ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

নিরাপদ খাদ্য জরুরি

জাফর আহমদ
🕐 ৩:১৮ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৭, ২০২০

নিরাপদ খাদ্য জরুরি

দেশে খাদ্য নিরাপত্তার জন্য খাদ্য উৎপাদনে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চলছে, অনেকটা অভীষ্টের কাছাকাছি পৌঁছেও গেছে। এখন নিরাপদ খাদ্য জরুরি হয়ে পড়েছে। অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। আমরা যে খাদ্য খাচ্ছি তা কতটা নিরাপদ। নিরাপদ খাদ্যের জন্য গঠিত হয়েছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে খোলা কাগজের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. রেজাউল করিম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জাফর আহমদ

খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে কাজ চলছে। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে নিরাপদ খাদ্য নিয়ে কাজ শুরু করেছেনÑ দুটি বিষয়ই গুরুত্বপূর্ণ। এখন কোনটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ?
এক সময় খাদ্যের অভিগম্যতার প্রশ্ন ছিল। এখন প্রশ্ন নিরাপদ খাদ্যের অভিগম্যতার। এত খাদ্য কীভাবে উৎপাদন করা যাবে, উৎপাদন না করা গেলে কোথা থেকে সে খাদ্য আসবে- এতদিন সে চিন্তা ছিল; খাদ্য না পেলে খাদ্যের চাহিদা কীভাবে পূরণ হবে সে চিন্তা ছিল। এখন প্রসঙ্গটা বদলে গেছে। এখন প্রশ্ন নিরাপদ খাদ্যের। যা উৎপাদন করছি, যা খাচ্ছি, যা সরবরাহ করছি তা নিরাপদভাবে উৎপাদন করছি কি-না, পুষ্টি মানসম্পন্ন করছি কি-না ও নিরাপত্তার সঙ্গে সরবরাহ করতে পারছি কি-নাÑ এখন সেই প্রশ্ন। আর সেখান থেকেই শুরু হয়েছে আমাদের নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কাজ।

খাদ্যের নিরাপত্তার বিষয়টি জোরদার আরও একটি কারণ তা হলো খাদ্যের ডাইভারসিফিকেশন। আগে ভাত রুটিই আমাদের প্রধান খাদ্য ছিল। এখন আর সেখানে সীমাবদ্ধ নেই। এখন খাদ্য উৎপাদন, সরবরাহ, বিপণন ও ভোগে বহুমুখিতা এসেছে। এই বহুমুখিতার পাশাপাশি প্রশ্ন উঠেছে নিরাপদ খাদ্যের।

তাহলে তো নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কর্মপরিধি অনেক বড়?
অনেক বড়। অদূর ভবিষ্যতে এটা উচ্চ পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ কাজ হবে। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ যদি বলে এ খাদ্য নিরাপদ নয়, এ খাদ্য আসবে নাÑ সে খাদ্য আসবে না, বাজারজাত হবে না। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ বলে, এই প্লেট তৈরি হবে না, এই প্লেটে খাদ্য খাওয়া নিরাপদ নয়, প্লেট থাকা কেমিক্যাল বা উপাদানে বিষক্রিয়া হবে। এ খাদ্য বাজারে যাবে না। এর মানে খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিধি এত বড়।

চাষের ক্ষেত্রে মেশিনও নিরাপদ খাদ্য কর্মসূচির আওতায়। ধান চাষ করা মেশিন এমন হতে হবে ওই মেশিনের তেল জমিতে যেন না পড়ে। জমিতে তেল পড়লে ওই জমি থেকে উৎপাদিত খাদ্য মানবদেহের জন্য ঝুঁকি তৈরি হলো।

বাংলাদেশের ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকায় মাটিতে ল্যাডের অধিক্য বেশি। ল্যাড হলো হেভি মেটাল। এর জন্য মানুষের কোনো দোষ নেই। এই মাটিতে যে ফল ও ফসল হয় তাতে ল্যাডের অধিক্য থাকে। আর ওই ফসল খেয়ে বেঁচে থাকা মানুষের সৃষ্টিশীলতা নষ্ট হয়ে যায়। মানুষ চিন্তা করতে পারবে না। চিন্তা ছাড়া, সৃষ্টিশীলতা ছাড়া মানুষ নির্জীব হয়ে যায়।

গ্লোবালাইজেশনের যুগে পুরো বিশ^ এখন হাতের মুঠোয়। উঠতি অর্থনীতির দেশ হওয়ার কারণে বিশে^র সব উন্নয়ন অগ্রগতির সঙ্গে বাংলাদেশ কোনো না কোনোভাবে সম্পর্ক যুক্ত। এ কারণে আমেরিকার পিজ্জা, ইরানের বিরানী, ইউকে’র কারি, চীনের বিশেষ খাবার আমাদের খাবারের অংশ হয়ে গেছে। আমাদের মিস্টি আমও অন্য দেশের মানুষ খেতে চায়। এক্ষেত্রে খাদ্যের একটি আন্তর্জাতিক রূপ পেয়েছে।

আন্তর্জাতিক অভিগম্যতার একটি ব্যাপার আছে। এ অভিগম্যতা নিশ্চিত করতে ওই সব খাদ্যপণ্যের উৎপাদন পরিবহন বিপণন থেকে ভোগ পর্যন্ত নিরাপদের বিষয় এখন খুব জরুরি।

আমরা এক সময় খাদ্য নিরাপত্তার কথা বলেছি, আর এখন বলছি নিরাপদ খাদ্যের কথা?
খাদ্য প্রয়োজন আমাদের আপাতত মিটে গেছে। কিন্তু নিরাপদ খাদ্য এখনো হয়নি। এই নিরাপদ খাদ্য নিরাপত্তার একটি অংশ। নিরাপদ খাদ্য না হলে খাদ্য নিরাপত্তা হলেও তা পরিপূর্ণ হবে না।

তাহলে খাদ্য উৎপাদনে আমরা একটি উঁচুস্থান অর্জন করতে পেরেছি?
বলতে পারেন। অর্থনৈতিক কার্যক্রম বেড়ে যাওয়ার কারণে মানুষের চাহিদা, যোগাযোগ ও জীবন যাপনের ধরন বদলে গেছে। মানুষের ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। মানুষের রুচি ও জীবনের চাহিদা বদলে গেছে। ব্যস্ততার কারণে নিজে বা পারিবারিক আবহে খাদ্যের চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না।

বাজার বা সরবরাহকারীর ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। তারপর আপনি প্রচলিত খাওয়ার খেলেও আপনার সন্তানের প্রচলিত খাওয়ার ওপর নির্ভর করছে না, বারবিকিউ কাবাব খাওয়ার না খেলে চলছে না; সেটা আপনি দিচ্ছেনও। কারণ আপনার ক্যাপাসিটি বেড়ে গেছে। আপনার সন্তানের জন্য খরচ করতে পারছেন, ভালো কথা। সন্তানের ভালোর কথা চিন্তা করে এটা দেবেন। কিন্তু সেটা ঝুঁকিমুক্ত হতে হবে। আর এখানেই নিরাপদ খাদ্যের প্রয়োজন আসছে।

আপনি বলছেন আগে খাদ্য উৎপাদন কম হতো, চাহিদা পূরণে আমদানি করতে হতো। তখন জীবন ধারণে কীভাবে তিন বেলা খাওয়ার সংগ্রহ করা হয়, এখনো কী ওই স্থানেই থাকব?
হ্যাঁ, আমরা এখন ওই তিন বেলার খাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নই। আমরা যখন যা প্রয়োজন সেভাবে খাদ্য খাচ্ছি। এমনকি বিশেষ ধরনের খাদ্যের দিকে যাচ্ছি।

আমাদের খাদ্য বাড়ছে। খাদ্যের অভিগম্যতা বাড়ছে। আগে এত বেশি খাওয়ার সম্পর্কে জানতাম না, এখন জানছি। কেন জানছি এখন আমার কাছে খাদ্য যাচ্ছে। এখন ঘরে বসে খাদ্য পাওয়ার জন্য ইন্টারনেটে নক করলেই আপনার দরজায় খাদ্য এসে হাজির। কিন্তু সেটা কতটা নিরাপদ দেখার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় খাদ্য রান্না না হলে সেটা নিরাপদ হবে না। রান্না করা খাদ্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে না খাওয়া হলে, নির্দিষ্ট সময় অতিক্রম করলে সেটা নিরাপদ থাকবে না, স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি তৈরি হবে।

বৈশ্বিক মহামারী করোনার মধ্যে জীবন ও খাদ্য দুটিই ঝুঁকিতে পড়েছে। অকালে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। এর থেকে আপনারা কী শিক্ষা পেলেন?
নির্দেশনা দিয়ে আমাদের কাজের সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে। আমাদের কাজ বিজ্ঞানভিত্তিক। অনুমাননির্ভর আমাদের কোনো কাজ নেই। খাদ্য গ্রহণজনিত ঝুঁকি চিহ্নিত; স্বাস্থ্য ঝুঁকি ইত্যাদি। ধরা যাক নাটোরে ভালো ঘি উৎপাদন হয়। আর যশোরে খেজুরের গুড় উৎপাদন হয়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের জন্য বিখ্যাত। আমাদের সারা দেশের এ রকম কিছু অঞ্চল আছেÑ যেখানে এ সব খাদ্যই বেশি উৎপাদন হয়। এখানে চাষের কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকি? পরিবহনের জন্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি? আমাদের কাজ হলো এগুলো খুঁজে বের করা। আমাদের কাজ হচ্ছে জৈবিক কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিরূপণ করা। করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে এসব ঝুঁকি নিরূপুণে আমাদের দায়িত্ব বেড়ে গেছে। কোভিড ভাইরাস, মেটকাউ ডিজিজ ভাইরাসসহ- অনেক ধরনের ভাইরাসের কারণে ডিজিজ হতে পারে। এগুলো আইডেনটিফাই করার মাধ্যমে ঝুঁকিগুলো কমিয়ে আনা যায়Ñ এগুলো স্টাডি করা। এগুলো হলো আমাদের কাজ। করোনা মহামারীর মধ্যে এক্ষেত্রে কর্মপরিধি বাড়িয়ে দিয়েছে।

অপ্রচলিত খাদ্য ব্যবস্থার মধ্যে কী কী স্বাস্থ্য ঝুঁকি আছে।
এন্টিবায়েটিকের ব্যবহার এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে এখন ওষুধে কাজ করছে না। গরুকে স্বাস্থ্যবান করার জন্য বা বেশি দুধ দেওয়ার জন্য এন্টিবায়টিক ব্যবহার করা হচ্ছে। দুধ বা মাংসের মাধ্যমে এই অ্যান্টিবায়টিকের মাধ্যমে তা চলে যাচ্ছে মানুষের শরীরে। এই দুধ বা মাংস খাওয়ার ফলে চলে যাচ্ছে মানুষের শরীরে। এর ফলে মানুষ রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগে এমন অনেক রোগী পড়ে আছে, অ্যান্টিবায়টিক তার শরীরে কাজ করছে না, মৃত্যুর প্রহর গুনছে। সে আগেই বিভিন্ন মাধ্যমে অ্যান্টিবায়টিক খেয়ে ফেলেছে। আগের দিনে কোরবানিকে অ্যান্টিবায়টিক খাইয়ে পরের দিন হাটে নিয়ে আসছে। তারপর তা মাংসের মাধ্যমে তার শরীরে চলে যাচ্ছে। এর কোন স্টাডি আছে? যে চাষি গরুকে অ্যান্টিবায়টিক খাওয়াল সে হয়তো জানেই না ২১ দিনের আগে ওই গরুর দুধ বা মাংস খাওয়া লাগবে না। ২১ দিন আগে খাওয়ালে মানুষের শরীরে ক্ষতি করবে। এ ক্ষতিপূরণ কে দেবে।

এ ক্ষেত্রে সচেতনতা জরুরি?
অবশ্যই। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ সফল হতে হলে আগে সচেতন হতে হবে। কৃষককে জানতে হবে অ্যান্টিবায়টিক ব্যবহারের কতদিন পর মানুষের ব্যবহারের জন্য বাজারে নিয়ে যেতে হবে। আপনার পরিচিত অনেক মানুষ পাবেন সে পোশাকে পরিপাটি ঝকঝকে কিন্তু তিনি যেখানে বসবাস করেন সেই স্থানটা অপরিষ্কার, বাথরুমটা অপরিষ্কার-বিষ ছড়াচ্ছে। কিন্তু সুস্থভাবে বসবাস করতে হলে এসব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হতে হবে। অনিরাপদ পরিবেশে থাকার কারণে, অনিরাপদ খাদ্য খাওয়ার কারণে আমাদের সৃষ্টিশীলতা কম থাকে। পশ্চিমারা থাকার জায়গা, বাধরুমÑ এসব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখে। অফিস, স্কুল, ট্রেন-বাস পরিচ্ছন্ন রাখে।

বাধরুম অনেক সময় স্টাডিরুমের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করে। খাতা-কলম, বইপত্র, সংবাদপত্র রাখে যাতে সেটা দেখতে পারে; বিশেষ কোনো চিন্তা মাথায় এলে যাতে লিখে রাখতে পারে। ফলে বাথরুম জীবণু ছড়ানোর মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার না হতে পারে এবং ব্যক্তির চিন্তার বাহনে ব্যবহার করতে পারে। একটি আনন্দদায়ক পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে।

 
Electronic Paper