ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বহুতল ভবনে বদলে গেছে রূপগঞ্জের ছাত্তার জুট মিলস মডেল হাই স্কুল

মাহবুব আলম প্রিয়, রূপগঞ্জ
🕐 ৩:৫৫ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৩, ২০২০

বহুতল ভবনে বদলে গেছে রূপগঞ্জের ছাত্তার জুট মিলস মডেল হাই স্কুল

৪তলা বিশিষ্ট্য অত্যাধুনিক মনোরম ভবন আর সুবিশাল খেলার মাঠ নিয়ে উন্নয়ন ছোঁয়ায় বদলে গেছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ১৯৮০ইং সনে প্রতিষ্ঠিত ছাত্তার জুট মিলস মডেল হাই স্কুল। শুরুতে জুট মিলে কর্মরত কর্মকর্তা ও শ্রমিকদের সন্তানের লেখা পড়ার জন্য প্রতিষ্ঠিত হলেও সময়ের ব্যবধানে স্থানীয় বাসিন্দাদের সন্তানরাও এ বিদ্যালয়ে লেখা পড়ার সুযোগ পান।

এর প্রতিষ্ঠাতা শিল্পপতি এমএ ছাত্তার ১৯৪৮ইং সনে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে উপজেলার কাঞ্চন পৌর এলাকায় কাঞ্চন ও আতলাশপুর মৌজায় ২৬২ একর জমিতে পাট কলের কারখানা গড়ে তুলেন। সে সময় পাট ও পাটজাত পন্যের ব্যাপক চাহিদা থাকায় পাশাপাশি আরও ৭টি পাটকল তৈরী হয় এ অঞ্চলে। এদের বেশিরভাগই ব্রিটিশ আমলে স্থানীয় শিল্পপতিরাই প্রতিষ্ঠা করেন।

ছাত্তার জুট মিলে স্থানীয় ও দেশের বিভিন্ন স্থানের শ্রমিক মিলে প্রায় ৫ হাজারের অধিক শ্রমিক কাজ করতেন। এদের মাঝে কিছু শ্রমিক আবাসিকভাবে বসবাস করতেন মিলের অভ্যন্তরীন কলোনীতে। অন্যদের মাঝে স্থানীয় ছাড়া বাহিরের জেলার লোকজন ভাড়াবাসায় থেকে এ পাটকলে কাজ করতেন। তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য এর মালিক এম এ ছাত্তার ১৯৮০ইং সনে প্রতিষ্ঠা করেন ছাত্তার জুট মিলস মডেল হাই স্কুল নামে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়।

পাশাপাশি নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদও প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টি শুরুতে মৌখিকভাবে জমি দান করে প্রাথমিক শাখা চালু করলেও ১৯৮৮ইং সন থেকে মাধ্যমিক স্তরে যাত্রা শুরু করেন। সে সময় বিদ্যালয়টিতে দুটি টিনসেড ভবন করে দেন প্রতিষ্ঠানের মালিক এম ছাত্তার। সময়ের ব্যবধানে বিদ্যালয় ভবনদুটি জড়াজীর্ণ হয়ে পড়লে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবীর মুখে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রয়াত আব্দুল মতিন চৌধুরী ১৯৯৫ইং ফ্যাসিলিটিস ডিপার্টম্যান্ট এর অর্থায়নে একতলা বিশিষ্ট একটি ভবন করে দেন।

এ সময় পাটজাত পন্য চাহিদা কমতে থাকা ও শ্রমিকদের বেতন ভাতা নিয়ে অসন্তোষের মুখে ক্রমেই শ্রমিক ছাঁটাই শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। এভাবে শ্রমিক কমে যাওয়ায় শ্রমিকদের পাশাপাশি স্থানীয়দের সন্তানরা লেখাপড়া করা শুরু করে এ প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু মৌখিক জমি দানের কারণে সরকারী সাহায্য সহযোগীতা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় বিদ্যালয় পরিচালনায়ও প্রভাব পড়ে। এতে চরম বিপাকে পড়েন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি।

সূত্র জানায়, বিদ্যালয়টির শুরুতে অর্থাৎ ১৯৮৪ইং পর্যন্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে হাল ধরেন এম এ বারী। ধারাবাহিকভাবে ১৯৮৫ থেকে ১৯৯৫ইং পর্যন্ত সোলাইমান মিয়া দায়িত্ব পালন করেন। তার সময়ে ১৯৯৩ইং সনে এমপিও ভুক্ত হয় প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়াও শামসুদ্দিন শেখ পরবর্তি বিকাশ চন্দ্র দাশ ২০১৪ইং সন পর্যন্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। এতোদিন বিদ্যালয়টি ছাত্তার জুট মিলস অভ্যন্তরীন সীমানায় একই ভবনে পাঠদান করেন।

প্রধান শিক্ষক বিকাশ চন্দ্র দাশ বদলি জনিত কারণে এ বিদ্যালয় ছেড়ে চলে গেলে ২০১৪ তে হাল ধরেন কাঞ্চন পৌর সভার হাটাবো টেকপাড়া এলাকার সাবেক ইউপি মেম্বার নজরুল ইসলামের ছেলে আবুল কালাম আজাদ। তিনি ২০০৩ইং সনে প্রথমে ক্রীড়া শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। প্রথম বছরেই বিদ্যালয়টি উপজেলা পর্যায় প্রতিযোগীতায় শ্রেষ্ঠ ক্রীড়া শিক্ষক হিসেবে স্বীকৃতি ও সনদ গ্রহণ করেন।

এভাবে ২০১৪ পরবর্তি আবুল কালাম আজাদ প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর বিদ্যালয়টিকে বিভিন্ন প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ ও শিক্ষার উন্নয়ন ঘটতে থাকলে জেলাজুরে সুপরিচিতি পায়। বাড়তে থাকে শিক্ষার মান। তবে স্থায়ী জমি না থাকায় বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থী নিয়ে বিপাকে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। সরকারে কাছে আবেদন করেও কোন প্রকার সারাপাননি এর পরিচালনা কমিটি।

এরপর বিষয়টি নিয়ে বর্তমান প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দা ফেরদৌসি আলম নীলাকে সমস্যার কথা জানান। ভাইস চেয়ারম্যান তা শুনে নারায়ণগঞ্জ ১ আসনের এমপি. বর্তমান বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক)কে অবহিত করেন। তিনি তাৎক্ষণিক ছাত্তার জুটমিলের ক্রয় সূত্রে মালিক সিনহা গ্রুপের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান সিনহার কাছে এ বিদ্যালয়টির পৃষ্টপোষকতার প্রস্তাব দেন।

ইতোমধ্যে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। সে সময়কার সভাপতির দায়িত্বে থাকা শেখ মোহাম্মদ তোহা সব দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন। আর এ বিদ্যালয়ের অবকাঠামো ও শিক্ষা উন্নয়নের স্বার্থে জমি দিতে রাজি হয় সিনহা গ্রুপের চেয়ারম্যান। তিনি ৫০ শতক জমি এ বিদ্যালয়ের নামে সবাকবলা রেজিষ্ট্রি করে দেন। তারপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি এ বিদ্যালয়টির।

প্রথমে ৬৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩তলা বিশিষ্ট একটি ভবনের ১তলা সম্পন্ন পরে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে প্রাপ্ত ৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকা বরাদ্দে ৪তলা বিশিষ্ট বহুতল অত্যাধুনিক ভবন নির্মাণ শুরু করেন মাতৃছায়া নামীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। তা ২০২০ এর জুনে বুঝিয়ে দেয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে শ্রমিক সংকটের অযুহাতে নির্মাণ কাজ পিছিয়ে যায়। তবে আগামী ২০২১ এর মার্চের আগেই কাজ বুঝিয়ে দিতে পারবেন বলে জানালেন ঠিকাদার বাবু মিয়া।

এদিকে ভবনটির কাজ শেষ পর্যায় থাকায় স্থানীয়দের মাঝে খুশির আমেজ পড়েছে। খুশি এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মহলেও।

বিদ্যালয়টির প্রাক্তন শিক্ষার্থী (২০০৩ এর ব্যাচ) বর্তমান ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অজিত দেব বলেন, এতোদিন জরাজীর্ণ পুরাতন ভবনে ক্লাস করতো এখানকার শিক্ষার্থীরা। এতে তাদের বহু কষ্ট ছিলো। এখন তাদের সেই দুর্দশা দূর করেছেন। এতে বর্তমান প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ স্যারের ভুমিকা রয়েছে। তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে সমস্যাগুলো তুলে ধরায় আজকের এ সুন্দর প্রতিষ্ঠান।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের দায়িত্বরত প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, জমিদাতা আনিসুর রহমান সিনহা, পরিচালনা কমিটির সভাপতি মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতিক) এমপি, কো অপ্ট সদস্য ভাইস চেয়ারম্যান ফেরদৌসি আলম নীলা এবং এর বর্তমান প্রধান শিক্ষক হিসেবে আমাদের প্রচেষ্টার ফসল আগামী প্রজন্ম পাচ্ছে।

 
Electronic Paper