সাইবার হামলার শঙ্কায় এটিএম বুথ
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৯:২৯ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২৩, ২০২০
দেশের ব্যাংকিং খাতে আবার সাইবার হামলার আশঙ্কা করা হচ্ছে। উত্তর কোরিয়ার একটি হ্যাকার গ্রুপ এই হামলা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে এ বিষয়ে সতর্কতা জারি করে সব ব্যাংকে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে গত বৃহস্পতিবার ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করে চিঠি দিলে এটিএম, কার্ড ও অনলাইন লেনদেনের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে দেশের ব্যাংকগুলো। একই সঙ্গে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছেন তারা। দুই-একটি ব্যাংক রাত ১১টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত এটিএম বুথ বন্ধ রাখছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন গ্রাহক। বিশেষ করে করোনার এ সময়ে চিকিৎসাসহ জরুরি কাজে রাতের বেলা যাদের নগদ অর্থের প্রয়োজন তারা পড়ছেন বিপাকে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়, উত্তর কোরিয়ার হ্যাকার গ্রুপ ‘বিগল বয়েজ’ ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে টাকা চুরির সঙ্গে জড়িত ছিল। তারা আবার বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলে ও সুইফট নেটওয়ার্কে হ্যাক করতে পারে। এর পরিপ্রেক্ষিতে অনলাইন ব্যাংকিং ব্যবস্থায় নিরাপত্তা বাড়িয়েছে ব্যাংকগুলো। রাষ্ট্রমালিকানাধীন রূপালী ব্যাংক রাত ১১টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত এটিএম বুথ বন্ধ করে দিয়েছে। অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস উল ইসলাম বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পাওয়ার পরই আমরা নিরাপত্তা বাড়িয়েছি। প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
তবে সরকারের কম্পিউটার ইনসিডেন্ড রেসপন্স টিম-সার্ট এর প্রকল্প পরিচালক তারেক এম বরকতউল্লাহ বলেন, ‘উত্তর কোরিয়ার কোনো হ্যাকার গ্রুপের সাইবার হামলার আশঙ্কার কোনো তথ্য এখনও আমাদের কাছে আসেনি। ‘কোস্টারিক্টো’ হ্যাকার গ্রুপের বিষয়ে আমাদের কাছে একটি এলার্ট এসেছে। এই এলার্টটি আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে দিয়েছি।’ সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একটি সাইবার নিরাপত্তা গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘কমপারিটেকের’ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাইবার নিরাপত্তায় বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান একেবারে নিচের সারিতে। সাইবার নিরাপত্তার দিক থেকে সবচাইতে ঝুঁকিতে থাকা দশটি দেশের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বের মোট ৬০টি দেশের ওপর জরিপ চালিয়ে ওই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ, ভারত, চীন, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর আর্থিক খাত সাইবার ঝুঁকির মুখে রয়েছে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) মনে করছে দেশে ৫০ শতাংশ ব্যাংক সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশ করা সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এখন পর্যন্ত দেশের ৫০ শতাংশ ব্যাংক তাদের সাইবার নিরাপত্তায় নেক্সট জেনারেশন ফায়ারওয়াল (এনজিএফডাব্লিউ) সফটওয়্যার স্থাপনে সক্ষম হয়েছে। এছাড়া ৩৫ শতাংশ ব্যাংকে আংশিক এবং ১৫ শতাংশ ব্যাংকে এটি স্থাপন অনুমোদন পর্যায়ে রয়েছে। ফলে আংশিক এবং অনুমোদন পর্যায়ে থাকা এ ৫০ শতাংশ ব্যাংকের সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে এবং যে কোনো সময় এগুলো সাইবার হামলার সম্মুখীন হতে পারে।