ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সাজেকে জমির মালিকানা দাবি করে মসজিদ নির্মাণে বাধা

শাহাদাত স্বপন
🕐 ১০:৫৭ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ০৩, ২০২০

পর্যটন শিল্পে অপার সম্ভাবনার লীলাভূমি রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার সাজেকে মসজিদ নির্মাণের জন্য নির্ধারিত জায়গার মালিকানা দাবি করে সেখানে মসজিদ নির্মাণে বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পর্যটকদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে ‘দারুস সালাম জামে মসজিদ’ নামে এই স্থাপনা নির্মাণ করছে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। কিন্তু প্রকল্পটি নিয়ে অপপ্রচার চালিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার চেষ্টা করছেন পাহাড়ের এক শ্রেণির লোক।

সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, সপ্তাহিক ছুটির দিনে সাজেকে চার থেকে পাঁচ হাজার পর্যটকের সমাগম ঘটে। যাদের প্রায় ৯৫ শতাংশই মুসলিম। সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণের জন্য পর্যটন সংশ্লিষ্টরা দীর্ঘদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছিলেন। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ সাজেক হেলিপ্যাডের অদূরে জায়গা নির্ধারণ করে দৃষ্টিনন্দন একটি মসজিদ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয়। এই খবর পাওয়ার পর পাহাড়িদের একটি গোষ্ঠী সেই জায়গা নিজেদের দাবি করে মসজিদ নির্মাণের বিরুদ্ধে তৎপর হয়ে ওঠে।

কিন্তু সেই বাধা উপেক্ষা করে মসজিদ নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলেছে। কিন্তু পাহাড়ের একটি স্বার্থান্বেষী মহল মসজিদ নির্মাণ বানচাল করার জন্য নানাভাবে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

জেলা পরিষদ জানিয়েছে, মসজিদটি সরকারি জায়গায় নির্মাণ করা হচ্ছে। এটি সেনাবাহিনীর কোনো প্রকল্প নয়। তবে সেনাবাহিনী যেহেতু সাজেক পর্যটন এলাকার নিরাপত্তায় নিয়োজিত তাই তার অংশ হিসেবে তারা এই স্থানটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছে।

সাজেক ভ্যালিতে অন্য ধর্মাবলম্বীদের সাজেকে মসজিদ নির্মাণে বাধা জন্য বেশ কয়েকটি উপাসনালয় থাকলেও মুসলিম পর্যটকদের নামাজ আদায় করার জন্য কোনো মসজিদ নেই। নামাজ পড়ার জন্য বাধ্য হয়েই তাদের সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে ছোট একটি নামাজ ঘরে যেতে হয়। এজন্য স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে মসজিদ নির্মাণের জন্য পর্যটন সংশ্লিষ্টদের আবেদন ছিল সব সময়।

সরেজিমন দেখা যায়, সাজেকে রুন্ময়ের আগে হাতের বামপাশে পুরাতন হেলিপ্যাডে ‘দারুস সালাম জামে মসজিদ’-এর সাইনবোর্ড। জানা যায়, এটি খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকে আসার পথে অনেক দূর থেকে দেখা যাবে। ফলে নির্মাণাধীন দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদটি অপরূপ সৌন্দর্যের সাজেক পর্যটন কেন্দ্রে যোগ করবে নতুন মাত্রা। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সাজেক ভ্রমণে আরও বেশি আকৃষ্ট হবেন। যা স্থানীয় পাহাড়িদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

নির্মাণাধীন মসজিদের সাইনবোর্ড দেখে রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সাজেকে আসা মুসলিম পর্যটকরা।

স্থানীয় এক জিপগাড়ি চালক বলেন, শুক্রবার আমরা ভাড়া নিয়ে এলে জুমার নামাজ পড়ার সুযোগ হয় না। যদি জামে মসজিদটি নির্মাণ হয় তাহলে পর্যটকদের পাশাপাশি আমরাও নামাজ আদায় করতে পারব।

চট্টগ্রাম থেকে আসা পর্যটক সাকিব বলেন, সাজেকে পর্যটকদের জন্য কোনো মসজিদ নেই। ফলে নামাজ আদায় করায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

স্থানীয় এক রিসোর্ট মালিক বলেন, এখানে বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটক আসছেন। মসজিদ না থাকায় নিজস্ব উদ্যোগ ছাড়া নামাজ আদায়ের সুযোগ নেই। শুক্রবার জুমার জামাতের কোনো সুযোগ নেই। মসজিদ নির্মাণ হলে এ সমস্যা কেটে যাবে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক বিশ্লেষক সিদ্দীকি শাহিন বলেন, পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা অপপ্রচার চালিয়ে পর্যটনকে বন্ধ করতে চায়, কারণ পর্যটক গেলে তাদের নিরাপত্তার জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। আর নিরাপত্তা ব্যবস্থা তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম অবাধে পরিচালনায় বাধা সৃষ্টি করবে।

সরকারি জায়গায় ‘দারুস সালাম জামে মসজিদ’ নির্মাণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ব্রিষকেতু চাকমা।

তিনি বলেন, স্থানীয় অধিবাসীদের জায়গায় নির্মাণ করার তথ্য সত্য নয়। সরকারি খাস জায়গায় মসজিদটি নির্মাণ করা হচ্ছে। জেলা পরিষদ এখানে অর্থায়ন করছে। আর তত্ত্বাবধানে রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশিদ বলেন, মসজিদ নির্মাণের কাজ করছে জেলা পরিষদ। এ সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য তারা দিতে পারবেন।

 
Electronic Paper