ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ভোটে চাঙ্গা বিএনপির তৃণমূল

মাহমুদুল হাসান
🕐 ৯:২৭ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২৬, ২০২০

তৃণমূলে স্থানীয় নির্বাচনের ডামাঢোল শুরু গেছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় সরব রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীরা। দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপিও পিছিয়ে নেই এ যাত্রায়। সদ্যসমাপ্ত উপ-নির্বাচনগুলোতে ব্যাপক ভরাডুবি হলেও স্থানীয় সরকার নির্বাচন ছাড়ছে না বিএনপি। ফলাফল যা-ই হোক দলটির টার্গেট তৃণমূলকে চাঙ্গা করা। সুষ্ঠু ভোট নিয়ে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে দলটির প্রশ্ন থাকলেও ফাঁকা মাঠে গোল দিতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা।

দলটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, নির্বাচনীয় প্রচারণায় নেমে জনগণের কাছে সরকার দুর্নীতির কথা তুলে ধারার একটা সুযোগ আছে। বিএনপি এ সুযোগটাই নিতে চায়। তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় একটা সুষ্ঠু নির্বাচন চায়- এ বার্তাটা মানুষকে জানাতে প্রচারণার সুযোগ ভালো একটা মাধ্যম। ফলাফল যা-ই হোক এটা বড় বিষয় নয়। দেশের মানুষ জানাতে পারবে বিএনপি নির্বাচনে মাঠে ছিল। দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্বতন্ত্র প্রতীক কিংবা দলীয় প্রতীকে স্থানীয় কোনো নির্বাচনই বর্জন করা হয়নি। স্থানীয় নির্বাচনে কীভাবে দলীয় প্রার্থী বাছাই করা হবে, তার নির্দেশনা ইতিমধ্যে তৃণমূলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত হলে নির্বাচন কমিশনে পাঠানো চিঠিতে আগের মতোই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরই স্বাক্ষর করবেন।

এদিকে দলীয় নির্দেশনা পেয়ে বিএনপির তৃণমূল ব্যাপক চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের অনেকেই মাঠে নেমে পড়েছেন। কয়েকটি পৌরসভায় স্থানীয় বিএনপি নেতারা একক প্রার্থী চূড়ান্ত করেছেন। অনেক এলাকায় ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রচার-প্রচারণাও শুরু করেছেন অনেকেই। কেউ কেউ কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে লবিং-তদবির শুরু করেছেন। তবে বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্তরা মনোনয়ন প্রার্থীদের খোঁজ-খবর নিয়েই প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন।

প্রসঙ্গত, প্রথম ধাপে ২৫টি পৌরসভায় নির্বাচনের জন্য গত রোববার তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এসব পৌরসভায় আগামী ২৮ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

জানা গেছে, বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে এবার দলীয় প্রার্থী নির্বাচন করা হচ্ছে। একক প্রার্থী বাছাইয়ে কোথাও এর কোনো ব্যত্যয় ঘটলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে কঠোর সিদ্ধান্ত রয়েছে। ফলে আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের নীতিমালা প্রণয়নও করেছে দলটি। সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যাপারেও আগেই থেকেই খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী একক প্রার্থী বাছাইয়ের কৌশল নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে আমাদের নতুন কোনো প্রত্যাশা নেই। ফলাফল কী হবে- সেটা সবাই জানেন। আমরা জনগণের কাছে যেতে চাই এবং সবাইকে জানাতে চাই- এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। তিনি বলেন, দলীয় সিদ্ধান্তেই আমরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যাচ্ছি। এখানে কোনো পরির্বতন আসেনি।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, আমরা নির্বাচনে আছি। নির্বাচন বর্জন করার নতুন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের কোনো আস্থা নেই। তারপরও আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি এজন্য যে, মানুষ দেখুক কী ধরনের নির্বাচন হচ্ছে!

দলের দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত ও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, কী প্রক্রিয়া দলীয় প্রার্থী বাছাই করতে হবে তার একটা নির্দেশনা তৃণমূলে পাঠানো হয়েছে। প্রার্থী বাছাইয়ের করে কেন্দ্রে পাঠনো হলে যাচাই-বাছাই করে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। মহাসচিব নির্বাচন কমিশনে দলীয় প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়ে চিঠিতে স্বাক্ষর করবেন।

উল্লেখ্য, বিএনপির নির্দেশনা অনুযায়ী, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে জেলা বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক অথবা আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব/১নং যুগ্ম আহ্বায়ক (দুজন), উপজেলা বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক অথবা আহ্বায়ক, সদস্য সচিব/১নং যুগ্ম আহ্বায়ক ও ২নং যুগ্ম আহ্বায়ক (তিনজন) আলোচনা সাপেক্ষে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের জন্য লিখিত সুপারিশ করবেন। আর পৌরসভার ক্ষেত্রে জেলা বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক অথবা আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব/১নং যুগ্ম আহ্বায়ক (দুজন), পৌরসভা বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক অথবা আহ্বায়ক, সদস্য সচিব/১নং যুগ্ম আহ্বায়ক ও ২নং যুগ্ম আহ্বায়ক (তিনজন) আলোচনা সাপেক্ষে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের জন্য লিখিত সুপারিশ করবেন।

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে জেলা বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক অথবা আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব/১নং যুগ্ম আহ্বায়ক (দুজন), ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক অথবা আহ্বায়ক, সদস্য সচিব/১নং যুগ্ম আহ্বায়ক ও ২নং যুগ্ম আহ্বায়ক (তিনজন) আলোচনা সাপেক্ষে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের জন্য লিখিত সুপারিশ করবেন। প্রতি স্তরেই সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর আবেদন জাতীয় পরিচয়পত্র এবং হালনাগাদ ভোটার তালিকাসহ মনোনয়ন দাখিলের শেষ তারিখের পাঁচ কার্যদিবস আগে চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে পাঠাতে হবে। এ নির্দেশনা মেনেই গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করছেন দলটির আগ্রহী প্রার্থীরা। তবে অনুরূপ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে জেলা বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকেও মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে পারবেন আগ্রাহী প্রার্থীরা।

প্রথম ধাপে ২৫ পৌরসভায় আগামী ২৮ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণের ঘোষিত তফসিল অনুযাযী, মনোনয়ন দাখিলের শেষ তারিখ ১ ডিসেম্বর, মনোনয়ন বাছাই ৩ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহার ১০ ডিসেম্বর। সব পৌরসভায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হবে।

 
Electronic Paper