নিভৃত রঙিন স্বপ্নচারী হিমাদ্রী
তোফায়েল পাপ্পু, শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার)
🕐 ১০:০৯ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ১৮, ২০২০
পেশায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক, নেশায় চিত্রশিল্পী। রঙের সঙ্গে যার বসবাস। তার তুলির ছোঁয়ায় জীবন্ত হয়ে ওঠে ছবি। এঁকেছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবিও। চাকরির পাশাপাশি আটপৌরে জীবনের কঠিন নিয়মের মধ্য থেকেই বের করে নেন সময়। রঙের ভুবনে ডুবে যান চায়ের রাজধানী-খ্যাত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার হিমাদ্রী লাল ধর।
অশিদ্রোন ইউনিয়নের রামনগর মণিপুরিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিমাদ্রী লাল ধর মনে রেখেছেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের সেই উক্তি, ‘এখন তো চারদিকে রুচির দুর্ভিক্ষ! একটা স্বাধীন দেশে সুচিন্তা আর সুরুচির দুর্ভিক্ষ! এই দুর্ভিক্ষের কোনো ছবি হয় না।’ সে কথা মাথায় রেখেই আঁকেন হিমাদ্রী।
অতি সম্প্রতি শ্রীমঙ্গলের চন্দ্রনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিনদিনব্যাপী প্রদর্শিত হয়েছে তার আঁকা বিভিন্ন চিত্রকর্ম।
জলরঙ, তেলরঙ, এক্রেলিক, স্কেচ ও মিশ্র মাধ্যমের ছবিতে নগর জীবনে ব্যস্ত শহরের বাস্তবতার প্রতিকৃতি, সাগর তীরের আছড়ে পড়া ঢেউ, আলো-আঁধারের অস্পষ্টতা, বৃষ্টির সৌন্দর্য, পাহাড়ের পাদদেশে প্রকৃতির মমতা, দূর আকাশের মেঘমালা আর মেঘে ঢাকা চন্দ্রালোকের নান্দনিকতার দৃশ্য ফুটে উঠেছে।
তিনি এঁকেছেন নারীর বঞ্চনা, একাকী জীবনের যাতনা, ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে অসাধারণ মেয়েলি চিত্রকর্মে সুন্দরী নারীর মুখশ্রীও রয়েছে।
ব্যক্তিগত জীবনে শ্রীমঙ্গল পৌর শহরের স্টেশন রোডে জন্মগ্রহণ করেন হিমাদ্রী লাল ধর। পিতা হিমাংশু ধর ও মাতা সাধনা ধরের বড় ছেলে তিনি।
২০০১ সালে সিলেটের মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজ থেকে অর্থনীতিতে সম্মানসহ স্নাতক এবং ২০০২ সালে একই কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। পরবর্তীতে ঢাকা আর্ট কলেজ হতে চারু ও কারু বিষয়ে বিএফএ (প্রি-ডিগ্রি) পরীক্ষায় সফলতার সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে বর্তমানে চাকরির ফাঁকে অবসর সময়ে শ্রীমঙ্গল চারুকলা একাডেমিতে শিক্ষকতা করছেন তিনি।
একজন নিভৃত রঙিন স্বপ্নচারী হিসেবে রঙের ফেরিওয়ালা হিমাদ্রী লাল ধর বলেন, ‘আমি এক গলিপথের শিল্পী। মেইন সড়কে উঠার দুঃসাহস কখনোই করিনি। শৈশবকাল থেকেই আমার কল্পনার ক্যানভাসে রূপসী বাংলার রঙিন ছবিগুলো মনের মতো করেই এঁকে চলেছি আজ অবধি।’
তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমিও চিত্রিত করি সময়কে। আমাদের সামাজিক অবক্ষয়, মাদক, ধর্ষণ, সন্ত্রাস, দুর্নীতি প্রতিরোধে শিল্পচর্চাই হতে পারে কার্যকর হাতিহার। তাছাড়া শিল্পচর্চা মানুষের মানবিক মূল্যবোধকে জাগ্রত করে এবং সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটায়। আমিও তার ব্যতিক্রম নই- সেই উত্তর দায়িত্ব পালনে কতটা পথ এগিয়ে এলাম সেটা বড় নয়, বরং আপামর জনসাধারণের সহযাত্রী হয়ে আমার সৃষ্টিকে প্রাণের দোসর করে আগামীর পথে চলব- চারুকলায় বসে এমন প্রত্যাশাই ব্যক্ত করেন তিনি।