ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

অবৈধ সীসা কারখানার ভয়াবহ দূষণ

ইউসুফ আলী সুমন, মহাদেবপুর (নওগাঁ)
🕐 ১০:০৫ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২২, ২০২০

নওগাঁর মহাদেবপুরে ব্যাটারি পুড়িয়ে সীসা উৎপাদনে গড়ে উঠেছে অবৈধ কারখানা। আর সেই কারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় অতিষ্ঠ সেই এলাকার লোকজন। বিষাক্ত ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ায় শ্বাসকষ্টসহ দেখা দিয়েছে বিভিন্ন রোগ। মারা যাচ্ছে গবাদিপশু। নষ্ট হচ্ছে জমির ফসলও। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার খাজুর ইউনিয়নের শাহাজাতপুরে অবস্থিত মেসার্স হাজেরা রাইচ মিলের চারপাশে টিন দিয়ে ঘেরা সীসা কারখানা। কোনো সাইনবোর্ড না থাকলেও কাছে গেলেই বোঝা যায়; ভিতরে রয়েছে একটি সীসার কারখানা। এখানে পুরনো ব্যাটারি পুড়িয়ে সীসা উৎপাদনের কাজ চলে রাতের অন্ধকারে। এলাকাবাসী জানান, কারখানায় ধোঁয়ার কারণে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। জমির ঘাস খেয়ে এ পর্যন্ত চার কৃষকের ছয়টি গরু ও দুইটি ছাগল মারা গেছে।

শাহজাদপুর গ্রামের কৃষক মোবারক হোসেন জানান, ২০ দিন আগে মোটাতাজা করার জন্য ১৫ হাজার টাকা দিয়ে গরু কিনেছিলেন। গত ১২ নভেম্বর সকালে গরু ও ছাগল ওই কারখানার পাশে জমিতে ঘাস খেয়ে দুই ঘণ্টা পর মুখ দিয়ে ফেনা উঠতে থাকে এবং বাড়িতে আনার কিছুক্ষণ পর মারা যায়। শামসুদ্দিন বলেন, গত ১৬ নভেম্বর সকালে সীসা কারখানার পাশের জমিতে তিনটি গরুকে ঘাস খাওয়াতে নিয়ে যান। দুপুরে গরু বাড়িতে আনার পর মুখ দিয়ে ফেনা উঠে তিনটি গরুই মারা যায়। যার বাজারমূল্য প্রায় দেড় লাখ টাকা বলে জানান তিনি। স্থানীয় মুক্তি চন্দ্রা জানান, গত সপ্তাহের সোমবার তার একটি গরু ও ছাগল মারা গেছে কারখানার পাশের একটি জমির ঘাস খেয়ে। এর আগে ওই গরু-ছাগলের কোনো রোগ ছিল না। ঘাস খাওয়ার পর মুখে ফেনা ওঠে মারা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই এলাকার অনেকের মধ্যেই শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগ দেখা দিয়েছে।

খাজুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বেলাল বলেন, অবৈধভাবে ব্যাটারি গলিয়ে সীসা উৎপাদন হচ্ছে জানার পর ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার আরিফুল ইসলামকে সেই সীসা কারখানায় পাঠিয়েছিলাম। সেখানে যাওয়ার আগই কারখানার সবাই পালিয়ে যায়। আর যাদের গরু-ছাগল মারা গেছে তারা কেউই যোগাযোগ করেনি। তারপরও আমি খোঁজ নিয়ে বিষয়টি দেখবো।

বগুড়া সদরের বাসিন্দা সীসা কারখানার মালিক আরিফ হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমরা তো মাত্র চলতি মাসের শুরুর ৭ দিন ব্যাটারি গলিয়ে সীসা উৎপাদনের কাজ করেছি। পরে স্থানীয়দের নানা অভিযোগের কারণে কারখানা বন্ধ করে দিয়েছি। সীসা কারখানা চালানোর জন্য প্রশাসনিক অনুমতি ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেকেই তো নিয়মনীতির বাইরে এসব করছে।

সীসা কারখানাকে ভাড়া দেওয়া জমির মালিক হেমায়েত হোসেন ঝন্টু বলেন, গবাদিপশু মারা যাচ্ছে ও পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে এমন অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার ব্যাটারি গলানো বন্ধ করে দেই।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. মহির উদ্দিন বলেন, নওগাঁতে গরুর রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষাগার নেই। পাশের জেলা জয়পুরহাটে আছে। তবে জেনেছি- কিছুদিন আগে জেলার ধামুইরহাটে অবৈধভাবে ব্যাটারি গলিয়ে সীসা উৎপাদনের কারণে সেখানকার ধোঁয়া জমির ঘাসে মিশে বিষাক্ত হয়ে যাওয়ায় ঘাস খেয়ে গরু খেয়ে মারা গেছে।

এ বিষয়ে মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান মিলন জানান, অবৈধ সীসা কারখানার বিষয়ে জানা নেই। অভিযোগ পেলে অবশ্যই প্রযোজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 
Electronic Paper