এক প্রকল্পেই নাভিশ্বাস
জে. জাহেদ, কর্ণফুলী (চট্টগ্রাম)
🕐 ৯:৩৫ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ৩০, ২০২০
চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে জনদুর্ভোগ কমাতে প্রায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা প্রশস্তসহ সেতু সংস্কারের মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। এ কাজে ইতিমধ্যে পেরিয়ে গেছে ১৯ মাস। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হতে বাকি আর সাত মাস। এই সময়কে সামনে রেখে ঢিমেতালে নিজেদের খেয়ালখুশিতে কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। রাস্তা প্রশস্তের কাজ এগিয়ে নিলেও তারা আটকে আছে চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের খোয়াজনগর খালের সেতুতে। এদিকে জনগুরুত্বপূর্ণ সেতু দুটির সংস্কারকে কেন্দ্র করে যানবাহন ও মানুষ যাতায়াতে রাখা হয়নি যথেষ্ট বিকল্প ব্যবস্থা। ফলে প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন যাত্রীরা। পাশাপাশি ব্যবসায়িক গুরুত্বপূর্ণ পণ্য পরিবহনেও নষ্ট হচ্ছে অতিরিক্ত সময়। অন্যদিকে ধুলো-বালিতে নাকাল হচ্ছেন এলাকার শিশু ও বৃদ্ধরা। বাড়ছে শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগ বালাই।
২০১৯ সালের মে মাসে প্রায় ৩৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে শুরু হয় চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার রাস্তা প্রশস্ত ও সেতু সংস্কার প্রকল্পের কাজ। সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয় ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। এই প্রকল্পে আওতায় উপজেলার মইজ্জ্যারটেক (বীর মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু) চত্বর থেকে পুরাতন ব্রিজঘাট ফেরিঘাট সড়ক-বিএফডিসি সড়ক-আরবান আলী সড়ক পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার রাস্তার কাজ ছিল। একই সঙ্গে ছিল সড়কে দুটি পুরাতন সেতু ভেঙে নতুন করে পাকা নির্মাণ করার কাজও। সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ৩২ মিটার ও ৩৬ মিটার, প্রস্থ ১০ দশমিক ২৫ মিটার।
জানা যায়, কার্যাদেশ পেয়ে জয়েন বেঞ্চে এ প্রকল্পের কাজ করছে তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান- রানা বিল্ডার্স প্রাইভেট লি., হাসান টেকনো বিল্ডার্স লি. ও সালেহ আহমেদ জে.বি। খোয়াজনগর এলাকার হাজী আব্দু শুক্কুর জানান, অনেকদিন ধরে রাস্তার কাজ চলছে, দুদিন কাজ হলে পাঁচদিনই বন্ধ থাকে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাদের ইচ্ছা মতো কাজ করে। ফলে নানা দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। শিক্ষার্থী তানভীর জানান, প্রায় দেড় বছরের বেশি সময় ধরে সেতুর কাজ চলছে, কিন্তু শেষ হচ্ছে না এর ফলে যাতায়াত করতে আমাদের খুব কষ্ট হয়। ধুলাবালিতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। কাজের গতি দেখে বোঝা যাচ্ছে না, কবে শেষ হবে। কর্ণফুলী এলাকার প্রকৌশলী মো. ইসমাইল হোসেন জানান, ‘সড়ক নির্মাণের সময় বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে জনপ্রতিনিধিদের দেখাশোনার দায়িত্ব থাকে। তাদেরই উচিত ঠিকাদারদের দিয়ে সবচেয়ে ভালো কাজটি আদায় করে নেওয়া। প্রয়োজন যথেষ্ট নজরদারির।’
এলাকাবাসী জানান, সেতু দুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অথচ সেতু সংস্কারের কাজ চলছে ঢিমেতালে। এদিকে সেতুর কাজ চলছে বলে পাশে স্টিল দিয়ে তৈরি করা বিকল্প সেতু খুবই সংকীর্ণ। এর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছে ভারী ট্রাক, বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা প্রভৃতি। তারা বলেন, প্রতিদিন মইজ্জ্যারটেক থেকে পুরাতন ব্রিজঘাট সড়ক দিয়ে উপজেলার বড়উঠান, শিকলবাহা, চরলক্ষ্যা ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে। কাজের ধীরগতি ও বিকল্প যাতায়াতে সামান্য ব্যবস্থা করায় নানা ভোগান্তিতে পড়ছেন তারা। আশপাশের এলাকার অনেকে অভিযোগ করেন, ধুলোবালিতে শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগ বেড়েছে।
দেখা যায়, বিকল্প পারাপার সংকীর্ণ থাকায় প্রায় দুই কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। সেই যানজটে দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে আশপাশের কারখানার পরিবহনগুলোকেও। এদিকে নারী, বৃদ্ধ, শিশুরাও যানবাহন মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছেন সেতু। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে।
জানতে চাইলে দোহাজারী সড়ক ও জনপদ বিভাগের পটিয়া উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সাফায়াত বিন রশিদ খোলা কাগজকে বলেন, ‘জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়কে সেতু দুটির কাজ সম্পন্ন করার জন্য আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চাপ দিচ্ছি যাতে দ্রুত কাজটি সম্পন্ন করে। আশা করি যথাসময়ে কাজ সম্পন্ন হবে।’