ব্রহ্মপুত্র নদে নাব্য সংকট নৌ-চলাচল বিঘ্নিত
আমিনুল হক, জলছড়ি (গাইবান্ধা)
🕐 ৪:০৮ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২২, ২০২১
নদীর বুকে জেগে ওঠা চরের কারণে নাব্যতা সংকটে পড়েছে এককালের খরস্রোতা ব্রহ্মপুত্রে। চরগুলো প্রাণহীন মৃত তিমির মতো পড়ে আছে নদীর বুকের বিভিন্ন স্থানে। ফলে মাইলের পর মাইল জুড়ে জেগে উঠেছে অসংখ্য বালুচর। নদের বিভিন্ন নৌ-রুটগুলোতে জমেছে বড় ধরনের বালুর স্তর। এ কারণে চরাঞ্চলের প্রায় ৩০ হাজার নারী-পুরুষ এখন পায়ে হেঁটেই নদী পারাপার করছে। পাশাপাশি এসব পলিযুক্ত চরে কৃষকরা বিভিন্ন ফসলেরও চাষ শুরু করেছে।
ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের বালাসী ঘাট এলাকার প্রবেশ মুখে ব্রহ্মপুত্র নদের কালাসোনা টার্নিং পয়েন্ট ও একই উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের গলনা এবং কামারপাড়া এলাকায় নৌ চ্যানেল ভরাট হয়ে পড়েছে। এ কারণে এ দুটি ঘাট থেকে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকা চলাচলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানান নৌচালকরা।
দীর্ঘদিনেও বালাসী ফেরিঘাট ও তিস্তামুখঘাট এলাকায় ড্রেজিং না করার ফলে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান ভুক্তভোগীরা। এ নদের পানি হ্রাস পাওয়ায় ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার প্রায় ২০টি নৌঘাট ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্ব চ্যানেল জিগাবাড়ি থেকে মইন্যা এবং পশ্চিম চ্যানেল কামারজানি নৌবন্দর থেকে জামিরা পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ৫০ কিলোমিটার এলাকায় ছোট-বড় দুই শতাধিক চর ও ডুবোচর জেগে উঠেছে। এতে ফুলছড়ি উপজেলার অভ্যন্তরীণ নৌ-রুটগুলোও বন্ধ হয়েছে।
বর্তমানে ফুলছড়ি-বালাসী, তিস্তামুখঘাট-বাহাদুরাবাদঘাট, গজারিয়া-গলনা, সিংড়িয়া-ঝানঝাইর, গুনভরি-কালাসোনা, গজারিয়া-ফুলছড়ি এবং আন্তঃজেলা নৌ-রুট ফুলছড়িঘাট-গুঠাইল, সৈয়দপুর-রাজিবপুর, তিস্তামুখঘাট-আমতলী, এবং তিস্তামুখঘাট- সারিয়াকান্দি নৌরুটে কোনো নৌকা চলাচল করছে না। এর মধ্যে কয়েকটি নৌপথে এখন নৌযান চলাচল পুরোপুরিই বন্ধ রয়েছে।
নৌ-চলাচল বন্ধ হওয়ার বিষয়ে তিস্তামুখ নৌঘাটের ইজারাদার শাহজাহান মিয়া বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদে নাব্যতা সংকটের কারণে তিস্তামুখ-বালাসীঘাট থেকে রৌমারী, চিলমারী, সানন্দাবাড়ী, সারিয়াকান্দি, সাঘাটাসহ প্রায় ২০টি নৌরুট ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। নৌকা চলাচল বন্ধ মানে আমাদের লোকসান। যেসব নৌরুট চালু রয়েছে, সেগুলো দিয়ে নৌ-চলাচল করতে সময় লাগছে বেশি।
উপজেলার তিস্তামুখ ঘাটের নৌকার মাঝি কমল মিয়া জানান, বর্ষা মৌসুমে এ ঘাট থেকে বাহাদুরাবাদ ঘাটে নৌকা নিয়ে যেতে ২ ঘণ্টা সময় লাগত, কিন্তু চর জেগে ওঠায় এখন সময় লাগছে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা। এছাড়াও কিছু কিছু নৌরুটে নৌকা চলাচল করলেও ডুবোচরে আটকে যাচ্ছে এবং সময় লাগছে বেশি।
ফজলুপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু হানিফ প্রামাণিক জানান, বর্ষা মৌসুম শেষ হতে না হতেই ব্রহ্মপুত্র নদের বিভিন্ন স্থানে জেগে উঠেছে ধুধু বালুচর। ফলে বালাসী ও তিস্তামুখ নৌঘাট থেকে বিভিন্ন জায়গায় নৌকা চলাচলে বিঘ্নিত হচ্ছে।
ফুলছড়ি ইউএনও আবু রায়হান দোলন জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর অংশ হিসেবে বালাসীঘাটে টার্মিনালের কাজ প্রায় শেষের দিকে। টার্মিনালের নির্মাণকাজ শেষ হলে নদী ড্রেজিং-এর কাজ শুরু হবে। এতে এ অঞ্চলের মানুষ খুব অল্প সময়ে ঢাকায় যাতায়াত করতে পারবে।
গাইবান্ধা পাউবোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান জানান, কুড়িগ্রাম থেকে গোয়ালন্দঘাট পর্যন্ত দুটি প্যানেলে বিভক্ত করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্টাডি চলছে ড্রেজিং করার জন্য। বালাসী থেকে বাহাদুরাবাদঘাট পর্যন্ত ফেরি চলাচলের জন্য ইতোমধ্যে বিআইডাব্লউটিএ একটি মেগাপ্রকল্প গ্রহণ করেছে। এ বছরেই ড্রেজিংয়ের কাজ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।