ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সাংবাদিক মুজাক্কির হত্যার বিচার দাবীতে পরিবারের সংবাদ সম্মেলন

নোয়াখালী প্রতিনিধি
🕐 ৩:৫৬ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২১

সাংবাদিক মুজাক্কির হত্যার বিচার দাবীতে পরিবারের সংবাদ সম্মেলন

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে মেয়র আবদুল কাদের মির্জা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির হত্যার সুষ্ঠু বিচারের দাবীতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তার পরিবার।

বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা নোয়াখালী জেলা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নিহতের বড় ভাই নূর উদ্দিন।

তিনি বলেন, নিহত মুজাক্কির সাংবাদিকতা পেশার পাশাপাশি সামাজিক ও মানবিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। অসুস্থ্য ও মুমূর্ষ রোগীদের পাশে দাঁড়াতেন। তিনি রোগীদের প্রয়োজনে এ-নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত ২৬ জনকে দিয়েছেন। করোনাকালীন নিজ এলাকার অসহায় ও গরীব মানুষের দ্বারে দ্বারে খাবার এবং প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন। ঈদে দুঃস্থ ও এতিমদের গোপনে সহযোগিতা করতেন।

নূর উদ্দিন আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, গত শুক্রবার উপজেলার চাপরাশিরহাট পূর্ব বাজারে আ.লীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষের সময় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন মুজাক্কির। এ সময় আহত মুজাক্কির বাঁচার জন্য বার বার আকুতি জানালেও উপস্থিত স্থানীয় লোকজন, জনপ্রতিনিধি ও পুলিশ সদস্যরা তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি। গুলিবিদ্ধ হয়ে দীর্ঘসময় বাজারে পড়ে থাকার কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মুজাক্কির মৃত্যুবরণ করেন বলে জানিয়েছেন ঢামেকের চিকিৎসক।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বুরহান পড়া লেখার পাশাপাশি সংবাদিকতা করতো। কিন্তু সে কোন দলের কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিল না বলে তিনি দাবী করেন।

সংবাদ সম্মেলনে নিহতের পিতা মাওলানা নূরুল হুদা মো. নোয়াব আলী মাস্টার বলেন, ওইদিন ঘটনাস্থলে তিনি বা তাঁর পরিবারের কেউ উপস্থিত ছিলেন না। তাই কারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তারা দেখেনি। তবে যারা এ হত্যার সাথে জড়িত সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত খুনিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের দাবী করেন এবং খুনিদের ফাঁসির জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানান তিনি।

নিহতের মা মমতাজ বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমার আদরের ছোট ছেলে মারা যাওয়ার পর আত্মীয় স্বজনের মাধ্যমে গতকাল (বুধবার) একটি ভিডিও দেখেছিলাম। ভিডিওতে দেখা যায় গত কয়েক মাস আগে একজন ব্যক্তি তাকে অকথ্যভাষায় গালাগালি করে মারধর করে। ওই হামলাকারী তাকে বলে ‘তোর কোন বাবা আছে?। আমি ওই হামলাকারীকে গ্রেপ্তার করার জন্য প্রশাসনকে অনুরোধ করছি। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নিবেন বলে জানিয়েছেন নিহতের ভগ্নিপতি আবদুস সাত্তার।

আগেও নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন মুজাক্কিরঃ
আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর আগেও একবার শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির। গত ২০১৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বরের মুজাক্কিরকে নির্যাতনের এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এখন ভাইরাল। যে ভিডিওটি বর্তমানে সংবাদকর্মী ও প্রশাসনসহ বিভিন্ন মহলের কাছে সংরক্ষিত আছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি মীর জাহিদুল হক রনি বলেন, মুজাক্কিরকে নির্যাতনের ভিডিওটি ইতোমধ্যে আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। ভিডিওটিতে দেখা গেছে উপজেলার কথিত সাংবাদিক রাসেল (হাসান ইমাম রাসেল) মুজাক্কিরকে গালমন্ধ ও মারধর করছে। ওই দোকানটা বসুরহাট বাজারের অন্য একজন সাংবাদিকের। ওই সাংবাদিক আমাদের জানিয়েছেন মুজাক্কিরকে রাসেল মারধর করতে দেখে তিনি এসে বিষয়টি সমাধান করে দিয়েছিলেন। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ভিডিওটি দেখছেন। অপরাধী যেই হোক না কেন তাকে ছাড় দেওয়া হবে না।

গত শুক্রবারে যা ঘটেছিলঃ
গত শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) উপজেলার চাপরাশিরহাট পূর্ব বাজারে বসুরহাট পৌরসভার ময়র মির্জা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বাদলের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশও কয়েক রাউন্ড টিয়ারসেল ও শর্টগানের গুলি ছুঁড়ে। ঘটনার ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে গিয়ে ত্রিমুখী সংঘর্ষের মুখে পড়ে গুলিবিদ্ধ হন সাংবাদিক মুজাক্কির’সহ ৭-৮ জন।

পরে আশংকাজনক অবস্থায় মুজাক্কিরকে প্রথমে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে গত শনিবার রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে তার মৃত্যু হয়। মুজাক্কির অনলাইন নিউজ পোর্টাল বার্তা বাজারের নোয়াখালী প্রতিনিধি ছিলেন।

 
Electronic Paper