ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

কালাচাঁন

গোলাম মোর্তুজা
🕐 ১২:৫৬ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ০১, ২০২০

এ গ্রামের অধিকাংশ মানুষেরই নাম চাঁন। তাছাড়াও সবারই বড় বড় কান। গ্রামের নামটিও তাই চাঁনকান। শিক্ষিত, অশিক্ষিত, চিটার সবখান। ক্ষমতার আঁধার আছেন কজনা। ওরাই গ্রামের বড় সেয়ানা। এই গ্রামেরই এমনি একজন কালাচাঁন। আছে পাশে ধন জন। বড়ই খারাপ নজর। স্বামী হয়েছেন তিন জনার। ছোটটার নাম টিনা। ভালোবাসায় আটখানা। রাতে একটু কানা। দিনে দেখে ষোলআনা। পাশাপাশি তিন বৌ আছে তিন ঘরে। টিনার ঘরে থাকে বুধবারে। আজ সেই বুধবার। টিনারে ডাকল চারবার। টিনা আছে ঘরে বসে চেয়ারে। ঢুকল কালাচাঁন। টিনা তখন গলাতে শান দেয়। বলল, ‘এহানে থাকপু না। আফনারে ভালোবাসা যায় না। আমারে লইয়া চলেন অন্যখানে। বাড়ি বানান থাকমু দুজনে।’ কালাচাঁন বলল, ‘আচ্ছা দেখতাছি কী করণ যায়। বাড়ি করমু তালে উত্তর পাড়ার ভিটায়।’

সে রাতে হলো কত জলপান। হয়নি এ পক্ষের কোনো পুলাপান। কালাচাঁন বলল, ‘র‌্যাত অনেক হইল আইসো এইবার শুতে। পানি নিইয়া আইস গ্লাসটাতে।’ টিনা হাতে হারিকেন নিয়ে। পানি ঢালল গ্লাসজুড়ে। হারিকেনের কেরোসিন ছিল কম। শুরু হলো বৃষ্টি ঝমঝম। টিনা এল হেঁটে হেঁটে হাতে পানির গ্লাস এঁটে। চৌকির কাছে আসতেই। হারিকেন নিভু নিভু বাতাসেই। বলল টিনা যেন সুরবীণা, ‘এই নেন পানি। বন্ধ করি দরজাখানি।’ কালাচাঁন সঙ্গে সঙ্গে, হাতখানা পেতে। বলল, ‘আচ্ছা দাও। বন্ধ করো জানালাও।’ গ্লাস গেল সড়কে। পানি কালাচাঁনের গায়ে পড়কে। জামা খুলল। তারস্বরে বলল, ‘হায় হায় এ কী করলা। লুঙ্গিও ভিজ্জা ফেললা।’ কালাচাঁনের কথায়, টিনা মুখ সাটায়। হাতের হারিকেন জ¦লছে টিমটিম। কালাচাঁন বলল করে ফিসফিস। ‘লুঙ্গিডাও ভিজ্জা দিলা এহুন পরমু কী? টুনটুনি আমার টিনা।’ স্বামীর কথনে টিনা বলল মিনমিনে।

‘একটা কাজ করবার পারেন। হামার কাচা শায়া পরেন।’ স্ত্রীর কথা শুনে, কান চুলকায় কালাচাঁনে। লুঙ্গি আছে বড় বউটার ঘরে। সেখানে কী এত রাতে যেতে পারে? তাই স্ত্রীর শায়া পরে ঘুমাল ঘরে। স্ত্রী হাসে মুচকি মুচকি। আবছা আবছা দেখে আর কী। সকাল হলে কালাচাঁনে— গা গোসলে পুকুরের টানে। লুঙ্গি নিয়ে গিয়েছে ঠিকই। শায়া যে পরে আছেই। পুকুরপাড়ে ছিল গোটা সাতেক। মুখ লুকিয়ে হাসে চাষা সাদেক। একে একে সবাই দেখে কালাচাঁন উঠে খেকে। বলে এভাবে দেখার কী আছে? আমার মাথাতে কী শিং বাহির হইছে। যত্তসব ফালতামু। এবার থামরে বাপু।’ তবুও থামে না লোকরা। চোখে মুখে হাসির ফোয়ারা। কালাচাঁন ভাবে, যারা আছে তারাও কি ভালো সবে। সবারই এক একটা আছে কাহিনি সাদেক তো অন্যের বউ ভাগায়নি। কালাচাঁন আর কথা না বলে। দ্রুত ছলে পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে চলে। সাঁতার কাটে শায়া পরে। অতঃপর পুকুরপাড়ে। মাথা নুয়ে। গা মোছে। লুঙ্গি আছে। কাপড় না ধুয়ে। আছে এখান হতে পালানোর উপায়ে। একজন মিঠেকড়া করে বলল, ‘কালাচাঁন ভাই শায়াডা ধুইয়া লইয়া যাও। ভালা না তোমার ভাও। বলো না কেন কথা। খাইয়াছ বুঝি লাজ-শরমের মাথা।’

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper