ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

নুসাই’র বন্ধু মুনতাহা

রুমানা নাওয়ার
🕐 ১:০২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৩, ২০২১

নুসাই’র বন্ধু মুনতাহা

সারারাত ঘুমাল না মেয়েটা। আগামীকাল মুনতাহা আসবে এ খুশিতে বাগবাগ নুসাই। মাকে বলল, আমার বন্ধু আসবে কালকে। একটু তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ডেকে দিও প্লিজ। উফ্ মা আমার কী যে খুশি লাগছে। কতদিন পরে ওকে দেখব। আজ আট নয় মাস হতে চলল আমাদের দেখা নেই। স্কুলে যাওয়া নেই। কী যে ভালো লাগছে। মুনতাহা আমাদের বাসায় আসবে।

বলতে বলতে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরল নুসাই। মেয়ের উচ্ছ্বাস উপভোগ করল লুবনা। কী এক আনন্দ জোয়ারে ভাসছে মেয়েটা। কতদিন হলো কচি কচি মুখগুলো একজন আরেকজনকে দেখে না, পাশাপাশি বসে দুষ্টুমি খুনসুটিতে মাতে না। একসঙ্গে গাদাগাদি করে গাড়িতে বসে স্কুলে যাওয়া হয় না ওদের অনেকদিন। লুবনা মেয়ের এ উচ্ছ্বাস আরও বাড়িয়ে দিতে জিজ্ঞেস করল, মুনতাহার জন্য কী কী খাবার প্রস্তুত করব বলো মা। ওর কী কী খেতে পছন্দ?

নুসাই’র উচ্ছ্বাস কয়েকগুণ বেড়ে গেল যেন- না আম্মু, ও তো ওর কোনো আত্মীয়ের বাসায় দাওয়াত খেতে আসবে আমাদের এদিকে। ওখান থেকে বিকেলে আসবে আমাদের বাসায়।

লুবনা মাথা নাড়িয়ে বলল, ও তাই। আচ্ছা ঠিক আছে। তাহলে স্ন্যাকস রেডি করব। তোমাদের পছন্দমতো।
সকাল হতে না হতেই নুসাই ঘুম থেকে উঠে পড়ল। নয়টা দশটার আগে যাকে ডেকে তোলা যায় না। সে কিনা সকাল সাতটায় উঠল। লুবনা বিস্মিত হলো খানিক। অবশ্য করোনাকালে স্কুল বন্ধ হওয়াতে এত দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা সম্ভব হচ্ছে। তা না হলে তো ভোর পাঁচটায় উঠে যেতে হয়। উঠেই দাঁত ব্রাশ, মুখ ধোয়া, নাস্তা খাওয়া, ড্রেসআপ- এসব করতে করতে ছয়টা বেজে যায়। ৬টা ১৫ মিনিটে গাড়ি এসে হাজির।

লুবনা অথবা কায়েস মেয়েকে তুলে দিয়ে আসে। তিন বছর বয়স থেকে নুসাই’র এ যুদ্ধযাত্রা শুরু। সকালে চোখ খুলতেই পারত না সে। লুবনা ঘুমের ভিতরে মেয়েকে নাস্তা খাওয়ানো, ইউনিফর্ম পরানো সব কাজই সারত। তারপর কায়েস কোলে করে সিঁড়ি দিয়ে নামিয়ে গাড়িতে চড়াত। কী কষ্টটা না করেছে নুসাই সেই এতটুকু বয়স থেকে। প্রথম প্রথম খুবই মায়া লাগত লুবনার। এত ভোরে ঘুম থেকে উঠে স্কুলে যাওয়া।

বুকের ভিতর চিনচিনে ব্যথা অনুভব করত। কিন্তু দিন যতই যেতে লাগল নুসাই আস্তে ধীরে মানিয়ে গেল সময়ের সঙ্গে। সেই তিন বছরের ছোট্ট পুতুল মেয়েটা এখন চতুর্থ শ্রেণিতে। অনেক বড় বন্ধু সার্কেল তার। মুনতাহা তার তেমনই একজন ভালো বন্ধু। নুসাই বলে, আমার বেস্ট্র ফ্রেন্ড মুনতাহা ।

নুসাই’র মুনতাহার জন্য অপেক্ষা- সারাঘরে পায়চারি। তারপর একদম বিকেলের শেষ সময়টায় এলো নুসাই’র জন্য খুশির বার্তা হয়ে মুনতাহা। দুই বন্ধুতে একসঙ্গে হওয়ায় আনন্দ জড়াজড়ি করল। তারপর শুরু হলো খোশগল্প। মুনতাহা বলে, তুই তো অনেক লম্বা হয়ে গেছিস নুসাই।
হিহিহি করতে নুসাই’র উত্তর- তুইও কিন্তু লম্বা হয়ে গেছিস।
আমাদের কতদিন পর দেখা না রে।
হুম, অনেক অনেক দিন।

লুবনা নুসাই’র রুমে উঁকি দিতেই বলল- আম্মু, আমরা কেরাম নিয়ে ছাদে যাই। ওখানে খেলব?
উত্তরের অপেক্ষায় তাকিয়ে রইল মায়ের মুখপানে। লুবনা সম্মতিসূচক মাথা নাড়ল।
খুশিতে লাফিয়ে উঠল দুজনেই। ছাদে উঠে অনেক সময় পর্যন্ত খেলল। প্রজাপতির পাখনা মেলা দুই বন্ধুতে। মুনতাহা ভাইকে নিয়ে এসেছে সঙ্গে। ওর আম্মুকে কেন নিয়ে এলো না লুবনা জানতে চাইল কয়েকবার। মুনতাহার উত্তর- আবার এলে আম্মুসহ আসব আন্টি।
লুবনা ছাদে উঠে দেখল কেরাম খেলা বাদ দিয়ে দু’বন্ধু মিলে প্রজাপতির মতো নাচছে হাসছে খেলছে। এ এক অন্যরকম আনন্দ আয়োজন।

এ নাচ এ হাসি এ গল্পের ফোয়ারা। উচ্ছল কলকল দুটো তিনটি পাখি। উড়ছে যেন পাখনা মেলে মেলে।
নাচের অর্ধেক এ নাচল তো বাকি অর্ধেক ও। এভাবে করতে করতে বিকেলটা ফুরিয়ে গেল। লুবনা দু’ বন্ধুর খুশির মুহূর্তগুলো ছবিতে ধারণ করে রাখল। যেন তাদের একা হয়ে যাওয়ার সময়টায় মুহূর্তগুলো দেখে আনন্দ পায়। সুখে থাকে আমাদের প্রজাপতি মেয়েগুলো।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper