ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

মুক্তচিন্তা চর্চায় নারী সবসময় পিছিয়ে

ইলা লিপি
🕐 ১০:৫০ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২২, ২০২০

যারা কবিতা লেখে আই মিন কবি সবচেয়ে মুক্তচিন্তক। কবির সহজাত বোধ সবার চেয়ে আলাদা এবং অতিরিক্ত সেনসেটিভ। কারণ যেকোনো সম্পর্কে কবি যেমন সুন্দর খোঁজে তেমনি ফাঁকিবাজিও বুঝতে পারে। একজন কবি যদি মানুষের চোখের ভাষা হৃদয়ের কথা বুঝতে না পারে আর যাই হোক কবি হতে পারে না। কবিতা লিখতে গেলে প্রচুর সাহসের দরকার হয়। সামগ্রিকতা ধারণ করে তবেই কবিতার চিত্রায়ণ করতে পারে। কবি যেকোনো অন্যায় আবদারের নিকট নত হবে না এটাই স্বাভাবিক। কবির নিকট যা-কিছু সুন্দর, যা-কিছু বিসর্জনের সর্বসাধারণের নিকট সেটা গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে। কবির কণ্ঠস্বর সবসময় সত্যের পক্ষে গান গায়। আমি বিশ^াস করি, আমার আপাদমস্তক কবিত্বে মোড়া। যদি এটাই না হবে তবে অন্যের নিকট যা কিছু ভালো আমার নিকট সবই রহস্যে ঘেরা কেন? সৃষ্টির রহস্য, বিশ^াসের ধর্ম সবই কেন্দ্রীভূত সুবিস্তীর্ণ মেঘখণ্ডে পরিণত হয়, তারপর বৃষ্টি এবং মেঘমুক্ত আকাশ।

সম্প্রতি আমার ওপর প্রেসার সৃষ্টি হলো, লেখা ছেড়ে দেওয়ার জন্য। আমার সংসার টেকাতে গেলে লেখা ছাড়তে হবে। অথচ এদের কী করে বোঝাই একজন কবির নিকট স্থান কাল পাত্র কোনো কিছু ভেরিফাই করে না। সে চলে তার আপন গতিতে। গতিপথে যখন বাধা আসে, ইচ্ছে করে অথবা বাধ্য হয়ে গতিপথ পাল্টে ফেলে। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। আমি স্বনির্ভর একজন মানুষ। আমাকে সংসার, স্বামী অথবা কারও মন রক্ষা করে লেখার সংক্রমণ ব্যাধি আক্রান্ত করতে পারবে না। এটা সর্বজনের বোঝা উচিত। যে সম্পর্কে কমিটমেন্ট থাকবে, সেসব সম্পর্ক এভয়েড করব এটাও স্বাভাবিক। কবিদের নিকট আত্মীয় যেমন সংখ্যায় কম তেমনি দূরসম্পর্কের লোকজনের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করা বিরক্তির কারণ। এতে কবির সংসার টেকে না, ভালোবাসার সম্পর্ক ঠিকমতো গড়ে ওঠে না। যত অভিযোগের আঙুল ওই কবিতা ও কবির দিকে। এটাই হচ্ছে যুগে যুগে। আমাকে আমার সন্তানের ভবিষ্যতের দোহাই দেওয়া হলো, অথচ সন্তানদের যাবতীয় ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি।

তাহলে! তাদের লেখাপড়া দৈনন্দিন খরচের খাতা আমার। আমি কেন সমাজের রক্তচক্ষুকে ভয় পাব। আমার কর্মক্ষেত্র আমাকে নিয়ে সন্তুষ্ট। অতএব আমি নিজেকে সবসময় পারফেক্ট একজন মানুষ ভাবি। কাদের সঙ্গে মিশব, চলব-ফিরব সব একান্তই নিজস্ব ব্যাপার। তাহলে! সমাজ কেন আমাকে ভয় পাচ্ছে? আমি স্পষ্টবাদী! এটাই যদি আমার দোষ হয়ে থাকে তো গুণও আছে। আমি জানি, সমাজ আমাকে এভাবে দেখতে অভ্যস্ত নয়। হবেও না। তাতে আমার করার কী আছে। সমাজ নারীকে বরাবর সহানুভূতি দেখাতে পছন্দ করে, নারীকে দুর্বল ও অসুস্থ দেখতে পছন্দ করে সেখানে একজন নারী কবিত্ব করবে, স্বনির্ভর হয়ে দেশ ও গ-ির বাইরে নিজেকে নিয়ে বাঁচার স্বপ্ন দেখবে। এটা কেমন যেন লাগে। লাগারই কথা। বাংলাদেশের শতকরা নিরানব্বই ভাগ নারী লেখক সবসময় স্বামী সংসারের দিকে লক্ষ রেখে মূল লেখা কখনই লিখতে পারে না। মন্দ লাগার কথা লিখলে স্বামী সন্দেহ করে, সমাজ বদলের কথা লিখলে পরিবারের ফাটল ধরে, সংসার টেকে না। নারী এক অদৃশ্য শক্তির হাতে শৃঙ্খলায়িত। নারী আজও মুক্ত হতে পারেনি। কারণ নারী সবসময় মুক্তচিন্তাচর্চায় পেছনে থাকে। তার কারণ নারী কখনো একা থাকতে পারে না, একা একা পথ চলতে ভয় পায়, সবসময় কারও না কারও সহযোগিতা নিয়ে পথ চলে।

ইলা লিপি: বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকে কর্মরত
[email protected]

 
Electronic Paper