ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানো জরুরি

এহসান বিন মুজাহির
🕐 ১২:১০ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৪, ২০২০

দেশের বিভিন্ন স্থানে এখন শীত জেঁকে বসেছে। হিমশীতল কুয়াশার চাদরে ঢেকে যাচ্ছে দেশ। উত্তরাঞ্চলসহ অন্যান্য জেলাগুলোতে হিমেল হাওয়া এবং শীতের প্রচণ্ড দাপট ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন জেলায় যাওয়া তীব্র শৈত্যপ্রবাহের কারণে যেমন শীতের প্রকোপ বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে গরিব-দুঃখী মানুষের দুর্ভোগও। দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষের জন্য শীতকাল ভীষণ কষ্টের। খাবারের চেয়েও তাদের শীত নিবারণ অতীব প্রয়োজন হয়ে পড়ে। শৈত্যপ্রবাহের রুক্ষতা থেকে রক্ষা পাওয়ার ন্যূনতম ব্যবস্থাপনাও তাদের থাকে না। ফলে অসহায় ও হতদরিদ্রদের কষ্ট কেবল বেড়েই যায়। শীতজনিত কারণে ছড়িয়ে পড়ছে নানা অসুখ-বিসুখ। তীব্র শীতে বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ ও ছিন্নমূল মানুষের দুর্ভোগ অসহনীয় অবস্থায় পৌঁছায়। এ সময় বেড়ে যায় শীতজনিত রোগের প্রকোপ। বৃদ্ধ ও শিশুদের মধ্যে জ্বর, শ্বাসকষ্ট, সর্দি, কোল্ড ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়ে। ফুটপাত এবং খোলা আকাশের নিচে বসবাসকারীদের কষ্টের সীমা থাকে না। গরম কাপড় কেনার সামর্থ্য না থাকায় চা শ্রমিকসহ নিম্নআয়ের মানুষ ভীষণ কষ্টে দিনযাপন করছেন। বিভিন্ন স্থানে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন দরিদ্র মানুষ।

শীত নিবারণের পোশাক এবং কম্বল-কাঁথার অভাবে অভাবি মানুষের কষ্টের যেন শেষ নেই। হাড় কাঁপানো শীত গরিব মানুষের জীবনকে অসহনীয় অবস্থার দিকে ঠেলে দিয়েছে। এ শীতকাল গরিব-দুস্থ মানুষের জন্য ভীষণ কষ্টের। একবারও কি আমরা ভেবে দেখেছি- এ শীতে অসহায় গরিব বস্ত্রহীন কর্ম অক্ষম মানুষ কীভাবে রাত কাটাচ্ছেন? তাদের আমাদের মতো দামি গরম পোশাক তো দূরে থাকুক, সামান্য কাপড়টুকু নেই। ছোট ছোট বাচ্চারা এই তীব্র শীতে কত কষ্টে আছে। অনেকে এ শীত সহ্য করতে না পেরে মারাও যাচ্ছেন। শীত পোশাক ও কম্বল বিতরণের মাধ্যমে শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানোর সময় এখনই। শীতের প্রকোপ আরও বাড়ার আগেই সমাজের গরিব মানুষদের রক্ষায় উদ্যোগ নিতে হবে। হাড় কাঁপানো শীতের কবল থেকে শীতার্তদের রক্ষা করা এবং সামর্থ্যরে ভিত্তিতে সাহায্য-সহযোগিতার হাত প্রসারিত করা প্রত্যেক মানুষের নৈতিক দায়িত্ব। এটা অন্যতম একটি ইবাদতও। পবিত্র কোরআন কারিমে এরশাদ হয়েছে, ‘তাদের (বিত্তশালী) ধনসম্পদে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে’। (সূরা জারিয়াত : ১৯)। কোরআনে অন্যত্র এরশাদ হয়েছে, ‘তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি তথা তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে দরিদ্র, এতিম ও বন্দিদের খাদ্য দান করে’। (সুরা দাহর : ৮)। হযরত আবু সাঈদ (রা.) বলেন, হুজুর (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলমান অপর মুসলমানের বস্ত্রহীনতা ঢাকতে কাপড় দিলে আল্লাহপাক তাকে জান্নাতের সবুজ কাপড় পরাবেন’। (তিরমিজি : ২৮৩৫)। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘বান্দা যতক্ষণ তার ভাইকে সাহায্য করে, আল্লাহ ততক্ষণ বান্দাকে সাহায্য করে থাকেন’। (মুসলিম : ২১৪৮)। প্রিয়নবী (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে মুসলমান অপর কোনো মুসলমানকে বস্ত্রহীন অবস্থায় বস্ত্র দান করবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে সবুজ বর্ণের পোশাক পরাবেন, খাদ্য দান করলে তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন, পানি পান করালে জান্নাতের শরবত পান করাবেন’ (আবু দাউদ : ১৭৫২)।

রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে অপরের একটি প্রয়োজন মিটিয়ে দেবে, পরকালে আল্লাহ তার ১০০ টি প্রয়োজন পূরণ করে দেবেন এবং বান্দার দুঃখ-দুর্দশায় কেউ সহযোগিতার হাত বাড়ালে আল্লাহ তার প্রতি করুণার দৃষ্টি দেন’। (মুসলিম : ২৪১৯)। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব।

এহসান বিন মুজাহির : প্রিন্সিপাল
শ্রীমঙ্গল আইডিয়াল স্কুল, মৌলভীবাজার
[email protected]

 
Electronic Paper