ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

মহামারীতে দ্বিগুণ দারিদ্র্য

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:২১ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২৪, ২০২১

মহামারীতে দ্বিগুণ দারিদ্র্য

করোনাভাইরাস মহামারীর অর্থনৈতিক প্রতিঘাতে দুই বছরের মধ্যে বাংলাদেশের দারিদ্র্যের হার দ্বিগুণ বেড়ে ৪২ শতাংশ হয়েছে। যা আগে ছিল ২৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। অনানুষ্ঠানিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রবাসী আয় এসেছে। ৮২ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ পরিবার বলেছে, দেশের বাইরে থেকে আসা প্রবাসী আয় কমেছে। দেশের ৮ বিভাগের ৬৪টি জেলার ৫ হাজার ৫৭৭টি পরিবারের ওপর গবেষণায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল শনিবার ভার্চুয়াল আলোচনায় সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) এ জরিপ তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৬ সালের তথ্য অনুযায়ী, দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ২৪ দশামিক ৩০ শতাংশ। ২০১৮ সালে জিইডি সানেমের গবেষণায় দেখা গেছে, দারিদ্র্যের হার ২১ দশমিক ৬০ শতাংশে নেমেছিল। কিন্তু সানেমের ২০২০ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরের গবেষণা বলছে, দারিদ্রের হার বেড়ে ৪২ শতাংশ হয়েছে।

সেলিম রায়হান বলেন, জরিপ পরিচালনার খরচ আছে। তবে তহবিল পাওয়া না গেলেও সানেম নিজস্ব অর্থায়নে জরিপটি পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়। তার ভাষ্যমতে, এটা না হলে আমরা একটি পরিপ্রেক্ষিত হারিয়ে ফেলতাম। সেই তাড়না থেকেই এই জরিপ। দারিদ্র্য, অসমতা ও কর্মসংস্থান এ তিনটি ক্ষেত্রে কোভিডের প্রভাব নিরূপণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৬ সালের তথ্য অনুযায়ী, দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ২৪ দশামিক ৩০ শতাংশ। ২০১৮ সালে জিইডি সানেমের গবেষণায় দেখা গেছে, দারিদ্র্যের হার ২১ দশমিক ৬০ শতাংশে নেমেছিল। কিন্তু সানেমের ২০২০ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরের গবেষণা বলছে, দারিদ্র্যের হার বেড়ে ৪২ শতাংশ হয়েছে।

এ দারিদ্র্যের হার শহরের তুলনায় গ্রামে বেশি বেড়েছে জানিয়ে সেলিম রায়হান বলেন, ২০১৬ সালের বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, গ্রামে দারিদ্র্যের হার ছিল ২৬ দশমিক ৪০ শতাংশ। ২০১৮ সালের সানেমের গবেষণায় এই হার নামে ২৪ দশমিক পৃষ্ঠা ১১ কলাম ৪
মহামারীতে দ্বিগুণ দারিদ্র্য ৫০ শতাংশে। কিন্তু সানেমের ২০২০ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরের গবেষণা বলছে, বাংলাদেশের গ্রামে দারিদ্র্যের হার বেড়ে হয়েছে ৪৫ দশমিক ৩০ শতাংশ। একইভাবে শহরে দারিদ্র্যের হার ২০১৬ সালে ১৮ দশমিক ১৯ শতাংশ থেকে বেড়ে যথাক্রমে ২০১৮ সালে ১৬ দশমিক ৩০ শতাংশ ও ২০২০ সালে তা বেড়ে ৩৫ দশমিক ৪০ শতাংশ হয়েছে বলে জানান তিনি।
সানেমের নির্বাহী পরিচালক জানান, বাংলাদেশের অতি দারিদ্রের হার ২০১৮ সালের ৯ দশমিক ৪০ শতাংশ থেকে ২০২০ সালে বেড়ে হয়েছে ২৮ দশমিক ৫০ শতাংশ। রংপুর, রাজশাহী এবং ময়মনসিংহ বিভাগে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে দারিদ্র্যের হার। অর্থাৎ গরিব হয়েছে আরো গরিব, ধনী হয়েছে আরও ধনী।

দারিদ্র্যের হারের সঙ্গে আয় বৈষম্যও বেড়েছে জানিয়ে সেলিম রায়হান বলেন, মহামারী শুরুর আগে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশের দরিদ্রতম ২০ শতাংশ মানুষ দেশের মোট আয়ের ৭ দশমিক ৭২ শতাংশ পেত। আর দেশের মোট আয়ের ১৫ দশমিক ৮২ শতাংশ আয় করত দেশের ধনী ৫ শতাংশ মানুষ। কিন্তু করোনার প্রভাবে সেই অবস্থা পাল্টেছে। এখন দেশের মোট আয়ের ১৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ ধনী ৫ শতাংশের দখলে। দেশের মোট আয়ের ৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ দরিদ্রতম ২০ শতাংশের দখলে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে অধ্যাপক মাহাবুবুল মোকাদ্দেম আকাশ বলেন, এ দারিদ্র্যের হার যাতে দীর্ঘমেয়াদি না হয়, সেদিকে সরকারের খেয়াল রাখা দরকার। স্কুলগুলো আবার শুরু করতে হবে। চিকিৎসা খাতে সাবসিডি বাড়ানো দরকার। যারা চাকরি হারিয়েছেন, তাদের চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে।

সানেম ২০২০ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে সারা দেশে ৮ বিভাগের ৬৪টি জেলার ৫ হাজার ৫৭৭টি পরিবারের ওপর গবেষণাটি চালায়। নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত এই গবেষণায় নেতৃত্ব দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা। এ গবেষণার সময়কাল ২০২০ সালের মার্চ থেকে নভেম্বর। অর্থাৎ করোনাভাইরাস মহামারীর আগের অবস্থার সাথে পরের অবস্থা তুলনা করা হয়েছে। এ গবেষণায় ফোনের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

 
Electronic Paper