ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

অতিথি পাখি নিধন প্রসঙ্গে

হোসাইন মোহাম্মদ হীরা
🕐 ১:০১ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৫, ২০২১

অতিথি পাখি নিধন প্রসঙ্গে

আজ থেকে দুইশ’ কি তিনশ’ বছর পূর্বে জনবিরল দেশটি পানি, জলাভূমি, গাছগাছালি ইত্যাদি মিলিয়ে অপূর্ব এক আবহাওয়ার দেশ ছিল। তখন থেকে পাখিরা এ দেশকে নিবাস হিসেবে বেছে নেয়। শীতের পাখিরা এ দেশকে চিনছে নাতিশীতোষ্ণ ও উষ্ণ আবহাওয়ার দেশ হিসেবে। সুদূর সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, চীন, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইন, আসাম, ভারত, বার্মা এবং রাশিয়ার কোনো কোনো অঞ্চল থেকে প্রতিবছর শীত মৌসুমে এসব পাখি অতিথি হয়ে আমাদের বাংলাদেশে আসে। এসব অতিথি হিমালয় সংলগ্ন বরফগলা অঞ্চল থেকে হাজার হাজার মাইল আকাশপথ পেরিয়ে উষ্ণতার আমেজ নিতে পৃথিবীর গ্রীষ্ম প্রধান দেশগুলোতে এই সময়টা যেন এরা ঘুরে বেড়ায়। অনেক পাখি দেশান্তরিত হয় তখন নিজ দেশ থেকে। কারণ শীতের সময়ই উত্তর গোলার্ধের বিরাট এলাকা বরফে তখন ঢাকা পড়ে। বরফাঞ্চলেরই প্রচ- শীতাতপ সহ্য করতে না পেরে পাখিদের আহার এবং বাসস্থানের প্রধান সমস্যা হিসেবে দেখা দেয়।

তখন এসব পাখি আহার ও বাসস্থানের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে এবং নাতিশীতোষ্ণ হিসেবে বাংলাদেশসহ এশিয়ার অন্যান্য দেশ ওরা বেছে নেয়। শীত শেষে আবার চলে যায় যে যার আপন দেশে। কিন্তু এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় অতিথি পাখিরা বাংলাদেশে বেশি আসে। তবে হিমালয়ের সুউচ্চ পথে সব পাখি এই দেশে আসতে পারে না। কিন্তু কতিপয় পাখিদের বাংলাদেশের উপর দিয়ে পশ্চিম ভারত হয়ে শ্রীলঙ্কা পর্যন্ত চলে যায়। শীত কেটে গেলে পাখিদের ডিম দেওয়ার সময় এরা চলে আসে। এজন্য পথে পাখিরা ফিরে যায়। পথিমধ্যে অতিথিরা সিলেট, ময়মনসিংহ হাওরে নামে। নৈসর্গিক শোভাসমৃদ্ধ বাংলাদেশের হাওর, বিল-ঝিল, নদী-নালা, বন-জঙ্গল আর চলাঞ্চল। কখনো নদীর তীরে পাখিরা নিবিষ্টে মাছ ধরার ধ্যানে অপেক্ষায় থাকে ভরদুপুরে। আবার ডানা ঝাপটে কখনো নীল আকাশে উড়ে বেড়ায়। বৈচিত্র্য বর্ণিল পাখিদের মধ্যে ১০/১৫ প্রজাতের হাঁস এবং অন্যান্য পাখিও আসে। হাঁসের মধ্যে সিরিয়া, পিয়ং, কবালি, চীনা, পাতরী, রাত চড়া, হাড়গিলা, বালিহাঁস, সরালি যেনজি ইত্যাদি।

তবুও মানুষের কাছ থেকে তারা রেহাই পায় না। মানুষ বিভিন্ন প্রকারে ফাঁদ পেতে ও নানা কৌশল অবলম্বন করে পাখিদের ধরে। বন্দুক দিয়ে নির্বিচারে হত্যা করা হয়। কেউ কেউ গুলিবিদ্ধ হয়ে আহতবস্থায় নাগালের বাইরে গিয়ে ছিটকে পড়ে। এমনকি বনের আবডালেও চলে যায়। এক সময় পাখিরা বিক্রয়ের সামগ্রী হয়ে খাঁচায় ভর্তি হয়। তখন শিকারিরা বিক্রয়ের প্রয়োজনে হাট-বাজারে নিয়ে আসে। তখন অনেকেই কিনে নিয়ে আসেন বাড়িতে তারপর দা-ছুরি ইত্যাদি দিয়ে জবাই করতে গেলে পাখিরা তখন চিৎকার শুরু করে। বলতে থাকেÑ আমাদের মারবেন না। বাসস্থান বিপন্ন হওয়ার দরুন বিপদে পড়ে বাংলার মাটিতে অতিথি হয়ে সীমিত সময়ের জন্য এসেছি। গরম পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আবারও আমরা নিজ দেশের আপন ভুবনে চলে যাব। যদি বেঁচে থাকি তবে আগামীতে আসব আবারও এই বাংলায়। তোমরা অপেক্ষায় থাকো। কিন্তু নির্দয় জবাইকারীরা কিছুতেই তাদের এই আর্তনাদ শুনতে অনিচ্ছুক, অনীহা। একপর্যায় তাদের গলায় ধারালো ছুরি চালালে তখন বলে ‘হায় রে নির্মম নিষ্ঠুর নিয়তি’। বিপদে পড়ে খাদ্য ও বাসস্থানের প্রয়োজনে আমরা এসেছিলাম বাংলায়, পরিণামে পেলাম নির্মম মৃত্যু। এই বলতে বলতে তখন চিৎকার দিয়ে নিজেকে আত্মবিসর্জন দিয়ে যায়।

হোসাইন মোহাম্মদ হীরা : সাহিত্যিক। রাধানগর বাজার, জাফলং, গোয়াইনঘাট, সিলেট।

 
Electronic Paper