ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

দাদিমা

গোলাম মোর্তুজা
🕐 ১১:৩৯ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ১৬, ২০২১

দাদিমা

হেমন্তের রোদ বাড়ির চারদিক ছড়িয়ে পড়েছে। সকালের আবহটা মনোমুগ্ধকর হলেও এ বাড়ির সবাই মন খারাপের মেঘে ঢেকে আছে। দাদিমার অসুখ করেছে। হাসনাত দুঃখের তাপে ফালাফালা হয়ে যাচ্ছে। হাসনাত এ বাড়ির একমাত্র ছোট ছেলে। ছোট বললেও ছোট না ও এবার অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। কিন্তু দাদিমার সঙ্গে ওকে যেন জাদুর মতো টানে।

ক’দিন থেকেই দাদিমার শরীরটা ভালো না দেখেই বাড়ির কর্তা দাদিমার ছেলে মোলাকাত ডাক্তারের কাছে নিয়েও গিয়েছিলেন। মাসের শেষ। বাড়িতে চারটি মানুষের ভরণপোষণেই মাসের বেতনের টাকা মাসের মাঝেই শেষ হয়ে যায়। মা অসুস্থ। অসুখ তো আর এসব বোঝে না। মায়ের অবস্থাও ভালো ঠেকছে না। আরেকবার ডাক্তার দেখাতে পারলে মনের প্রশান্তি আসত। কিন্তু টাকা নেই। বাবা মোলাকাতের মুখের দিকে অপলক ও করুণ চাহনিতে তাকিয়েই আছে হাসনাত। হাসনাত বুঝে ফেলেছে বাবার কাছে টাকা নেই। হাসনাত বাবাকে হাত ধরে ফিসফিস করে কী যেন বলল আর তাতেই ছেলেসহ মোলাকাত পাশের ঘরে। হাসনাত ওর পড়ার ড্রয়ার থেকে বেশ কিছু টাকা বের করে বলল, ‘বাবা এই নাও। দাদিমাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাও।’

ছেলের এমন আচরণে বাবা হয়ে কী করা উচিত তা ভেবেও পাচ্ছেন না। তবুও দু’হাত প্রসারিত করে ছেলেকে আদর করতে করতে বললেন, ‘টাকা কোথায় পেলে বাবা?’ বাবার আবেগবিজড়িত কথা শুনে হাসনাত বিড়বিড় করে বলল, ‘বাবা আমাকে স্কুলে যাওয়ার জন্য যে টাকা দিতে তা থেকে বাঁচিয়ে রেখেছিলাম। দেখলে তো এখন কাজে লাগল। তোমাকে ধার দিলাম। সময় সুযোগ বুঝে ধার পরিশোধ করে দিও।’ মোলাকাত নিজেকে অপ্রতিভ নীলিমার মতো ভাবল। চোখের কোণে অব্যক্ত বেদনার খচখচে বালি চোখটাকে নাজেহাল করে ছাড়ছে। মা শাহনাজ গটমট করে এলেন। বাবা ছেলের অবস্থানগত কারণে কিছু না বলে থ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। হাসনাতই বলল, ‘দাদিমাকে একা রেখেই চলে এলে। অসুস্থ মানুষকে একা রাখতে নেই।’ বলেই কিছু একটা ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করবার জন্য যেমন মানুষ দৌড়ায় ঠিক তেমনভাবে হাসনাত দাদিমার কাছে গেল। দাদিমার বিছানা গোটানো। দাদিমাও গুটিসুটি মেরে আছেন। হাসনাতের দাদিমার পাশে মলিন বিছানাতে বসল। বলল, ‘দাদিমা, একটুও চিন্তা করো না। বাবা তোমাকে আজকে আবার ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন।’

দাদিমা ক্ষীণ কণ্ঠে বললেন, ‘দাদা ভাই রে, আর ডাক্তার দেখিয়ে অযথা টাকা খরচ করে কী আর হবে। হয়তো ওপারের ডাক এসেছে চলে যেতে হবে।’ দাদিমার কথা শেষ হতে না হতে হাসনাতের চোখ বেয়ে টপটপ করে রহস্যঘেরা জল ঝরল। দাদিমা একটু অন্যমনস্ক হয়ে কথাগুলো বলছিলেন। সামনে তাকালেন। না, হাসনাত নেই। দাদিমা ডাকলেন, ‘কই গো আমার দাদাভাই। হাসনাত কই গেলে সোনা। শুনে যাও। একটা গল্প বলব খুব মজার।’ এ বয়সেও হাসনাত রাক্ষসের গল্প শোনতে প্রায় মাতাল। দাদিমার গল্প ও মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শোনে। দাদিমার গল্প শোনানোর কথা শুনে ছুটে এলো। বলল, ‘দাদিমা, মরে যাওয়ার কথা আর কোনোদিন বলবে না। তোমাকে মরতে দেব না। আমার জন্যই তোমাকে বাঁচতে হবে। আমি বড় হয়ে তোমাকে বিদেশের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব।’ হাসনাতের চোখের কোণে শিশিরের মতো ছিটেফোঁটা পানি চকচক করছে। দাদিমা তন্দ্রালু চোখে হাসনাতকে দেখলেন। বললেন, ‘আমার যাদু সোনার কথা শোনো। আল্লাহ তোমাকে হায়াত দারাজ করুক। আয়, তোকে গল্পটা শোনাই।’ গল্প বলতে বলতে খুকখুক করে কাশলেন। কাশির অবাধ্য রকমের বাড়াবাড়ি দেখে ছেলে মোলাকাত এলেন। বললেন, ‘মা, কাশিটা বেড়েছে? আজ বিকেলে ডাক্তারের কাছে যাব। রেডি থেক।’ বলেই কথার জবাবের অপেক্ষা না করে বিদ্যালয়ে চলে গেলেন।

হাসনাতের টাকায় দাদিমাকে ডাক্তার দেখানো হলো। এখন দাদিমা বেশ সুস্থ। দাদিমার সুস্থতাই যেন হাসনাতকে সুখের ছন্দে ভুরভুর করে তুলেছে।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper