চড়ুইভাতির আয়োজন নেই
খন্দকার নাঈমা আক্তার নুন
🕐 ২:০৫ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৪, ২০২১
জানুয়ারি মাস প্রায় শেষের দিকে। নতুন বছরের শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস মুখরিত থাকে নবীনদের পদচারণায়। ভর্তিযুদ্ধে জয়ী হয়ে উচ্চতর বিদ্যাপীঠে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীরা। এরই সঙ্গে যোগ হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আরেকটি নতুন ব্যাচ। নবীনরা ক্যাম্পাস নিয়ে কল্পনার জাল বুনে, স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিনটি কেমন হবে? নবীন বরণ অনুষ্ঠানটি কেমন হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্ধুবান্ধব, শিক্ষকদের পাশাপাশি আরেকটি প্রাপ্তি হচ্ছে সিনিয়র ভাই-বোনেরা। যেকোনো বিপদে পাশে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়রা। যাদেরকে দেখে খুব ভয় লাগত, সময়ের ব্যবধানে তারাই সবচেয়ে কাছের হয়ে ওঠে। স্নেহ, ভালোবাসায় আগলে রাখে। বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্যান্য উৎসবের পাশাপাশি আরেকটি জনপ্রিয় উৎসব হচ্ছে চড়ুইভাতি।
নতুনদের আগমনে ব্যস্ত সময় পার করে ইমিডিয়েট সিনিয়রা। জুনিয়রদের কীভাবে বরণ করা যায় তা নিয়ে চলতে থাকে নানা পরিকল্পনা। সিনিয়রা নিজেদের ক্লাস থেকে চাঁদা তুলে আয়োজন করে চড়ুইভাতি উৎসবের। আমার এখনো মনে পড়ে, আমাদের চড়ুইভাতির কথা। নতুন পরিবেশ, নতুন মানুষ আর মনে ভয় কাজ করেছিল। হঠাৎ করে সিনিয়রা আমাদের ক্লাসে এসে চড়ুইভাতির কথা জানায়। আমাদের সবাইকে সকাল ৯টার মধ্যে কাঁঠালতলায় থাকতে বলে। আমরা সবাই পরিকল্পনা শুরু করে দিই, কি করব? কোন পোশাক পড়ব? কয়টায় আসব ইত্যাদি।
অবশেষে চড়ুইভাতির দিনটিতে গিয়ে আমরা হাজির হই। আমরা গিয়ে দেখি সিনিয়র ভাইয়া আপুরা আমাদের জন্য রান্নার আয়োজন শুরু করে দিয়েছে। তারা এত উৎসাহ নিয়ে কাজ করছিল। আমরাও তাদের সাহায্য করার চেষ্টা করি। নবীনরা যখন বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে স্বপ্ন দেখে তেমনি সিনিয়রা তাদের বরণে যাতে ঘাটতি না থাকে সেদিকটা দেখে। তবে, ২০২০-২১ সালটা ব্যতিক্রম। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩তম ব্যাচ হলেও আমাদের ১৪তম ব্যাচদের নিয়ে চড়ুইভাতির আয়োজন করতে পারিনি। আর ১৪তম ব্যাচের কথা ছিল ১৫তম ব্যাচকে বরণ করা, তাদের নিয়ে চড়ুইভাতির আয়োজন করা। কিন্তু মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে সব আয়োজনই ব্যর্থ হয়ে গেল। মাঘের শীতের সকালে, উত্তরের ঠাণ্ডা হাওয়াতে ইটের চুলা বানিয়ে রান্না করা আর হলো না। সেই হৈচৈ, আড্ডা, নাচ, গান, সবার রান্না করা খাবারে চড়ুইভাতি করা আর হলো না। নেই উৎসবের কোনো আমেজ, নেই চড়ুইভাতির কোনো ব্যস্ততা।