প্রশাসনের বাধা উপেক্ষা করেই ক্যাম্পাসে অবৈধ বসবাস
মুজাহিদ, জবি প্রতিনিধি
🕐 ৪:৫৩ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২২, ২০২১
দীর্ঘদিন ধরেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নাকের ডগায় অবৈধ ভাবে বসতি গড়ে তুলেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ফলে বেদখলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন ও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অংশ। এখন এসব অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে একাডেমিক ভবনের জায়গা উদ্ধার করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে পরপর দুই দফায় নোটিশ দেওয়া হলেও ক্যাম্পাসে অবৈধ বসতি ছাড়ার নামগন্ধ নেই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। গত বছর ২০ সেপ্টেম্বর একাডেমিক ভবনের দখলকৃত জায়গা ছাড়তে ৭ দিনের সময় দিয়ে নোটিশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরে তা ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করা হলেও প্রশাসনের নির্দেশ তোয়াক্কা না করে বসবাস করছেন অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী।
সর্বশেষ ১৪ জানুয়ারি পুনরায় নোটিশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। নোটিশটি বুধবার (২০ জানুয়ারি) রাতে জবির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। নোটিশে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ওহিদুজ্জামানের স্বাক্ষরে বলা হয়েছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো একাডেমিক ভবনে কেউ রাত্রীযাপন বা বসবাস করতে পারবে না'। তবে একাডেমিক ভবন ছাড়তে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বারবার পৃথক নোটিশ দেয়া হলেও ভবন ছাড়তে এখনও গড়িমসি করছেন তারা।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, রসায়ন বিভাগের ক্লাসরুমের পাশে সিঁড়ির নিচে বসতি গড়েছেন সামসুল আলম নামে ইতিহাস বিভাগের আরেক কর্মকর্তা। একই বিভাগের পাশে সিঁড়ি ও ক্লাসরুমের মাঝখানে নিজস্ব ঘর বানিয়েছেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতরের সেকশন অফিসার আবু ইমরান, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সেকশন অফিসার জাবেদ আলী খান ও বাংলা বিভাগের সেকশন অফিসার আক্তার হোসেন। অর্থনীতি বিভাগের ক্লাসরুমের সামনে সিঁড়ির নিচে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন ভূগোল বিভাগের সানবীব আহমেদ বাচ্চু। ভাষা শহীদ রফিক ভবনের পেছনে দেয়াল ঘেষে ক্যাম্পাসের ড্রেন বন্ধ করে বসবাস করছেন ভিসি দফতরের সহকারী রেজিস্ট্রার মো. জামাল হোসেন।
এদিকে কর্মকর্তাদের পাশাপাশি কর্মচারীরাও ঘাঁটি গড়েছেন একাডেমিক ভবনগুলোতে। উদ্ভিদবিদ্যা ও প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সিঁড়ির নিচে থাকেন আব্দুল খালেক, মো. টিপু, মো. আজিজ নামের তিনজন কর্মচারী। ভূগোল বিভাগের সিঁড়ির নিচে থাকেন বাসচালক মনির। পরিসংখ্যান বিভাগের সিঁড়ির নিচে থাকেন ভিন্ন ভিন্ন বিভাগের কর্মচারী হারুনুর রশিদ, রফিকুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন ও মো. ফারুক। বজলুর রহমান ভবনে থাকেন কেয়ারটেকার ইসমাইল হোসেন, অ্যাম্বুলেন্সচালক তাজুল ইসলাম ও বাসচালক খোকন। একাডেমিক ভবনে অবৈধভাবে গড়ে তোলা এসব বসতির জন্য ক্লাসরুমের পরিবেশ নষ্ট হয় বলে মনে করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন সময় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়তে হয়েছে। এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের খালি গায়ে, লুঙ্গি পড়ে, দাঁত ব্রাশ করতে করতে একাডেমিক ভবনে ঘোরাফেরা বিব্রতকর বলে মনে করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে অবৈধভাবে বসবাস করা ভিসি দফতরের সহকারী রেজিস্ট্রার মো. জামাল হোসেন বলেন, ‘নোটিশ পেয়েছি, আমি বাসা খুঁজছি, দ্রুত জায়গা ছেড়ে দিবো।’
এ বিষয়ে কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসেন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে তারা দীর্ঘদিন ধরে রয়ে গেছে যেহেতু তাদের থাকার জায়গা নেই। আমাদের দায়বদ্ধতা ছিলো, আমরা যদি সকল কর্মকর্তাদের থাকার ব্যবস্থা করতে পারতাম তাহলেতো ভালোই হতো। কিছু পরিবার গরীব আছে, তবে কয়েকজনের বেতন ভালো তারা অন্তত ভিতরে না থাকলেও পারে। এতদিন তারা প্রশাসনকে হয়তো বুঝিয়ে ভিতের ছিলো, কিন্ত প্রশাসন এখন মনে করছে বিষয়টা ভালো হচ্ছে না, তাদের এখন জায়গা ছেড়ে দিতেই হবে।’
কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল জলিল বলেন, ‘যারা ক্যাম্পাসে থাকছে প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই আছে, এখন প্রশাসন যেহেতু তাদের চলে যেতে বলছে, তাদের জায়গা ছাড়তেই হবে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান খোলা কাগজকে বলেন, ‘একাডেমিক ভবন ছাড়তে আগেও তাদেরকে নোটিশ দেয়া হয়েছে। সে সময় অনেকেই কিছুদিন সময় চেয়ে আবেদন করেছিলো। তাদের আবেদন বিবেচনায় আমরা সময় বাড়িয়েছিলাম। তারা জায়গা না ছাড়লে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’