ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

হলে অবস্থানের সিদ্ধান্তে অটল জাবি শিক্ষার্থীরা

জাবি প্রতিনিধি
🕐 ৩:০৬ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২১

হলে অবস্থানের সিদ্ধান্তে অটল জাবি শিক্ষার্থীরা

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির ক্লাস ও হল খুলে দেয়ার ঘোষণার পরেও হলে অবস্থান করার কথা জানিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তারা বলেছেন, ‘এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর সেসব এলাকায় অবস্থান করা তাদের জন্য আর নিরাপদ নয়। এছাড়া এলাকাবাসী খাবারের দোকান বন্ধ করে দিয়েছে। এমনকি খাবারের পার্সেল সার্ভিসও বন্ধ রয়েছে। এমন অবস্থায় খাবার সংকটে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। ফলে তাদের হলে অবস্থান করা ব্যতীত বিকল্প নেই। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি হলেই অবস্থান করবো।’

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ‘তারা প্রশাসনের নোটিশের পরেও হলে অবস্থানের সিদ্ধান্তে অটল আছেন এবং সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) পর্যায়ক্রমে অন্যান্য ছাত্রী হলের তালা ভেঙে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়েছেন।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের পর আমরা শিক্ষার্থীদেরকে হল ত্যাগ করার বিষয়ে বুঝাচ্ছি। আশা করছি, তারা সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান দেখাবে।’

এর আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) প্রশাসন এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষার্থীদেরকে সোমবার সকাল ১০টার মধ্যে নিজ উদ্যোগে হল ত্যাগের নির্দেশ দেন। অন্যথায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ স্বাক্ষরিত এই বিজ্ঞপ্তি রবিবার দিনগত রাত ১টার দিকে প্রকাশ করা হয়। কিন্তু এই বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাখান করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হলেই অবস্থান করছেন।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, ‘নিরাপত্তার কারণে তারা হলে অবস্থান নিয়েছেন এবং প্রশাসনের আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকিতেও তারা হল ছেড়ে যাবেন না।’

এদিকে বিজ্ঞপ্তির আহ্বান প্রত্যাখান করে শিক্ষার্থীরা হলে অবস্থান করায় সোমবার সংশ্লিষ্ট হল প্রশাসন ১২টার দিকে হলে গিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে হল ছাড়ার অনুরোধ জানান। তবে হল প্রশাসনের অনুরোধে সাড়া দেয়নি শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোতাহার হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা প্রতিটি হলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের চলে যেতে বলেছি। তারা আমাদের প্রস্তাব মানেনি। পরে প্রভোস্টরা ফিরে আসেন।’

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দেয়া বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে ক্যাম্পাসে সোমবার বিক্ষোভ মিছিল করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বর থেকে শুরু হয়ে মেয়েদের হলের দিকে যায়। তারপর বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের তালা ভেঙ্গে ছাত্রীরা হলে প্রবেশ করে। এরপর দুপুর ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্ত্বরে সংবাদ সম্মেলন করে ৫ দফা দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।

দাবিগুলো হলো: ১. প্রশাসনের দেয়া বিজ্ঞপ্তি ১২ ঘন্টার মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে ২. কোনভাবে হল থেকে বের করার চেষ্টা করা যাবে না। ৩.আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে গেরুয়ায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করতে হবে এবং এর ইন্ধনদাতাদের খুঁজে বের করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ৪. ক্যাম্পাসের কতিপয় ছাত্র-শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী এই হামলার ঘটনার সাথে সংযুক্ত আছে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে শোনা যাচ্ছে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করে এর সত্যতা নিশ্চিত করতে হবে। ৫.অজ্ঞাত আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিয়ে চিহ্নিত ব্যক্তিদের নামে মামলা দায়ের করতে হবে।

এদিকে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর সংঘর্ষের ঘটনায় অজ্ঞাত ২৫০ জনকে আসামি করে বোরবার আশুলিয়া থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার (নিরাপত্তা) জেফরুল হাসান চৌধুরী সজল।

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর স্থানীয় সন্ত্রাসীদের নৃশংস হামলার ঘটনায় নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম’। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হলসমূহ খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদও হল খুলে দেবার দাবি জানিয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ জার্নালিজম স্টুডেন্টস কাউন্সিল (বিজেএসসি) জাবি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়েছে।

 
Electronic Paper