ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

জৌলুস হারাচ্ছে মৃৎশিল্প

কামরুজ্জামান তোতা, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ)
🕐 ১০:০৬ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ৩০, ২০২০

মা-মাটির এই দেশে মেলা বসলে মাটির তৈরি তৈজসপত্র, খেলনা, হাঁড়িপাতিল কেনেননি, এমন মানুষ মেলা দায়। সে সময় মাটির তৈরি জিনিসপত্রের কদর ছিল। এখন তেমন না থাকলেও থেমে যায়নি। তবে এখন আর নেই সেই জৌলুস। তৈরি হচ্ছে গ্রাম বাংলায়। আগের সেই জৌলুস না থাকলেও অনেকেই ধরে রেখেছেন ঐতিহ্যবাহী পেশা। তেমনই একজন দীপালী পাল। মায়ের পাশে বসে শখের বসে মাটি দিয়ে পাখি, ফল, খেলনা হাঁড়িপাতিল বানানো দিয়েই হাতেখড়ি হয় তার। বাবার ব্যবসা তখন বেশ ভালো। বাবার কাজে সহযোগিতা করতেন মা। পড়ালেখা শিখে শ্বশুরালয়ে এখন একই কাজে স্বামী সুদীপ পালকে সহযোগিতা করেন তিনি। বানান খেলনা, ফুলের টব, ফুলদানি, মাটির কলস, হাঁড়িপাতিলসহ নানা তৈজসপত্র।

ঝিনাইদহ কালিগঞ্জের শিবনগর, নিশ্চন্তপুর, অনুপমপুরে পাল বংশের লোক বাস করত। নদী তীরবর্তী দোআঁশ মাটির সহজলভ্যতা এবং পরিবহনের সুবিধার্থে মৃৎশিল্প স্থান করে নিয়েছিল এ এলাকায়। এখন নিম্নমানের প্লাস্টিক, মেলামাইন, সিলভারের ভিড়ে হারাতে বসেছে সেই ঐতিহ্যময় কারুকাজ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এই পেশায় নিয়োজিত পাল সম্প্রদায়ের মানুষ ৪০ থেকে ৫০টি পরিবার তাদের পূর্বপুরুষের এই পেশাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচার চেষ্টা করছে। শিবনগরে দিপালী পাল, নিশ্চন্তপুরের জীবন পাল, অনুপমপুরের সৌরভ এখনো কোনো মতে তাদের এই পেশা চালিয়ে যাচ্ছেন।

মৃৎশিল্পের তৈজসপত্র বিক্রেতা হাসিবুল হাসান পিকলু জানান, মৃৎশিল্পের তৈরি ব্যবহার্য পণ্যের এখন আর তেমন চাহিদা বাজারে নেই। শৌখিনতার বসে কেউ যদি ক্রয় করে, সেদিন সেটাই তার বিক্রি। তার সংগ্রহে দেখা যায়, দোকানে ৫০টিরও বেশি মাটির পণ্য। দীপালী রায় জানান, এসএসসি পাসের পর ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের কুলবর্তি গ্রাম শিবনগরে পারিবারিকভাবেই বিয়ে হয়। তারপর থেকে স্বামীর কাজে সহযোগিতা করছেন। তবে বাবার সময় মাটির জিনিসের যেমন চাহিদা ছিল, এখন ততটা নেই। এ পেশার সঙ্গে জড়িত অনেকেই জানান, বর্তমানে মৃৎশিল্পীদের এগিয়ে নেওয়া না গেলে এরাই হয়তো এ শিল্পের শেষ প্রজন্ম। তারা বলেন, এখনো বাজারে যে চাহিদা আছে, তা কম নয়। তবে প্রয়োজন নিত্যনতুন ভাবনা এবং বাজারজাত করতে নতুন পদ্ধতি অবলম্বন। এ দেশের মাটির পণ্যের চাহিদা বিদেশেও রয়েছে বলে তারা দাবি করেন। তবে প্রয়োজন সরকারের মনোযোগ। সরকার যদি এ খাতকে উৎসাহিত করে, তবেই তারা এগিয়ে যেতে পারবে বলে মনে করেন।

একজন জ্যেষ্ঠ মৃৎশিল্পী বলেন, আমাদের দেশে কৃষিখাতে নানা প্রণোদনা দেওয়া হয়। আর্টিসদেরও সহযোগিতা করা হয়। নানা ব্যবসায় লোন দেওয়া হয়। কিন্তু মৃৎশিল্পের দিকে তাকান, সব বুঝতে পারবেন। আমাদের বলার কিছুই নেই। তবে দাবি আছে। এ খাত খুবই সমৃদ্ধ। শুধু তাই নয়, ঐতিহ্যবাহীও। কিন্তু আমাদের দিকে কেউ তাকান না। তার সঙ্গে আরও অনেকে বলেন, অবহেলা আর অনাদরে থেকে থেকে আমাদের সন্তানরা আর এ পেশায় থাকতে চায় না। শিশু বয়স থেকে দৈন্যদশা দেখে তারা এখন অন্য পেশায় ঝুঁকছে। অথচ রাজধানীর উচ্চাভিলাসীদের বাসায়ও দেখবেন শোভা পাচ্ছে আমাদের কারুকাজ।

 
Electronic Paper