ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

প্রোফাইল পিকচার

মোহাম্মদ নেয়ামত উল্লাহ
🕐 ২:০০ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৮, ২০২১

প্রোফাইল পিকচার

স্কুলে আশিকের বেশ কদর। সহপাঠীরা সমীহ করে, হিংসাও করে কেউ কেউ। টিফিনে ভালো-মন্দ নিয়ে এলে তাকে ভাগ দেয়। মন্ত্রমুগ্ধের মতো ওর গল্প শোনে। স্কুলে অনেকেরই দাদু নেই। কারও কারও থাকলেও দাদুর সঙ্গে থাকা হয় না। বৃদ্ধাশ্রম বা গ্রামের বাড়িতেই থাকেন তারা। বছরে এক-দুই দিন কেউ দাদুর দেখা পান, তাও ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে গেলে। কিন্তু আশিক বেশ ভাগ্যবান, দাদুর সঙ্গেই থাকে সে। বাবা-মা-ও। প্রতিদিন স্কুলে টিফিনের ফাঁকে সে দাদুর গল্প করে সহপাঠীদের কাছে। কারও কারও দাদুর সঙ্গে পরিচয়ও আছে। সে সুবাদে ওরাও দাদুকে বেশ চেনে।

আজ আশিকের মন খারাপ। অনেকদিন বাবা-মার কাছে একটি মোবাইল কেনার জন্য বায়না ধরলেও তারা দিচ্ছেন না। ক্লাসের অনেকেরই মোবাইল আছে, এটা বাবাকে বলেছে; তবুও দিচ্ছেন না। টিফিনের ফাঁকে আজ তাই আর গল্পটা জমল না। বাসায় ফিরে দাদুকে কথাটা বলতেই দাদুও চিন্তিত হয়ে উঠলেন! তিনি বললেন, ঠিক আছে যাও আমি তোমার এ ইচ্ছা পূরণ করব। কিন্তু কথা দিতে হবে যেন পড়াশোনার কোনো ক্ষতি না হয়। আশিক প্রতিশ্রুতি দিল। পরদিন দাদুর একদম নতুন মোবাইলটা আশিককে দিয়ে দিলেন! স্কুলে জমল বেশ আড্ডাও।

ক’দিন যেতে না যেতেই আশিক আবারও দাদুর কাছে বায়না ধরল, আমি ফেসবুক খুলব। দাদু তো অবাক, এটা আবার কী! বুঝিয়ে বলার পরে দাদু বললেন, দেখ ভাই, এটা তোমার পড়াশোনার ক্ষতি করবে। এখন নয়, আরও বড় হও। এটা নিয়ে কয়েকদিন ধরে দাদুর সঙ্গে ভালোমতো কথা বলে না আশিক। দাদু বিষয়টি বুঝতে পারলেন। এক দিন দুই দিন করে সময় যেতে লাগল। একসময় দাদুও রাজি হলেন। কিন্তু এবারও একটি শর্ত। তাতেও রাজি হলো আশিক। উত্তেজনায় বেশ আনন্দে দিন কাটতে লাগল আশিকের। দিন মাস বছর পেরিয়ে গেল।

কিছুদিন ধরে দাদুর শরীরটা ভালো যাচ্ছিল না। একদিন আশিককে দাদু বলেন, কাল রাতে তোমার দাদিকে স্বপ্নে দেখলাম। আশিক হাসে, সঙ্গে দাদুও। আশিকের বাবা রুদ্র ও মা সুবর্ণা দুইজনই চাকরি করেন। সারাদিন ব্যস্ত থাকেন। রাতেই শুধু আশিকের সঙ্গে তাদের কথা হয়।

একদিন রুদ্র ফেসবুকে একটি প্রোফাইল পিকচার দেখে বেশ অবাক হন। দারুণ সব ছেলেমানুষি স্ট্যাটাস। ভাবছিল এটা নিয়ে বাসায় আলাপ করবেন, কিন্তু সময় হয়ে ওঠে না। ক’দিন ধরে অফিসেও বেশ চাপ। বিষয়টা স্ত্রীর সঙ্গেও শেয়ার করেন তিনি। আজ শুক্রবার ছুটির দিন। রুদ্র এদিন বাবাকে সময় দেন। কিন্তু সকালে উঠেই বাবাকে না পেয়ে আশিকের কাছে জানতে চান, দাদু কই? আশিক বলে, দাদু কবরস্থানে গেছেন দাদির কবর দেখার জন্য।

সকালের নাশতার সময় পেরিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু বাবার খবর নেই দেখে বেশ কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি ধরছেন না। এমনটা আগে কখনই হয়নি। এর মধ্যে একবার কেটেও দিয়েছেন!
সবাই নাশতা করার সময় রুদ্রের মোবাইলে একটা ফোন এলো। অপরিচিত কেউ একজন। হাত থেকে খাবারটি পড়ে গেল। দাঁড়িয়ে গেলেন রুদ্র। চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগল। আশিকের দাদু মারা গেলেন আজ দুই দিন হলো। যেদিন মারা গেলেন মোবাইলটা বাসায়ই ছিল।

রাতে বিষন্নতা কাটাতে ফেসবুকে ঢুঁ মারছিলেন রুদ্র। এ সময় একটি ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এলো। আগেও তিনি এ প্রোফাইল পিকচারের অ্যাকাউন্টটি দেখেছেন। ঘেমে গিয়ে তিনি স্ত্রীকে তা দেখালেন। শ্বশুরের ছবিটা দেখে তিনি হকচকিয়ে গেলেন। রিকয়েস্ট গ্রহণ করার পর সঙ্গে সঙ্গে একটি মেসেজ, সরি। ঠিক এ সময় পাশের ঘর থেকে আশিকের কান্নার শব্দ ভেসে এলো। ক্রমেই তা বাড়তে লাগল।

সমন্বয়ক, এগারজন
নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটি

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper