেকেই স্ব-স্ব মাধ্যমের জন্য সত্য ও বস্তুনিষ্ঠতার সঙ্গে ঘটনাবহুল এবং গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ প্রেরণ করে থাকেন।
এখন দেখা যাক, সংবাদ কাকে বলে এবং কোন ঘটনাকে সংবাদ হিসেবে প্রচার করা যাবে আর কোনটা নয়। কারণ, সব খবরই কোনো না কোনো ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিন্তু ঘটনাই খবর হয় না। যদিও সংবাদের নির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞা নেই। তবে এককথায় বলা যায়, সংবাদ হলো চলতি ঘটনার বস্তুনিষ্ঠ বিবরণ, যা পাঠকের আগ্রহ উদ্দীপিত করে। কথাটাকে একটু কঠিন করে বললে এভাবে বলা যায়- স্থিতাবস্থার পরিবর্তনে সৃষ্ট ঘটনা, যাতে সমাজে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় এবং যা অবশ্যই সত্য, বস্তুনিষ্ঠ ও গুরুত্বপূর্ণ, তাকে সংবাদ বলে। new হচ্ছে নতুন আর সেই new এর বহুবচন news।
এজন্য সংবাদ বিশ্লেষকরা বলেন, news must be new মনে রাখতে হবে- যা দেখি, তা খবর; যা জানি, তা প্রেক্ষাপট (background) এবং যা অনুভব করি, তা মতামত।
খবরের যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিশেষত্ব আছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ক. সংবাদ কোনো ঘটনা নয়, ঘটনার প্রতিবেদন মাত্র; খ. খবর সাধারণত কোনো নতুন বা সাম্প্রতিক ঘটনার প্রতিবেদন। গ. সংবাদ অবশ্যই নির্ভুল হতে হবে; ঘ. সংবাদের তথ্যগুলোকে অবশ্যই বস্তুনিষ্ঠ হতে হবে; ঙ. প্রতিটি প্রতিবেদনই হবে নিরপেক্ষ বা ভারসাম্যপূর্ণ; চ. সংবাদ হতে হবে সংক্ষিপ্ত ও স্পষ্ট। (সংগৃহীত)। প্রশ্ন হচ্ছে, উল্লিখিত নীতি মেনে সত্যিকার অর্থে খবর প্রকাশ করলে কি সবার কাছে নিরপেক্ষ থাকা যাবে? আর, যদি মানা না হয় তাহলে কি সাংবাদিকতার নীতি বা নীতিমালা বজায় রাখা যাবে? একটি সংবাদ বিশেষ করে অনুসন্ধানী রিপোর্ট বা ফৌজদারি সংবাদ প্রকাশ করলে কারও না কারওর প্রতিকূলে যাবেই। সত্যিটা যখন বেরিয়ে আসে তখন যাদের আঁতে লাগে তখন তারা উঠে-পড়ে লাগে সাংবাদিকের পেছনে। সংবাদের বিষয়বস্তু ধর্তব্যে না নিয়ে, তথ্যের পেছনে তথ্য না দিয়ে সাংবাদিকের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কুৎসা রটনায় মেতে উঠে। রঙ লাগানো হয় সাংবাদিকের ব্যক্তি চরিত্রে। নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায়।
রাহমান মনি : জাপান প্রবাসী সাংবাদিক
[email protected]