ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

প্রকাশনা শিল্পে সহায়তা জরুরি

সম্পাদকীয়
🕐 ১১:৩৪ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ০২, ২০২০

করোনা পরিস্থিতির ধাক্কা ভালোমতই লেগেছে দেশের বইয়ের জগতে। অন্য আর সব খাতের মতো দেশের প্রকাশনা শিল্পের অবস্থাও নাজুক। গত মার্চ মাসে একুশে গ্রন্থমেলা শেষ হওয়ার এক সপ্তাহ পর দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণের কথা জানা যায়। এরপর করোনা পরিস্থিতিতে দেশে সৃজনশীল বইয়ের বিক্রি একপ্রকার বন্ধই বলা চলে। বাজার মন্দা হওয়ায় ছাপা হচ্ছে না নতুন বইও। সব মিলিয়ে অভাবনীয় দুর্দিন নামে প্রকাশনা খাতে। প্রকাশক, বই বিক্রেতা, পরিবহনকারী কিংবা ছাপাখানার মালিক, কর্মচারী, মুদ্রক, বই বাঁধাইকর্মী- সবারই এখন দুর্দিন। প্রকাশনা শিল্পের অবস্থা এতটাই করুণ যে, ইতোমধ্যেই ধস নেমেছে এই খাতে, ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকায়। সামনে ফেব্রুয়ারি মাস। একুশে গ্রন্থমেলাকে সামনে রেখে নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে এই খাত বেশ কর্মমুখর ও চাঙ্গা থাকে। নভেম্বর পার হয়ে ডিসেম্বর চলে এলেও প্রকাশনা শিল্পে কোনো ব্যস্ততাই দেখা যাচ্ছে না। সৃজনশীল প্রকাশনীতেও কাজ চলছে ঢিমে তালে।

স্কুল, কলেজ বন্ধ থাকায় প্রাতিষ্ঠানিক বইপত্রেও তেমন তোড়জোড় নেই। বই বিক্রি ব্যাপকভাবে কমেছে। তথ্যে জানা যায়, স্বাভাবিক অবস্থায় এই সময়ের মধ্যে বই বিক্রি হতো প্রায় সাত হাজার দু’শ কোটি টাকার। সেখানে করোনার নয় মাসে মাত্র ৭২০ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে। সেই হিসেবে এই নয় মাসে ছয় হাজার ৪৮০ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে। সেই হিসেবে এই সময়ে ছয় হাজার ৪৮০ কোটি টাকার বই বিক্রি কমেছে। পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক হওয়ায় এই শিল্পে ৮০ শতাংশ কর্মীকে বিনা বেতনে ছুটি দেওয়া হয়েছে। প্রকাশনী প্রতিষ্ঠানগুলো চালিয়ে যাচ্ছে টিকে থাকার লড়াই। সৃজনশীল ও পাঠ্য বইয়ের পাইকারি বাজারে বদলে গেছে নিত্যদিনের চিত্র। লেখক, প্রকাশক, ব্যবসায়ীদের ব্যস্ততা নেই। বেচাকেনা প্রায় বন্ধ। সাধারণ ছুটি শেষে গত ৩১ মে প্রকাশনা সংস্থাগুলোর শো-রুম খুলেছে কিন্তু পরিস্থিতির খুব একটা পরিবর্তন ঘটেনি। কলেজে নতুন একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু হয়নি। ফলে কলেজের পাঠ্যপুস্তক তেমন বিক্রি হচ্ছে না।

এই পরিস্থিতির ধাক্কা সামলাতে পারছে না ছাপাখানাগুলো। রাজধানী ঢাকায় আরামবাগ, ফকিরাপুল, পল্টন এলাকায় কম করে হলেও আড়াই হাজার ছাপাখানা রয়েছে, যার বেশির ভাগেরই চাকা ঘুরছে না। মালিকরা পড়েছেন বিপাকে। তারা না পারছেন ঘর ভাড়া দিতে, না পারছেন শ্রমিকদের পাওনা মেটাতে। প্রকাশনার বড় কাজগুলো হয় মার্চ থেকে জুনের মধ্যে। নতুন বই দেশব্যাপী পাঠানোর ব্যবস্থা করেন প্রকাশকরা, যার মাধ্যমে বইমেলা পরবর্তী সময়েও চাঙ্গা থাকে তাদের ব্যবসা। এ বছর সেই সময়টাতেই বন্ধ থেকেছে সবকিছু। তাই প্রকাশনা শিল্পের ব্যবসা কমে গেছে প্রায় ৯০ শতাংশ। ইতোমধ্যেই যে বিনিয়োগ করে রেখেছিলেন প্রকাশকরা, আশঙ্কা দেখা গিয়েছে সেগুলো গচ্চা যাওয়ার। করোনা পরিস্থিতি যদি আরও দীর্ঘ হয়, তাহলে পরিণাম হবে ভয়াবহ- সেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

প্রকাশনা সংস্থাগুলো পরের বছরের বইমেলার জন্য জুলাই-আগস্টেই কাজ অর্ধেক এগিয়ে রাখে। কিন্তু এবার সেই কাজ শুরু করাই হয়নি। তাই আগামী ফেব্রুয়ারিতে বইমেলা আদৌ হবে কি না- সে ব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ রয়ে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে ৪০০ কোটি টাকার ক্ষতি যে কোথায় গিয়ে ঠেকবে, তা কল্পনারও অতীত। অবশ্য তারপরও প্রকাশকরা আশায় বুক বাঁধছেন, ২০২১ সালের বইমেলা সঠিক সময়েই হবে। কেননা, সারা বছরের অর্ধেক বই মেলাতেই বিক্রি হয়। চলতি বছরের ক্ষতি পোষানোর সুযোগ তারা কার্যত পরবর্তী বইমেলাতেই পাবেন- এমনটা আশা করছেন তারা। চলমান সঙ্কটের ভিতরও প্রকাশনা সংস্থাগুলো তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাদের মাথা তুলে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের প্রণোদনার প্রয়োজন। না হলে এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। প্রকাশনা শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে আসা জরুরি।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper