ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

রাজনীতি হোক জাতির কল্যাণে

মাইন উদ্দীন হাসান
🕐 ২:৫৫ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৬, ২০২১

রাজনীতি হোক জাতির কল্যাণে

রাজনীতি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের মাধ্যম, তাই রাজনীতির প্রতি মানুষের আগ্রহ সৃষ্টির শুরু থেকেই। একটি দেশকে পরিবর্তন করতে হলে প্রয়োজন সুন্দর রাজনৈতিক পরিবেশ। কারণ প্রত্যেক মানুষের স্বপ্ন এদেশকে সুস্থ আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে দেখার। কিন্তু যেখান থেকে একটা দেশ সুস্থ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হয়, সেই রাজনৈতিক পরিবেশের প্রতিটি রন্ধ্রে বিশ্বাসঘাতকে ভরপুর। যারা জাতির বিশ্বাস নিয়ে দিনের পর দিন ছিনিমিনি খেলছে। রাজনীতি হতে হবে দেশের কল্যাণের জন্য। যেখান থেকে উপকৃত হবে পুরো জাতি। কিন্তু বর্তমান রাজনীতিবিদরা দেশ এবং জাতির কল্যাণের চেয়ে ক্ষতিই বেশি করছে। তারা রাজনীতিকে বানিয়েছে ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের পথ।

ব্রিটিশরা ২০০ বছরে যা করতে পারেনি, এদেশের স্বার্থান্বেষী, বিশ্বাসঘাতক ও প্রতারক রাজনীতিবিদরা ৪৯ বছরেই তা করে ফেলেছে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রকৃতি হতে হবে উদারনৈতিক, সংকীর্ণমনা নয়। তবে এমন রাজনীতিবিদ সমাজে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এখনকার রাজনীতিকে সবাই মনে করে ক্ষমতা এবং টাকার ময়দান। রাজনীতিতে প্রবেশ করতে পারলেই ভুরি ভুরি টাকার মালিক হবে, পাওয়ার নিয়ে চলাফেরা করবে। এমন মানসিকতাসম্পন্ন রাজনীতিবিদদের অভাব বর্তমান সমাজে নেই। যে রাজনীতিকে টাকা এবং ক্ষমতার চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়, সেই রাজনীতি কখনো দেশ এবং জাতির জন্য ক্ষতি ছাড়া কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। এমন রাজনীতি হয় নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্য এবং রাজনীতিবিদরা প্রতিনিয়ত এমনটাই করছে। রাজনীতি হলো রাজার নীতি। যেটা এক বিশেষ চেতনা বা আদর্শ। তবে সেই আদর্শ ক’জন রাজনীতিবিদ লালন করতে পারছে? এখনকার রাজনীতিবিদরা সুযোগসন্ধানী। কখন দুর্নীতি করে টাকার পাহাড় গড়ে তুলবে সর্বদা সেটার অপেক্ষায় থাকে। এমনকি অনেক রাজনীতিবিদ দেশের অর্থ পাচারের মতো ঘৃণ্য অপরাধও করে থাকে। যেখানে দেশের মানুষ এখনো চিকিৎসার অভাবে মারা যায়, যেখানে বাসস্থানের অভাবে ফুটপাতে মানুষ ঘুমায়, যেখানে অনাহারে মানুষের দিনাতিপাত করতে দেখা যায়, সেই দেশ থেকে রাজনীতিবিদরা করছে অর্থ পাচার। কিন্তু সেই অর্থ ব্যয় হওয়ার কথা ছিল দেশ ও জাতির কল্যাণে।

রাজনীতি নিয়ে এরিস্টটলের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল- রাজনৈতিক হওয়ার অর্থ হলো সবকিছুই কথা ও যুক্তির মাধ্যমে নির্ধারিত হবে। সহিংসতার মাধ্যমে নয়। কিন্তু বর্তমান রাজনীতির সঙ্গে সহিংসতা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। রাজনৈতিক নেতারা রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় জেতার জন্য প্রায়শই বিভিন্ন অনৈতিক ও অমানবিক পথ অবলম্বন করে এবং এতে তাদের আপত্তি বা সংকোচ হয় না। মানুষ হত্যা থেকে শুরু করে এমন কোনো অনৈতিক কাজ নেই তারা করে না। তরুণ প্রজন্মের বর্তমান রাজনীতির প্রতি একটা অনীহা কাজ করে। বেশিরভাগ তরুণদের ফেসবুক প্রোফাইলে পলিটিক্যাল ভিউজে দেখা যায় ‘আই হেইট পলিটিক্স’। যেখানে আজকের তরুণরা নেতৃত্ব দানের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা, সেখানে তরুণদের মাঝে তৈরি হয়েছে রাজনীতির প্রতি একধরনের অনীহা। তার কারণ কী? কারণ দেশের রাজনীতির প্রতিটি ক্ষেত্র দুর্নীতি এবং সহিংসতা আচ্ছাদিত করে রেখেছে। যা তাদের মনে ভীতির সঞ্চার করছে। রাজনীতিতে থাকে সেবা। যেটার মধ্য দিয়ে উপকৃত হবে জাতি। তবে সেবার কথা রাজনীতিবিদদের মাথায় থাকে যখন সাংগঠনিক নির্বাচনে জয়ী হওয়া লাগে তখন। এরপর সেবা নামের শব্দ তাদের মাথায় আর থাকে না। সেবার পরিবর্তে সাধারণ মানুষের ওপর পেশিশক্তি খাটিয়ে করা হয় অন্যায়, অত্যাচার, জুলুম। রাজনীতি হলো বিলিয়ে দেওয়ার জায়গা। কিন্তু ক’জন রাজনীতিবিদ দেশ ও জাতির জন্য ত্যাগ স্বীকার করছে? রাজনীতিকে ত্যাগ তিতিক্ষার জায়গায় বানানো হয়েছে ব্যবসার জায়গা। যেটা করে বাড়ি, গাড়ির মালিক হওয়া যায় এবং তারা সেসব অর্জনের জন্যেই রাজনীতিতে যুক্ত হচ্ছে। আদর্শভিত্তিক রাজনীতি, সুশাসন ও দেশের উন্নয়ন হাত ধরাধরি করে চলে। আদর্শচ্যুত রাজনীতি সমাজ বা রাষ্ট্রকে কিছুই দিতে পারে না। তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি অর্থ ও পেশিশক্তির প্রভাবে আদর্শ, জনকল্যাণ, আত্মত্যাগ ও নৈতিকতা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।

মাইন উদ্দীন হাসান : শিক্ষার্থী, মার্কেটিং বিভাগ, ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
[email protected]

 
Electronic Paper