আইন মানতে অনীহা কেন
রেজাউল ইসলাম রেজা
🕐 ১০:৫৪ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ১৬, ২০২১
যানবাহনের পেছনে প্রায়ই একটা লেখা দেখি, ‘১০০ হাত দূরে থাকুন’। বন্ধুদের মধ্যে আড্ডা দেওয়ার সময়, নিজ অজান্তেই কখনো হাসির ছলে কিংবা রেগে গিয়ে বলি, ‘দূরে সর’! চোখের দেখা বা মুখে বললেও কখনো কি এর মূল কারণ চিন্তা করি? সড়কে গাড়ি চললে, নিজের নিরাপত্তার স্বার্থে দূরে থাকা নৈতিক দায়িত্ব। সমাজে চলতে হলে কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয়। আর এসব বিধি-নিষেধ মেনে নিতে গিয়েই সৃষ্টি হয় অভ্যাস। কিন্তু মানুষ হিসেবে আমাদের মধ্যে কতটা নীতি নৈতিকতাবোধ বেঁচে আছে, বলা মুশকিল। নৈতিকতার অবক্ষয় এমন অবস্থায় দাঁড়িয়েছে, যেখান থেকে ফেরা কঠিন। যে কাজগুলো থেকে বিরত থাকা উচিত, সেগুলোই আমরা বেশি বেশি করি। এই ধরুন ‘দেয়ালে পোস্টার লাগানো যাবে না’ কিংবা ‘এখানে প্রস্রাব করা নিষেধ’, এসব ক্ষেত্রে উল্টোটাই চোখে পড়ে। কখনো কখনো দেখা যায়, অযথা গাড়ি পার্কিং নিষেধ, এমন জায়গায় দু-চারটে গাড়ি পড়েই আছে। ইচ্ছে হলেই নিয়ম ভঙ্গ করি, বিনিময়ে পাই পৈশাচিক আনন্দ।
নিষেধগুলোই যেন এখন নিয়ম হয়ে গেছে। তাছাড়া দৈনন্দিন জীবনের প্রচলিত কিছু অভ্যাস আমাদের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। কাউকে দেখলে, হরহামেশাই জড়িয়ে ধরি কিংবা কাঁধে হাত রেখে হেলেদুলে পথ চলি। আমাদের আবেগ, ভালোবাসা একটু বেশি। তাই বলে অযথা কাউকে দেখলেই জড়িয়ে ধরা, হ্যান্ডশেক করা সমীচীন নয়। এটা কখনই ভালো অভ্যাস হতে পারে না। রোজকার রুটিনে, নানানরকম কাজের মধ্য দিয়েই যেতে হয়। আর এতে হাত, পা মুখম-লে স্বভাবতই জীবাণু লেগে থাকে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ইমানের অঙ্গ। এগুলো বাধ্য করে শেখানো সুখকর নয়।
করোনা আসার পর থেকে এই স্বাস্থ্যবিধি এবং সামাজিক দূরত্ব, শব্দ দুটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে লেগে আছে। করোনা থেকে বাঁচতে এর কোনো বিকল্প নেই। বস্তুতপক্ষে এটা তো আমাদের নিত্যদিনের অভ্যাস হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সরকার আইন করেও এই সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারছে না। করোনা থেকে বাঁচতে সামান্য মাস্ক পরতেও অনীহা। মহামারীর বর্তমান পরিস্থিতিতে ভ্যাকসিন ব্যতীত কোনো উপায় নেই, সেহেতু আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই হলো মূল প্রতিষেধক। করোনা সংক্রমণ কমিয়ে আনার জন্য প্রধান ভূমিকা আমাদেরই। আমরা যদি কথা বলার সময় দূরত্ব বজায় রাখি, প্রয়োজন ছাড়া বাইরে অযথা ঘোরাঘুরি না করি, বাইরে বের হলে মাস্ক পরিধান করি, যথাসম্ভব দূরত্ব বজায় রাখি, সেটা যেমন এই রোগ বিস্তারের পরিপন্থী তেমনি আমাদের সামাজিক ভদ্রতা, শিষ্টাচারের সহায়ক। বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে স্বাস্থ্যবিধি মেনে, দূরত্ব বজায় রেখে চলা কঠিন। তবে নিজে বেঁচে থাকতে পাশাপাশি অন্যকেও বাঁচিয়ে রাখতে, আমাদের চেষ্টা করতে হবে। সরকার যত চেষ্টাই করুক না কেন, সামাজিক দূরত্ব বা সোশ্যাল ডিসটেন্সিংয়ের বিষয়টা আমাদের মতো জনসাধারণকে নিয়েই। আমরাই এর সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে স্বাধীনভাবে চলার অধিকার আমাদের আছে। তাই বলে অন্যের ক্ষতি করে নয়। চীনের উহান থেকে করোনাভাইরাসের উৎপত্তি হলেও সেই উহান শহরেও এখন করোনা আক্রান্তের হার শূন্য।
রেজাউল ইসলাম রেজা : শিক্ষার্থী, কৃষি অনুষদ, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]