ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

এনআইডির ১৮০৫ কোটি টাকার প্রকল্প চলবে ২০২৫ সাল পর্যন্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৭:৩৮ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৪, ২০২০

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ১০ হাজার ৭০২ কোটি ২৩ লাখ টাকা খরচে সাতটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এসব প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। এর মধ্যে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং একসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) (২য় পর্যায়)’ প্রকল্প রয়েছে। যার খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮০৫ কোটি ৯ লাখ টাকা। চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।

একনেকে পাস হওয়া আইডিইএ বা আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং একসেস টু সার্ভিসেস ২য় পর্যায় প্রকল্পের কার্যক্রম বাস্তবায়ন সংক্ষিপ্ত বিবরণ গণমাধ্যমে তুলে ধরেন জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম।

তিনি বলেন, নতুন ভোটার নিবন্ধন, স্থানান্তর, কর্তন, তথ্যের ভুল সংশোধন সংক্রান্ত কার্যক্রম বাস্তবায়ন এবং অধিকতর দক্ষতা ও স্বচ্ছতার সাথে নাগরিক সেবা প্রদান; ভোটার তালিকা প্রস্তুতকরণ এবং অনুর্ধ ১৮ (১০+) নাগরিকদের নিবন্ধনের জন্য গাইডলাইন প্রস্তুতকরণ ও কর্মপ্রক্রিয়া সুনির্দিষ্টকরণ; রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক ক্ষেত্রে সকল পরিসেবা যথাযথভাবে নিশ্চিত করার মাধ্যমে শান্তি শৃঙ্খলা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা, সরকারি সেবায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ; ডাটাসেন্টার (DC) এবং ডিজাস্টার রিকভারি সিস্টেম (DRS) এর সার্ভার, হার্ডওয়ার, কম্পিউটার সামগ্রী, ইকুইপমেন্ট ইত্যাদি বিগত ২০১১ সাল হতে ব্যবহার করা হচ্ছে যা পূরোনো হওয়ায় যন্ত্রপাতির কার্যক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে।

এ সকল ইকুইপমেন্টসমূহ প্রতিস্থাপন, আপগ্রেডেশন ও রক্ষণাবেক্ষণ সম্পন্ন না হলে রাষ্ট্রীয় গৃরুত্বপূর্ণ ডাটাসেন্টার হুমকির সম্মুখীন হবে এবং পরিচিতি সেবা ব্যহত হবে, বিধায় প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় সার্ভারের সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ নতুন ইকুইপমেন্ট সংগ্রহের পরিকল্পনা করা হয়েছে; ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত এবং নিবন্ধন যোগ্য সকল নাগরিকের ১০ আঙ্গুলের ছাপ ও আইরিশ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ, বায়োমেট্রিক ম্যাচিং সম্পন্ন করার মাধ্যমে দ্বৈততা পরিহারকরণ, খসড়া ও চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রস্তুতকরণ; নিবন্ধন, সংশোধন, স্থানান্তর জনিত দলিলাদি স্ক্যান করতঃ দলিলাদির হার্ড ও স্ক্যান কপি সংরক্ষণের জন্য ডাটা ওয়্যারহাউজ প্রস্তুত; আইডি কার্ডে ১০ ডিজিট বিশিষ্ট ইউনিক পরিচিতি নম্বর প্রদান করাসহ ইউনিক আইডি নম্বর বিভিন্ন সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে সংযুক্ত করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

জন্ম নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক একটি শিশুর জন্মের পরপরই তাকে এই ১০ ডিজিটের ইউনিক আইডি নম্বর প্রদান করা হবে। ফলে আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে শুধুমাত্র পরিচিতিই নয় বরং ব্যক্তির সামগ্রিক অধিকার রক্ষা ও আমৃত্যু সামাজিক সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করবে; তিন শতাধিক প্রতিষ্ঠানকে e-Kyc সেবা প্রদান এবং e-KYC কার্যক্রমে নির্ভরযোগ্য তথ্য হিসেবে এনআইডি ডাটাবেজের ব্যবহার অব্যাহত রাখা; প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিকদের দ্রুততম সময়ে নিবন্ধন, পরিচয়পত্র প্রদান এবং প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিকের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ সৃষ্টি; এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দুর্নীতি হ্রাস পাবে, রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক ক্ষেত্রে সকল পরিসেবা যথাযথভাবে নিশ্চিত হবে এবং সরকারি সেবায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে যা সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক ভূমিকা রাখবে; প্রকল্পটি যথযথভাবে বাস্তবায়িত হলে তা ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে মূল প্লাটফরম হিসেবে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এছাড়াও তিনি আইডিইএ প্রকল্প প্রকল্পে যেসব কার্যক্রম চলমান থাকবে সেগুলোর বিষযে বলেন, প্রকল্পের আওতায় ৯ কোটি নাগরিকের তথ্য ধারণ এবং ৪টি প্রতিষ্ঠানকে পরিচিতি যাচাই সেবা প্রদানে সক্ষমতা সম্পন্ন ডাটাসেন্টার, ডিজাস্টার রিকভারি সিস্টেম স্থাপনের লক্ষ্য নির্ধারিত থাকলেও বর্তমানে ১১ কোটি নিবন্ধিত নাগরিকের তথ্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে এবং এখন পর্যন্ত ১৩৭টি প্রতিষ্ঠানকে নিরবচ্ছিন্ন পরিচিতি যাচাই সেবা প্রদান করা হচ্ছে; প্রকল্পের আওতায় ৯ কোটি স্মার্ট কার্ড সংগ্রহ, পারসোনালাইজেশন ও বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ছিল।

বিদেশী কোম্পানীর ব্যর্থতা এবং রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় তথ্যভান্ডারের নিরাপত্তা বিবেচনায় নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্মার্ট কার্ড পারসোনালাইজেশন শুরু করা হয়। ইতোমধ্যে ৭.৭৩ কোটি স্মার্ট কার্ড পারসোনালাইজেশন করে বিতরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বিদেশী কোম্পানির পরিবর্তে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্মার্ট কার্ড উৎপাদন ও বিতরণের ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে দেশীয় প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা সৃষ্টি, নিজস্ব দক্ষ জনবল সৃষ্টি, আমদানির পরিবর্তে রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি এবং সরকারি অর্থের অপচয় রোধ সম্ভব হয়েছে; দেশব্যপী নির্বাচন কমিশনের মাঠ পর্যায়ের কার্যালয়সমূহে (৫১৯টি উপজেলা/থানা, ৬৪ জেলা ও ১০টি আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়) যথাযথভাবে ভিপিএন কানেক্টিভিটি প্রদান করা হয়েছে এবং দেশব্যাপী পরিচিতি সেবা বিকেন্দ্রীকরণসহ অনলাইন এনআইডি সেবা চালু করা হয়েছে; বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, ত্রাণ সহায়তাসহ ৫টি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর সুবিধাভোগী চিহ্নিতকরণে পরিচিতি যাচাই সেবার প্রচলন করা হয়েছে; জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ, মাঠ পর্যায়ের নির্বাচন কর্মকর্তা/কর্মচারী ও প্রকল্পের প্রায় ২ হাজার ২৪০ জন কর্মকর্তা/কর্মচারীকে প্রশিক্ষণ প্রদানের লক্ষমাত্রা নির্ধারিত থাকলেও প্রায় ৪ হাজার ২৬০ জনকে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষতার উন্নয়ন করা হয়েছে; বেতন নির্ধারণ, পেনশন প্রাপ্তি, টিআইএন নিবন্ধন, মোবাইল সিম নিবন্ধন/পুনঃ নিবন্ধন, বেওয়ারিশ লাশের পরিচিতি নির্ণয়, অপরাধী সনাক্তকরণের ক্ষেত্রে জাতীয় তথ্য ভাণ্ডার ব্যবহারের ফলে দ্বৈততা পরিহার ও ভূয়া সুবিধাভোগী চিহ্নিতকরণ সম্ভব হয়েছে।

এতে করে সামাজিক সমতা, সঠিক সুবিধা ভোগী নির্ধারণ ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অধিকতর উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে; দেশব্যপী এনআইডি সেবা বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগে অনুমোদিত ৭১ জন জনবল অত্যন্ত অপ্রতুল বিধায় প্রকল্পের ১ হাজার ৪৬৩ জন জনবলের সহায়তায় এ সেবা বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা হচ্ছে; এনআইডি উইংয়ের চলমান কার্যক্রম সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীতে স্বচ্ছতার সাথে সেবা প্রদান নিশ্চিতকরণ, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দুর্নীতি হ্রাস, সুশাসন আনয়নসহ সময়, শ্রম ও অর্থের অপচয় রোধ করছে। এছাড়াও, অনলাইন এনআইডি সেবা প্রচলনের মাধ্যমে নাগরিকের হাতের মুঠোয় সেবা পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয়েছে; জাতীয় তথ্যভাণ্ডার ব্যবহার করে নির্বাচনে ইভিএম এর মাধ্যমে ভোটগ্রহণসহ ডেটাবেজ ব্যবহার সংক্রান্ত উদ্যোগসমূহ ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানের মূল প্লাটফরম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের সকল নাগরিকের জন্য নিরাপদ, সঠিক ও নির্ভরযোগ্য জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবস্থা চালুকরণ, অধিকতর নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সম্বলিত জাতীয় পরিচয় পত্র প্রদান, ২টি সরকারি এবং ২টি বেসরকারি সংস্থাকে নতুন জাতীয় পরিচয় সনাক্তকারী ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে ২০১১ সালের জুলাই হতে ২০১৬ সালের জুন মেয়াদে নির্বাচন কমিশনের অধীনে আইডিইএ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পের জনবলের সহায়তায় দেশব্যাপী নির্বাচন কার্যালয়সমূহে নাগরিকদের পরিচিতি সেবা প্রদান, স্মার্ট কার্ড বিতরণ, নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার ইত্যাদি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

এছাড়াও প্রকল্পের জনবলের মাধ্যমেই ডাটাসেন্টার পরিচালনাসহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহকে পরিচিতি যাচাই সেবা প্রদান নিশ্চিত করা হচ্ছে। দেশব্যাপী পরিচিতি সেবা, স্মার্ট কার্ড বিতরণ ও প্রতিষ্ঠানসমূহকে প্রদেয় এনআইডি যাচাই সেবার গুরুত্ব বিবেচনা করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে বিভিন্ন পর্যায়ে আইডিইএ প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। প্রকল্পটি ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে সমাপ্ত হবে।

 
Electronic Paper