ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

চোখ যে মনের কথা বলে...

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান
🕐 ১১:৩৭ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২৬, ২০২০

চোখ যে মনের কথা বলে/ চোখে চোখ রাখা শুধু নয়...। গানের কথার মতো চোখ কথা বলে। কজনইবা চোখ দেখে তা বুঝতে পারে। চোখের ভাষা বুঝতে কে না চায়। প্রিয়তমার চোখ কত কিছুই না বলে। চোখের ভাষা বুঝতে হলে সবার আগে প্রয়োজন চোখের সুস্থতা। সুস্থ সবল চোখ হতে হবে। চোখের যত্ন নিতে হবে। আমরা অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের যেমন যত্ন নেই, চোখের তেমন কদর করি না। চোখে ঝাপসা দেখি। চোখ দিয়ে পানি পড়ে। অমনি ছুটি ডাক্তারের কাছে। চোখ যে কত মূল্যবান সম্পদ। তা যার চোখ নেই। পৃথিবীর আলো যার চোখ দেখে না। সেই কেবল বুঝতে পারে। চোখের যত্ন নেওয়া খুব সহজ। একটুখানি খাদ্যাভ্যাসকে ঢেলে সাজালেই হবে। আমরা কত কিছুই না খাই। এসব খাবারের মধ্যে কিছু খাবার চোখের জন্য উত্তম। চোখকে ভালো রাখে। চোখের যা প্রয়োজন তা সরবরাহ করে। এ খাবারগুলোকে একটু প্রাধান্য দিতে হবে। রুটিন করে পরিমিত খেতে হবে। ডব্লিউআইএনকে-এর উপদেষ্টা প্যানেলের নেতৃস্থানীয় অপ্টোমেট্রিস্ট, ফ্রানচেস্কা মারছেট্টি বলেছেন, ভিটামিন এ, সি, ই, অমেগা-৩ ফ্যাট এবং লুটিএন চোখের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ।

গাজর একটি সহজলভ্য সবজি। ছোট-বড় হাটবাজারে পাওয়া যায়। গাজরে আছে ভিটামিন এ। যা চোখের জন্য প্রয়োজন। প্রতিদিন একটি গাজর খাদ্য তালিকায় থাকতে পারে। কমলা আগে শুধু সিলেটের দিকে উৎপাদন হতো। এখন বিভিন্ন জায়গায় উৎপাদিত হয়। সারা বছর পাওয়া যায়। কমলাতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। এক গবেষণায় দেখা গেছে যেসব মহিলা গত ১০ বছর ধরে ভিটামিন সি’র ওষুধ নিচ্ছেন তাদের চোখের সমস্যায় পড়ার ঝুঁকি ৬৪ শতাংশ কমে গেছে। তাই প্রতিদিন অন্তত একটি কমলা খাবার চেষ্টা করুন। আম কে না পছন্দ করে! আম দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এক কাপ পরিমাণে আমে ৩৫ শতাংশ ভিটামিন এ রয়েছে। পেঁপের কথাই ধরা যাক। পেঁপে একদিকে কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে। অন্যদিকে এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, এনজাইম স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। দিনে যতটুকু ভিটামিন এ প্রয়োজন তার প্রায় ২৯ শতাংশ পাওয়া যায় পেঁপে থেকে। ডিম অত্যন্ত উপকারী স্বাস্থ্যকর একটি খাবার। প্রোটিনের ভালো উৎস। একটি ডিমে ৬ গ্রামের মতো প্রোটিন থাকে। ডিমের কুসুমে আছে লুটিন এবং যথেষ্ট পরিমাণে জিংক, যা চোখকে ‘মাসকুলার ডিজেনারেশন’ সমস্যা থেকে বাঁচায়।

মাছ এমন এক খাদ্য যা ডায়েটেও নিশ্চিন্তে খাওয়া যায়। শুধু তাই নয়। টুনা, ট্রাউট, তেলাপিয়া মাছে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাটি এসিড রয়েছে। যা চোখের রেটিনার জন্য অনেক উপকারী। খাদ্যতালিকায় মাছ রাখতে পারেন। বাদাম খেলে তা হজম হতে প্রায় তিন ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগে। বাদাম খেলে ত্বক সুন্দর হয়। আবার বাদামের ভিটামিন ই চোখের জন্য উপকারী। প্রতিদিন এক মুঠো বাদাম খেলে কোনো ক্ষতি নেই। টমেটোতে আছে লাইকোপিন। যা চোখের সমস্যা দূর করে। এছাড়া হলুদ, সবুজ, কমলা রঙের, অর্থাৎ গাজর, কমলা, পেঁপে, ক্যাপসিকাম, ভুট্টা ইত্যাদি বিভিন্ন রঙের ফলমূল ও শাকসবজি, যেগুলোয় ভিটামিন ‘এ’ আছে, এমন খাবার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন।

এতো গেল খাবার দিয়ে চোখের যত্ন নেওয়া। এছাড়াও আরও কিছু কাজ করা যেতে পারে। কাজের ফাঁকে কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ রাখুন। দূরে তাকান। পানি দিয়ে চোখ মুছে ফেলতে পারেন। চোখকে বিশ্রাম দিতে হবে। একটানা অনেকক্ষণ কম্পিউটার মনিটরে তাকিয়ে থাকা যাবে না। বারবার চোখের পলক ফেলুন। কম্পিউটারে কাজের ক্ষেত্রে ‘২০-২০-২০ রুল’ অবলম্বন করা উচিত। অর্থাৎ, প্রতি ২০ মিনিট পরপর ২০ সেকেন্ডের বিরতি নিতে হবে এবং বিরতি চলাকালীন কমপক্ষে ২০ ফুট দূরে তাকাতে হবে। ফলে চোখের বিশ্রামের পাশাপাশি ঘাড় ও পিঠের ব্যথা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়। আর পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে। ঘুম চোখকে বিশ্রাম দেয়। সাধারণত প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির ক্ষেত্রে কমপক্ষে দৈনিক ৬-৮ ঘণ্টা ঘুম ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম প্রয়োজন, তবে ব্যক্তির চাহিদা অনুযায়ী এর বিভিন্নতা দেখা যায়। কায়িক শ্রমের ক্ষেত্রে ৪৫ মিনিট বা ১ ঘণ্টা পরপর ১০-১৫ মিনিটের বিরতি নেওয়া উচিত। এতে শুধু চোখই নয়, বরং পুরো শরীরের বিশ্রাম হয়ে যায়।

অনেকের চোখের নিচে দাগ পড়ে। ব্যাপারটা অসুন্দর। কেউ হয়তো টিপ্পনি কেটে বলেই বসল, কী হয়েছে। তুমি রাতে ঘুমাও না বুঝি। প্রতিদিন, নিয়ম করে দিনে দুবার অর্গান বা সানফ্লাওয়ার ওয়েল নিয়মিত চোখের চারপাশে লাগালে, ত্বক কোমল ও আর্দ্র থাকবে এবং চোখের নিচে ফোলা ভাব ও কালো দাগ অনেকটাই কমে যাবে। রোজ রাতে ঘুমানোর সময় চোখের চারপাশে লাগিয়ে ঘুমালে চোখের নিচে কালো দাগ ও বলিরেখা অনেকটাই কমে যায়। ভিটামিন ই ক্যাপসুলটি যেকোনো ময়েশ্চারাইজারের সঙ্গে মিশিয়ে লাগানো যেতে পারে। এটি ব্যবহারে দ্রুত সুফল পাওয়া সম্ভব। বলিরেখামুক্ত চোখ চাইলে এসব করতে পারেন। খুব কাছ থেকে কম্পিউটার চালানো যাবে না। নিদেনপক্ষে কম্পিউটারের মনিটর থেকে চোখের দূরত্ব ৩ ফুট রাখবেন।

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান: কলাম লেখক
[email protected]

 
Electronic Paper