রহস্যময় ‘রক্ত নদী’
ডেস্ক রিপোর্ট
🕐 ১২:৩১ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৬, ২০২০
লাল রঙা পানি দেখে আপনি অবাক হবেন নিশ্চয়ই! পানির তো কোনো রঙ নেই তবে এই নদীটি দেখতে লাল রঙের কেন এ প্রশ্নটি সবার মনে! মনে হয় যেন রক্তের স্রোত বয়ে চলেছে! মঙ্গলগ্রহও তো লাল।
তবে বিজ্ঞানীদের মতে, সেখানে নেই কোনো সূর্যের আলো কিংবা অক্সিজেন। কখনো কি দেখেছেন বিশ্বের কোথাও লাল রঙা এমন নদীর অস্তিত্ব! শুধু একটি স্থানেই রয়েছে এমন অবিশ্বাস্য এক নদী। স্পেনের রিও টিন্টোতে গেলেই আপনি রক্ত লাল এই বহমান নদীটি দেখতে পারবেন।
৫৮ মাইল দীর্ঘ এই নদীর গভীরে নেই কোনো অক্সিজেন। অটোমোবাইল ব্যাটারি অ্যাসিডের মতোই সেখানকার পানির পিএইচ (২ দশমিক ৫) এর মাত্রা। এই পানিতে প্রচুর আয়রন রয়েছে। তবে অবাক করা বিষয় হলো, অত্যন্ত অম্ল পানি হওয়া সত্ত্বেও নদীতে জীব বসবাস করছে। ছত্রাক, অ্যামিবাস এবং শৈবালসহ শত শত প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ নদীর জীবনকে প্রাণবন্ত করে রেখেছে।
আকরিক খনি হিসেবে এই স্থানটির খননকার্য শুরু হয় অন্তত পাঁচ হাজার বছর পূর্বে। খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ সালে তারটিসান এবং ইবেরিয়ানরা খনির কাজ শুরু হয়। পরবের্তীতে ফোনিশিয়ান, গ্রিক, রোমান, ভিজিগোথ এবং মোরসরাও এই খননকাজে নিযুক্ত হয়। তামা, রূপা, সোনা এবং পরে আয়রন, ম্যাঙ্গানিজসহ নানান খনিজ পদার্থ উত্তোলিত হয় এ খনি থেকে।
১৫৫৬ সালে পুনরায় আবিষ্কৃত হয় এই খনিটি। অতঃপর স্প্যানিশ সরকার ১৭২৪ সালে পুনরায় এসব খনিজ পদার্থ উত্তোলন কার্য শুরু হয়। এরপর ১৯ শতকের দিকে যুক্তরাজ্য থেকে আসা বিভিন্ন সংস্থাগুলো এই স্থানে উত্তোলন কার্য চালায়। ১৯৩০ সালে এই স্থান থেকে সবচেয়ে বেশি সোনা, রূপা, তামাসহ খনিজ পদার্থ উত্তোলন করা হয়।
অতঃপর ১৯৮৬ সালে খনি থেকে তামা উত্তোলন বন্ধ হয়ে যায়। আর ১৯৯৬ সালে বন্ধ হয় সেখান থেকে রূপা ও সোনা উত্তোলন। ২০০১ সাল থেকে পুরোপুরিভাবে এই খনি থেকে উত্তোলন কার্য বন্ধ হয়ে যায়। ২০১০ সালের দিকে তামার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এই খনিটি পুনরায় চালু করার চেষ্টা করা হলেও তা আর সম্ভব হয়নি। কারণ সেখানকার পরিবেশ জটিলতা। ততদিনে স্থানটি নদীতে পরিণত হয়েছে।
স্পেনের দক্ষিণ পশ্চিম দিয়ে বয়ে যাওয়া এ নদীটির উৎস আন্দালুসিয়া পর্বতে। এই নদীর বিশেষত্ব হলো এর লালচে রঙ। তবে কেউই এই নদীতে ঝাপিয়ে পড়ে গোসল করার শখ পূরণ করতে পারবে না। কেননা এই নদীতে ডুব দিলেই মানুষ কঙ্কালে পরিণত হবে। এর কারণ পানিতে থাকা ফেরিক আয়রন। এই অ্যাসিডিক পানিতে বসবাসকারী এক্সট্রোফিল অ্যায়ারোবিক ব্যাকটেরিয়া বসবাস করে।