ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ব্র্যান্ডগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে

জাফর আহমদ
🕐 ৪:০৮ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২১

ব্র্যান্ডগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে

মো. মহিউদ্দিন রুবেল একজন তরুণ উদ্যোক্তা। লেখাপড়া শেষ করেই পারিবারিক ব্যবসা ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেডে যোগ দেন। তিনি বিজিএমইএ-এর বর্তমান পর্ষদে পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনিই তরুণতম উদ্যোক্তা যিনি বিজিএমইএ-এর পরিচালক হয়েছেন। পরিচালক হওয়ার পর তৈরি পোশাক শিল্পের ব্র্যান্ডিং, ফ্যাশন টেকনোলজি ও সাসটেইনেবিলিটি বিষয়ে কাজ করছেন। ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেড আন্তর্জাতিকভাবে সমাদৃত। পেয়েছে আন্তর্জাতিক পুরস্কারও। মহিউদ্দিন রুবেল খোলা কাগজের সঙ্গে নানা বিষয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জাফর আহমদ

তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে পোশাক শিল্পের সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহকে কীভাবে দেখছেন?
উদ্যোক্তা তরুণই হোন আর যে বয়সেরই হোন, তার পরিচয় একজন উদ্যোক্তা। হ্যাঁ, বয়সের দিক থেকে আমাকে তরুণ বলছেন, সেক্ষেত্রে আমি আমার আগে যে সব মুরুব্বি ছিলেন, যারা আজকে এই সেক্টরটা বা আমাদের মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর জায়গা করে দিয়েছেন এ জন্য তাদের স্মরণ করি। আমরা মাত্র ১২ হাজার ডলারের পণ্য দিয়ে রপ্তানি শুরু করি। আজ রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০ বিলিয়ন ডলার। এখন আমরা ৫০ বিলিয়ন ডলারের স্বপ্ন দেখছি। এ জন্য উনাদের অবদান অনস্বীকার্য। উনাদের কারণে আমরা আজকের জায়গায় আসতে পেরেছি। এখন যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের চেঞ্জ হতে হবে।

স্বাধীনতার অবব্যহতির পর পর আমাদের যে অবস্থা ছিল, আজকে আমাদের সে অবস্থা নেই। স্বাভাবিকভাবে আমাদের অবকাঠামো থেকে শুরু করে আমাদের মনমানসিতার পরিবর্তন এসেছে। তখনকার প্রডাকশনের ধরন, আজকের প্রডাকশনের ধরন আলাদা। আজকে আরও যে সব চেঞ্জ হওয়ার দরকার তা হলো মানসিকতা। আর অবশ্যই নেক্সট জেনারেশন চলে এসেছে। আমাদের বেড়ে ওঠাটাই আলাদা। প্রতিযোগীদের সঙ্গে কমপ্লিট করে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যকে এগিয়ে নিতে হচ্ছে। ব্যবসায় প্রতিযোগিতা একই রয়ে গেছে শুধু প্যাটার্নটা চেঞ্জ হয়েছে।

এ বিষয়ে আমরা একটি উদাহরণ দিতে পারি। এক সময় আমরা ইন্টারনেটের ব্যবসা করতাম না। সে সময় হয়তো অনেকে ভাবতেই পারেনি ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যবসা বাণিজ্য হবে। কিন্তু করোনার সময়ে এটা এখন বাস্তবতা। এই মন্দার কারণে কারণে ইন্টারনেট সেলে যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে। যদিও তৈরি পোশাক শিল্পে ইন্টারনেটের একটি বেটার কার্যক্রম ছিল, করোনার কারণে ঘরের বাইরে বের হতে পারছি না; তাহলে কি করতে হবে? আমাদের জীবনকে আটকানো যাবে না। আমাদের খেতে হবে, কাপড়ও পরতে হবে। হয়তো কাপড়ের প্যাটার্নটা চেঞ্জ হয়েছে। কাপড় পরা কিন্তু বন্ধ হয়নি। তাহলে কি হলো- অনলাইন সোর্সটা বেড়ে গেল।

প্রবীণ উদ্যোক্তারা অনলাইনের ও তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে এত নিবিড়ভাবে যুক্ত ছিলেন না। তখন বিষয়গুলো এভাবে এভেইলেবল ছিল না। এখন যেটা পাচ্ছি। এখন যে কারণে সব কিছু প্রতিফলিত হচ্ছে। অবশ্য মনমানসিকতা একটি বড় ব্যাপার- সে কথা আমি বারবার বলতে চেষ্টা করছি। সবারই ভূমিকা থাকতে হবে, কারণ প্রবীণদের অভিজ্ঞতা আর নতুনদের উদ্যম যুগ যুগ ধরে চলে আসছে, আগামীতে নবীন-প্রবীণের এই যাত্রা চলতে থাকবে। এভাবেই কাজ করতে হবে।

সাম্প্রতিক সময়ের কথা যদি বলি তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকের কর্ম পরিবেশ, পেশাগত নিরাপত্তার বিষয়টি ক্রেতাদের পক্ষ থেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, আগে যেটা ছিল না। এই যুগের উদ্যোক্তা হিসেবে বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?
বিষয়টি নিয়ে আমি একটু ভিন্নভাবে বলতে চাই। এই ব্যবসাটা তো একটি চেইন। কাপড়ের যে মেটারিয়েল বানাচ্ছেন সেও একটি পার্ট, যারা নিচ্ছেন তারা একটি পার্ট। সবাই মিলে তৈরি পোশাক শিল্প একটি চেইন। আমরা একেকজন চেইনের একটি অংশ। হয়তো আমি একটু বড় ভূমিকা রাখছি আর একজন হয়তো একটু কম ভূমিকা রাখছেন। কিন্তু কম বেশি ভূমিকা রাখছি সবাই। দেখুন, ক্রেতারা এই চেইনের কথা, শ্রমিকের অধিকার- আপনি এক পাক্ষিকভাবে বললে তো হবে না। আপনি মুদ্রার এক পিঠ দেখে বলবেন, আরেক পিঠ মানবেন না সেটা তো সম্ভব না। মানলে আপনাকে সব দিক মানতে হবে। শ্রমিকের অধিকার ও ন্যায্য মজুরি থেকে শুরু করে সব সুবিধা দিতে হবে- এতে কোনো সন্দেহ নেই। এ ছাড়া কেউ এগুতে পারবেন না। কারণ, শিল্পকে গ্রো করতে হলে এটা করতেই হবে। এ জন্য আপনার খরচ বাড়ছে- এই খরচ কে দেবে। হয়তো আপনাকে বেশি মুনাফা করতে হবে, অথবা আমার যে ব্র্যান্ড উৎপাদনের খরচ দিচ্ছে তাকে বাড়িয়ে দিতে হবে। আমি তো ব্যাংক থেকে টাকা এনে এই খরচ চালাতে পারব না। পকেট থেকে দিয়ে দুই মাস চলে তারপর তো চালাতে পারব না। এই পাঁচ-সাত বছরে গার্মেন্ট কারখানা চালানোর খরচ কমেছে নাকি বেড়েছে? গত পাঁচ-সাত বছরে আমাদের প্রায় গড়ে ৩০ শতাংশ খরচ বেড়েছে। এই বৃদ্ধি পাওয়া খরচের মধ্যে শ্রমিকের মজুরিসহ সব কিছু আছে। এই সময় ক্রেতারা দাম কমিয়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। একদিকে ক্রেতারা দাম কমিয়ে দিচ্ছে, অন্যদিকে খরচ বাড়ছে। শ্রমিকের সুবিধা বাড়াতে হচ্ছে, অন্যান্য খরচ বাড়ছে। আমরা কিন্তু এতগুলো করছি। সব কিছু আমরা বাড়াচ্ছি- কমপ্লায়েন্স থেকে শুরু শ্রমিকের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা সব কিছু বাড়াচ্ছি। এ দিক থেকে বিশে^ আমরা নিশ্চয়ই প্রথম হব।

আমি উদ্যোক্তা হয়ে তো অন্যায় করতে পারিনি। কেউ কেউ এক হাজার, কেউ দশ হাজার শ্রমিকের দায় নিচ্ছি, আমাদের দায় কে নিচ্ছে? আমাদের দায়-দায়িত্ব সরকার ও ক্রেতাদের নিতে হবে না? কালকে যখন আমি বেতন দিতে পারছি না তখন কিন্তু আমার কারখানা ভাঙচুর হচ্ছে। এই দুঃখ কিন্তু আমি একজন উদ্যোক্তা হিসেবে আপনার কাছে প্রকাশ করছি।

কয়েক দিন ধরে লক্ষ্য করছি উদ্যোক্তারা বলছেন তৈরি পোশাক খাতে উদ্যোক্তা-ক্রেতারা সবাই শোষিত হচ্ছে, আপনিও তাই বলতেন চাইছেন?
দেখুন, আমরা বাংলাদেশি নেগোশিয়নে খুব দক্ষ নই। যেদিক থেকে ভারতীয়, শ্রীলংকানরা খুবই স্মার্ট। নেগোশিয়েশন স্কিল আমাদের ডেভেলপ করতে হবে। আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

একজন ক্রেতা আমাদের পাঁচ টাকা দিয়ে একটি কাজ দিতে চাইলো, আমি করলাম না। আপনি সেটা করে ফেলছেন। তাহলে কি হচ্ছে বায়ার তো চাইবেই যত পারে কম টাকায় কাজ করিয়ে নিতে। তাহলে দিন শেষে কি হলো, আমার কারখানাটি খালি গেলো। খালি যাওয়া মানে আমার কারখানার জন্য আরও বেশি লোকশান। তাহলে কি হচ্ছে, আমি কম দামেই কাজটি নিয়ে নিচ্ছি। এক্ষত্রে আমাদের বেইজ প্রাইজ থাকতে হবে। আমাদের ঐক্য থাকতে হবে যে, এই ধরনের কাজ এই প্রাইসের নিচে করা যাবে না। যখন আমরা একসঙ্গে বসে নেগোসিয়েট করতে পারবো সরকার যখন আমাদের সাপোর্ট দিতে থাকবে, যখন ব্র্যান্ডগুলো বলতে পারবো যে, তোমরা এই ধরনের কাজ এই প্রাইসের নিচে করবা না। তখন সঠিক মূল্য দিতে হবে।

আমাদের এখানে কারখানা বেশি হয়ে গেছে। নেগোসিয়েশন করতে পারছেন না, বা যাচ্ছে না- এ ধরনের কারখানা চালানোর জন্য চালাচ্ছেন-বায়াররা এই সুযোগটা নিয়ে নিচ্ছেন। এখানে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে চালতে হবে যাতে কম টাকায় আমরা কাজ না নেই এবং বায়াররা আমাদের ফোর্স করতে না পারে।

আপনি যখন ২০ হাজার, ৩০ হাজার শ্রমিকের দায়দায়িত্ব নিচ্ছেন, আপনাকে মাস শেষে বেতন দিতে হবে। তাহলে কি হয় আপনার তো টেনশন থাকে, প্রেশার থাকে। আর ক্রেতারা এ সুযোগটা নিয়ে নেয়। কারখানায় কাজ না থাকলে তো কারখানা পুরোই লোকশান। ক্রেতারা এই সুযোগটা নিচ্ছে। এই জায়গায় আমাদের কাজ করতে হবে।

করোনাভাইরাসের অভিঘাত মোকাবিলা করতে সরকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছে, এই প্রণোদনা তৈরি পোশাক শিল্পের কতটা উপকারে এসেছে?
করোনাকালে শ্রমিকদের চার মাসের বেতন দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী যে প্রণোদনা দিয়েছিলেন এর জন্য যদি কৃতজ্ঞতা জানাই তাহলে এটা ছোট করা হবে। কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ছোট করতে চায় না। কারণ প্রধানমন্ত্রী এতটা বিচক্ষণ, তিনি যে কত বিচক্ষণ, দেশ নিয়ে, আমাদের এই খাত নিয়ে কত চিন্তা করেন-এই সিদ্ধান্তে তা প্রমাণ হয়। যদি ওই সময় ওই প্রণোদনা ঘোষণা করতেন তাহলে এই খাত বসে যেত। কারণ তখন আমাদের এক্সপোট নেই, ব্যাংক টাকা দিতে পারছে না। আমরা এক মাস চালাতে পারি না; সেখানে চার মাস কীভাবে চলত! চার মাস এ সেক্টর কীভাবে চলতো। ওই চার মাসই এখন আমাদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে সামনে এগিয়ে যাওয়ার।

এই টাকা না হলে আমরা মুখ থুবড়ে পড়ে যেতাম। ওটার পর আরও কিছু ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল দিয়েছিল ওগুলো বিতরণে ব্যাংক খুব জটিল করে উপস্থাপন করেছে, একারণে উদ্যোক্তাদের কাছে পৌঁছাতে পারেনি। এক্ষেত্রে তারা যে শর্ত চাচ্ছিলো সেই শর্ত সব মালিকের কাছে নেই। ওটার সুযোগ ছিল সবাই নিতে পারেনি। আর দ্বিতীয়ত হচ্ছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মনে করেছিলেন ছয় মাসের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু সেটা সমাধান হয়নি। এটা প্রথম ঢেউ দ্বিতীয় ঢেউ একের পর এক সমস্যা লেগেই আছে। তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা এখনো করোনার অভিঘাতের মধ্যে আছে। সাধারণভাবে ওই প্রণোদনাটা জানুয়ারি থেকে ফেরত নেওয়ার কথা ছিল। এর ভিত্তি ছিল জানুয়ারি থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তাই তো? কিন্তু তা তো হলো না। কিন্তু তারপরও আমাদের কাছে থেকে ওই টাকা কাটা শুরু হয়ে গেছে। সেই বিপদ এখনো কাটেনি, সেই সমস্যা এখনো আছে কিন্তু আমার প্রণোদনা কিস্তির টাকা কাটা শুরু হয়ে গেছে। তার মানে সমস্যার সমাধান এখনো হয়নি।

বিষয়টি নিয়ে আমাদের নেতৃবৃন্দ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি আশ^াস দিয়েছেন আগামী ছয় মাস সময় বাড়াবেন। আমরা আশা করছি অচিরেই এগুলো ঠিক হয়ে যাবে। যদি না করা হয় তাহলে আমরা আমাদের সমস্যার মধ্যে থেকে বের হতে পারবো না। আবার মুখথুবড়ে পড়বো।

বিজিএমইএ সভাপতি সম্মিলিত পরিষদের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেছেন- তারা বিজিএমইএ স্বার্থের চেয়ে রাজনৈতিক পদ-পদবির জন্য বেশি মনোযোগ দেন, বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
যাদের কথা আপনি বলছেন বা ইঙ্গিত করেছেন সবাই কিন্তু ব্যবসায়ী। এখনো তারা ব্যবসা করে চলেছেন। তাদের দেখতে হবে ব্যবসায়ী হিসেবে। পেশা, নেশা বা জীবন-যাই বলেন তারা এখনো ব্যবসায়ী। রাজনৈতিক পরিচয়ে তাদের কেউই কিন্তু পরিচিত হননি। তাদের এই জীবনে আর কিছু পাওয়া আছে বলে আমি মনে করি না-যা রাজনীতি থেকে তারা পেতে চাইবেন। স্ব স্ব ক্ষেত্রে তারা সবাই এমনভাবে পরিচিত দেশে। তারা দেশের জন্য একেকজন ভিত্তি।

সম্মান রেখেই বলছি, যার কথা বলছেন তিনি আমার বোর্ডেরই সভাপতি। যিনি এ ধরনের অভিযোগ করেছেন তার প্রয়াত স্বামী এফবিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি, ঢাকা উত্তরের সাবেক মেয়র হিসেবে এ পথটি দেখিয়ে গিয়েছেন এবং যিনি বলছেন তিনিও সদ্য ঘোষিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একটি উইংসের সদস্য হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। তিনি সমালোচনা করলেন আবার নিজেও সে পথে হাঁটলেন। দুভাবে কথা বলা ঠিক না, যা বলেন একভাবে বলুন। যদি দুই ধরনের স্ট্যান্ড নেন তাহলে কথা ও কাজে মিললো না।

এটা চাইতে পারেন, তার মানে ব্যবসা নষ্ট করছেন তাও কিন্তু না। দেশ আপনাকে প্রয়োজন মনে করে বলেই আপনাকে একটি দলের পদপদবিতে স্থান দিয়েছেন। এটা রুবানা আপার ক্ষেত্রে যেমন প্রয়োজ্য, অন্য যে কোন নেতার ক্ষেত্রেও সে রকম প্রযোজ্য।

তাহলে বেলা শেষে আপনাদের ঠিকানা এক জায়গাতেই, আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। তাহলে ব্যবসা-বাণিজ্যের এই রাজনীতিতে কেন ভিন্ন মত, ভিন্ন পথ?
আদর্শ তো একেকজনের একেক রকম থাকতেই পারে। যদি বলি আওয়ামী লীগে যাচ্ছি বা অন্য কোন দলে যাচ্ছি- এটা সবার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তাছাড়া রাজনীতিকে আমরা সেভাবে দেখি না। আমাদের প্রথম পরিচয় আমরা ব্যবসায়ী। অবশ্যই সরকারের সঙ্গে আমাদের এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। সেক্ষেত্রে আমরা একটি নীতি-আদর্শ নিয়ে চলি। আমাদের নেতারা আমাদের যে নীতি-আদর্শের আলোকে আমাদের গাইড করেন, আমরা সেভাবে চলি। লক্ষ্য কিন্তু আমাদের সবারই খাতটিকে বাঁচানো এবং শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। তা না হলে ব্যবসা করতে পারবো না, উনারা পারবেন না। পথটা হয়তো ভিন্ন।

তৈরি পোশাক শিল্প আগামী দিনের জন্য চ্যালেঞ্জ কী?
করোনার কারণে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়ে গেছে। কাজের প্যাটার্ন বদল হয়ে গেছে, নিট কাপড়ের চাহিদা বেড়ে গেছে, মানুষ ঘর থেকে বের কম হচ্ছেন, অনুষ্ঠানে কম যান- সেক্ষেত্রে নিটের এক্সপোর্ট বেড়ে গেছে। আমাদের সেল প্যাটার্নটা চেঞ্চ হয়ে গেছে। আগে বড় বড় আইটেম নিতো, এখন ছোট ছোট আইটেম নিচ্ছে। আমাদের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের আরও উন্নত করতে হবে। তাছাড়া বায়ারদের ডেলিভারি দিতে পারবো না। তাছাড়া ভৌগোলিক কারণেই আমরা আমদানিকারক দেশগুলো থেকে অনেক দূরে বসবাস করি।

রিসার্স এবং অবকাঠামো উন্নতি করতে হবে। রাস্তাঘাট থেকে পোর্ট পর্যন্ত আমরা অনেক পিছিয়ে ছিলাম। উন্নতি হয়েছে, এগুলো আরও উন্নতি করতে হবে। এরগুলোর সুফল আমরা শিগগিরই পাবো বলে আশা করছি। সেক্ষেত্রে সরকারকে আমরা অগ্রিম ধন্যবাদ জানাই।

দেশে-বিদেশে টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। আমাদের দেশেও শুরু হয়েছে। এই টিকা দেওয়ার ফলে বাজারে ইম্প্যাক্ট পড়বে। ক্রয়াদেশ কমে গিয়েছিল তা আবার বাড়বে। উদ্যোক্তা নেতা হিসেবে বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
টিকা দেওয়ার ফলে মানসিকতায় অবশ্যই পরিবর্তন হবে, হয়েছে। অ্যাফেক্টটা তো একটি চেইনে পড়েছে। এর ফলে ফাইন্যান্সিয়াল গ্যাপ তৈরি হয়েছে; মানসিক গ্যাপ হয়ে গেছে। এটা তো টিকা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঠিক হয়ে যাবে না। এই ঘা সেরে উঠতে এক থেকে দেড় বছর সময় লাগবে, কমপক্ষে।

সামনে তো বিজিএমইএ-এর নির্বাচন?
সামনে বিজিএমইএ নির্বাচন। গত কয়েক বছর নির্বাচন হয়নি, যে কোন কারণেই হোক নির্বাচন হয়নি। সবাই মিলে আমরা একটি বোর্ড দিয়ে চালিয়েছি। ৪ এপ্রিল আমাদের নির্বাচন। ভোটাররা মুখিয়ে আছেন। এবারের ভোটটা ইজি হবে না। সবাই চাইবে যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিতে। আমাদের ভোটাররা সবাই খুব স্মার্ট। তারা সবাই চাইবে যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিতে। তারা দেখতে চাইবে যাকে ভোট দিলে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা হবে। যে দলই করুন ব্যবসা জন্য যাকে ভালো ও যোগ্য মনে হবে তাকেই ভোট দেবে। এ জন্য ভোটার চিন্তা করবেন কোন দল কেমন প্রার্থী দিচ্ছেন, ম্যানোফেস্টো কি? কোন প্রার্থী সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে পোশাক খাতে সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আসতে পারবে-সেগুলো চিন্তা করেই আমাদের ভোট দেবেন বলে আমি আশা করি। শুধু বিজিএমইএ-এর নেমকার্ডটা ব্যবহার করবেন এমন লোককে নিশ্চয়ই ভোটাররা ভোট দেবেন না।

আমি ব্যক্তিগতভাবে সম্মিলিত পরিষদের সঙ্গে আছি। আমি আমার পরিষদকে ভোট দেব। আমাদের পরিষদের অনেকজন সাবেক সভাপতি আছেন। তাঁরা বারবারই সরকারের সঙ্গে কাজ করে প্রমাণ করেছেন কীভাব কাজ করতে হয়। আমি চাই আমার পরিষদ জয়যুক্ত হোক। অতীতে যোগ্য প্রার্থীদের মনোনয়ন দিয়েছেন। এবারও যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়ে যোগ্য প্রার্থীকে বিজয়ী করবেন।

 

 
Electronic Paper