রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ম ভেঙে সান্ধ্য কোর্স
লাবু হক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
🕐 ৯:৫৮ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ৩০, ২০২০
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) দুই বছর ও এক বছর মেয়াদি সান্ধ্যকালীন এমবিএ প্রোগ্রামে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদভুক্ত বিভাগসমূহ। একাডেমিক কাউন্সিলে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তিচ্ছুদের ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার নিয়ম থাকলেও মানা হচ্ছে না সেই নিয়ম। কোনো ধরনের লিখিত পরীক্ষা ছাড়াই সরাসরি উপস্থিত হয়ে অথবা অনলাইনে মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে এসব প্রোগ্রামে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। অনলাইনে ক্লাস অনুষ্ঠিত হবে উল্লেখ করে সম্প্রতি আলাদা আলাদা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বিভাগসমূহ।
এ বিষয়ে ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ওহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ভর্তিচ্ছুদের অনলাইনে একটা মৌখিক পরীক্ষা নিচ্ছি। পাশাপাশি তাদের অতীত ফলাফল যেমন এসএসসি, এইচএসসি, অনার্স এবং যাদের মাস্টার্স আছে এসবের ওপর ভিত্তি করে ভর্তি নিচ্ছি।’ একাডেমিক কাউন্সিলের অনুমতি আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এর আগে একাডেমিক কাউন্সিলে সান্ধ্যকালীন এমবিএ প্রোগ্রামের বিষয়ে একটি কমিটি হয়েছিল। কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহাকে আহ্বায়ক করে একটি রিপোর্ট পেশ করা হয়। রিপোর্টে যথাযথ মান বজায় রেখে সান্ধ্যকালীন এমবিএ প্রোগ্রাম চালু রাখা যাবে বলে কমিটি মতামত দিয়েছিল।’ অধ্যাপক ওহিদুল আরও বলেন, ‘ফ্যাকাল্টি মিটিংয়ে অনুষদের ডিন আমাদের সম্মতি দিয়েছেন। ডিনের সম্মতি নিয়েই আমরা ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি।’
যদিও ডিন অধ্যাপক এম. হুমায়ুন কবীর বলছেন, ‘এ ধরনের লিখিত কোনো সম্মতি দেওয়া হয়নি। অনুষদের ডিন হিসেবে এ বিষয়টি আমার নলেজে নেই। তারা আমাকে বলেওনি। এ ধরনের কার্যক্রমগুলো বিভাগ তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্তে করছে। এ ব্যাপারে ডিন অফিসের কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা নেই।’
একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক সোলাইমান চৌধুরী বলেন, একাডেমিক কাউন্সিলের অর্ডিন্যান্সে পরিষ্কারভাবে বলা আছে, সান্ধ্যকালীন কোর্সে ভর্তিচ্ছুদের ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি করতে হবে। অর্ডিন্যান্সে পরিবর্তন আনতে গেলে আগে সে বিষয়ে ফ্যাকাল্টি মিটিং করার পর সেটা একাডেমিক কাউন্সিলে পাস হয়। সেক্ষেত্রে বর্তমানে ভর্তির ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে গেলে সেটাই করতে হবে। এটা কোনো বিভাগ বা অনুষদের একক সিদ্ধান্তে কখনই হতে পারে না।’ তবে ডিন অধ্যাপক হুমায়ুন জানান, ‘আমি বিভাগুলোর সভাপতিদের বলেছি সান্ধ্যকালীন কোর্স প্রসঙ্গে অফিসিয়ালি কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারব না। আপনারা করলে নিজ দায়িত্বে করবেন এবং এটা নিয়ে কথা বার্তা উঠলে তার ব্যাখ্যা আপনাদেরই দিতে হবে।’
এদিকে মার্কেটিং বিভাগের সভাপতি ড. মো. ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘অনলাইনে ভর্তি নেওয়া হবে না। পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করার পর তাদের পরীক্ষায় ডাকা হবে। যখন আমরা প্রোগ্রামটি চালু করব তখন তাদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য। এখন যারা আসছে তাদের একটি ফোন নম্বর দেওয়া হয়।’
ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস বলছেন, ‘অনুষদের অন্য বিভাগগুলো যেহেতু বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে সে জন্যই আমরা বিজ্ঞপ্তিটা দিয়েছি মাত্র। শিক্ষার্থীরা যাতে জানতে পারে আমরা প্রোগ্রামটা চালু রাখছি।’
তথ্য ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেও সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. মঈন উদ্দীন বলেন, ‘আমরা অফিসিয়ালি এখনো এ ধরনের কোনো বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করিনি।’ করোনা মহামারীতে বিশ^বিদ্যালয়ের নিয়মিত সব প্রোগ্রাম থমকে দাঁড়ালেও নতুন করে এসব প্রোগ্রামে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। বিষয়টিকে যথার্থ মনে করছেন না খোদ ডিনই। তিনি বলেন, ‘যেখানে আমরা করোনা ভাইরাসের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলো খুলতে পারছি না, ক্লাস পরীক্ষা নিতে পারছি না, মেইন প্রোগ্রামগুলো বন্ধ রাখছি; সেখানে এ ধরনের বাড়তি প্রোগ্রামগুলোকে ঠিক মনে করি না। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং ডিন অফিসও এই বিষয়গুলো নৈতিকভাবে সমর্থন করে না। যার ফলে প্রশাসন এবং ডিন অফিস এ বিষয়ে লিখিত কোনো নির্দেশনা দেয়নি।’