ঢাকা, বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ভৈরব নদের অবৈধ স্থাপনার তালিকা তৈরিতে অনিয়ম

যশোর প্রতিনিধি
🕐 ৬:১২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৩, ২০২১

ভৈরব নদের অবৈধ স্থাপনার তালিকা তৈরিতে অনিয়ম

যশোরের অভয়নগর উপজেলায় ভৈরব নদের ২৫টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। গত ১৪ ও ১৫ ডিসেম্বর নওয়াপাড়া নদীবন্দর কর্তৃপক্ষ এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে। তবে অভিযোগ উঠেছে, যথাযথ নিয়ম মেনে নদের এসব অবৈধ স্থাপনার তালিকা তৈরি হয়নি। এ ছাড়া উচ্ছেদ অভিযানের ব্যয় নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্র জানায়, নিয়ম অনুযায়ী বিআইডব্লিউটিএ ও জেলা প্রশাসন যৌথভাবে নদের অবৈধ স্থাপনার তালিকা তৈরি করবে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের আগে দখলদারদের নোটিস দিতে হবে এবং এলাকায় মাইকিং করতে হবে। কিন্তু নওয়াপাড়া নদীবন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারী পরিচালক শাহ আলম মিয়া একাই নদের চেঙ্গুটিয়া থেকে মুজতখালী খাল এলাকা পর্যন্ত ৪৬টি অবৈধ স্থাপনার নতুন তালিকা তৈরি করেছেন। দখলদারদের নোটিস দেওয়া হয়নি। মাত্র একদিন বিকেলে মাইকিং করা হয়েছে।

নওয়াপাড়া নদীবন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, অবৈধ এসব স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। গত ১৪ ও ১৫ ডিসেম্বর অভিযান চালিয়ে অভয়নগর উপজেলার তালতলা থেকে চেঙ্গুটিয়া পর্যন্ত ২৫টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। তালতলা থেকে মুজতখালী খাল এলাকা পর্যন্ত আরও ২১টি অবৈধ স্থাপনা রয়েছে।

উচ্ছেদ অভিযানে বিআইডব্লিউটিএ থেকে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়। লং বুম এক্সকাভেটর, জাহাজসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্র পাঠানো হয়। শ্রমিক নিয়োগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের আনা-নেওয়ার জন্য গাড়িভাড়া, আপ্যায়ন, ভিডিও রেকর্ডিং ও স্থিরচিত্র এবং মাইক ভাড়ার ব্যয় বাবদ ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।

এ জন্য নওয়াপাড়া নদীবন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারী পরিচালক শাহ আলম মিয়াকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি করা হয়।

কমিটির অপর সদস্যরা হলেন- বিআইডব্লিউটিএ খুলনার যুগ্ম পরিচালক আশরাফ হোসেন, নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম এবং উপ-পরিচালক হিসাব বিভাগ (ভারপ্রাপ্ত) লিপন বৈদ্য। কমিটি কোটেশন আহ্বান করে। উপজেলার রাজঘাটের মেসার্স জামান এন্টারপ্রাইজ, নওয়াপাড়ার মেসার্স ফারুক এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স মামুন এন্টারপ্রাইজ কোটেশনে অংশ নেয়। উচ্ছেদ কাজে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে মেসার্স মামুন এন্টারপ্রাইজ কাজ পায়।

অনুসন্ধান করে তিনটি প্রতিষ্ঠানের একটিরও কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তাছাড়া মেসার্স জামান এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স ফারুক এন্টারপ্রাইজের কোটেশনের প্যাডে ১০টি সংখ্যার একই মুঠোফোন নম্বর লেখা আছে। অভিযানের দুই দিনে শুধু প্রথম দিনে আটজন শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়। দ্বিতীয় দিনে কোনো শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। শ্রমিকদের ৫ হাজার টাকা মজুরি দেওয়া হয়। আপ্যায়ন বাবদ প্রথম দিন প্রায় ১০ হাজার টাকা দিয়ে ৭০ প্যাকেট তেহারি এবং দ্বিতীয় দিন প্রায় ৫ হাজার টাকা দিয়ে ৩০ প্যাকেট তেহারি কেনা হয়।

প্রচারণা বাবদ একটি টেলিভিশন চ্যানেলের প্রতিনিধিকে ৭ হাজার এবং স্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকার সাংবাদিককে ৩ হাজার টাকা দেওয়া হয়। একদিন মাইকিং করতে খরচ হয়েছে ১ হাজার টাকা।

নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের নওয়াপাড়া শাখার সদস্যসচিব নিয়ামুল ইসলাম জানান, নওয়াপাড়া নদীবন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারী পরিচালক শাহ আলম মিয়া তাকে শ্রমিক দিতে বলেছিলেন। একদিন ৮ জন শ্রমিক দিয়েছিলেন। দিনপ্রতি মজুরি ৬০০ টাকা করে দেওয়া হয়। তা ছাড়া গণমাধ্যমে প্রচারের জন্য ১০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। শুধু টাকাই খরচ হয়েছে। অবৈধ স্থাপনা ঠিকমতো উচ্ছেদ হয়নি।

জানতে চাইলে কমিটির সদস্য বিআইডব্লিউটিএ খুলনার যুগ্ম পরিচালক আশরাফ হোসেন বলেন, ‘নওয়াপাড়ায় ভৈরব নদের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে কোনো কোটেশনে আমি স্বাক্ষর করেছি কি-না, স্মরণ করতে পারছি না। বিষয়টি আমার জানা নেই।’

নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘কোটেশনে আমি সই করেছি। কিন্তু কোটেশন সঠিক কি না, তা ভেরিফিকেশন করার মতো সময় পাইনি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হিসাব বিভাগের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) লিপন বৈদ্য বলেন, তার কোনো বক্তব্য জানতে চাইলে লিখিতভাবে আবেদন করতে হবে।

নওয়াপাড়া নদীবন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারী পরিচালক শাহ আলম মিয়া বলেন, নিয়মানুযায়ী তিনি নদের অবৈধ দখলদারদের নতুন তালিকা তৈরি করেছেন। সেই অনুয়ায়ী অভিযান চালিয়ে ২৫টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। আরও ২১টি অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। সেগুলোও অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করা হবে।

উচ্ছেদ অভিযানের ব্যয় নিয়ে শাহ আলম মিয়া বলেন, ‘শ্রমিক নিয়োগ, খাবার ও মাইকিংয়ের জন্য কোটেশন আহ্বান করা হয়েছিল। তিনজন ঠিকাদার কোটেশনে অংশ নেন। নিয়মতান্ত্রিকভাবে সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ দেওয়া হয়েছে।’

 
Electronic Paper