বিজয়ী কাউন্সিলরের মৃত্যুর খবরে হামলা ভাঙচুর ও লুটপাট
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
🕐 ৪:২৫ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৭, ২০২১
সিরাজগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে বিজয়ী তরিকুল ইসলাম খানের মৃত্যুর খবরে বিক্ষুব্ধ হামলা চালিয়ে বাড়ী-ঘর ভাঙচুর লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছেন। কাউন্সিলর হত্যাকারীদের বিচারের দাবীতে রোববার দুপুরে নতুন ভাঙ্গাবাড়ী এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শাহেদনগর ব্যাপারীপাড়া এলাকায় প্রবেশ করে প্রায় শতাধিক বাড়ীঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, লুটপাট ও কয়েকটি বাড়ীঘর ও দোকানে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
হাসপাতাল থেকে বিজয়ী কাউন্সিলর তরিকুল ইসলাম খানের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর শনিবার রাত থেকে রোববার দুপুর পর্যন্ত পৃথক পৃথক এ ঘটনাগুলো ঘটে। এ ঘটনায় এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে নিহত তরিকুলের বাড়ী ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ সময় তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দিয়েছেন রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত বিভাগীয় পুলিশ কমিশনার টি এম মুজাহিদুল ইসলাম।
পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার (১৬ জানুয়ারী) রাতে শহরের ব্যাপারীপাড়ার আব্দুস সালামের বাসভবনে হামলা চালানো হয়। এ সময় বাসার গ্যারেজে থাকা একটি প্রাইভেটকার, দুটি পিকআপ ও বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়া আরও দুটি বাড়িতে হামলা চালানো হয়।
কাউন্সিলর হত্যাকারীদের বিচারের দাবীতে রোববার দুপুরে নতুন ভাঙ্গাবাড়ী এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শাহেদনগর ব্যাপারীপাড়া এলাকায় প্রবেশ করে আওয়ামীলীগ নেতা শাহাদত হোসেন বুদ্ধিনের বাড়িসহ গ্রামবাসির উপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে প্রায় শতাধিক বাড়ীঘর ভাঙচুর, লুটপাট ও বাড়ীঘর দোকানে অগ্নিসংযোগ করা হয়। খবর পেয়ে সদর থানার পুলিশ পরিস্থিতি ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে করেন।
টনি স্টোরের মালিক ছানোয়ার হোসেন জানান, আমার দোকানে অতর্কিতভাবে হামলা চালিয়ে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে আগুনে সব পুড়ে যায়। এতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০ লক্ষ টাকা।
ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির মালিক বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী আজিজুর রহমান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী আব্দুল মজিদের জানান, আমাদের পরিচয় দিয়ে বার বার নিষেধ করলাম এরপরও তারা অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আমার বাড়িতে ভাঙচুর করে।
ক্ষতিগ্রস্ত বাসভবনটির মালিক আব্দুস সালাম বলেন, কেন আমার বাড়িতে হামলা করা হলো, বুঝতে পারছি না। বিক্ষুব্ধরা আমার বাড়ীর একটি প্রাইভেটকার, দুটি পিকআপ ও বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।
সিরাজগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের স্টেশন অফিসার আতাউর রহমান বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
সিরাজগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাহাউদ্দিন ফারুকী রোববার বলেন, পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।
এর আগে শনিবার রাতে পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী তরিকুল ইসলাম খানকে বিজয়ী ঘোষণার পর পরাজিতপক্ষের সঙ্গে কথা-কাটাকাটির জের ধরে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে বিজয়ী ওই কাউন্সিলর প্রার্থী গুরুতর আহত হন। দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে সিরাজগঞ্জ শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে তাঁর লাশ সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যার বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়।
নিহত তারিকুল ইসলাম শহরের নতুন ভাঙ্গাবাড়ি মহল্লার আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে। তিনি পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর পদে ডালিম প্রতিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৮৫ ভোটে জয়ী হয়েছেন।
এদিকে সিরাজগঞ্জ নিহত নব নির্বাচিত কাউন্সিলর তরিকুল ইসলাম খানের বাড়ীতে এখন চলছে শোকের মাতম। এভাবে তার চলে যাওয়াকে কোনভাবেই মেনে নিতে পারছে না তার পরিবারের সদস্যা। তরিকুলের মৃত্যু শোকে মুহ্যমান এলাকাবাসীও। এখন বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা। সকাল থেকেই চলছে এলাকায় বিক্ষোভ ও মিছিল। নারী পুরুষ সবারই একটাই দাবী দোষীদের দৃষ্টান্তামুলক শাস্তি।