ঢাকায় ঋণের জোগান জেলা থেকে
জেলায় আমানতের তুলনায় ঋণ গ্রহণের হার কম ঋণ বিতরণও ঢাকাতে বেশি
জাফর আহমদ
🕐 ১০:১৬ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ১৩, ২০২০
দেশের প্রশাসন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু হওয়ার কারণে সব কিছু ঢাকাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। এর প্রভাব পড়েছে আমানত ও বিনিয়োগে। ঢাকাতে ব্যাংক থেকে যে হারে আমানত সংগ্রহ হয় তার চেয়ে বেশি ঋণ ও অগ্রিম হিসেবে বিতরণ করা হয়। ঢাকার বাইরের বাড়তি আমানত রাজধানীর উদ্যোক্তারা ঋণ ও অগ্রিম হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, দেশের সব জেলায় আমানতের তুলনায় ঋণ গ্রহণের হার কম। ঢাকার বাইরে অবকাঠামো না থাকা, কাঁচামাল ও উৎপাদিত পণ্যের বাজার না পাওয়া। দক্ষ জনবল ও যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুকূলে না থাকার কারণে বিনিয়োগ ও বিপণন ঢাকাকে কেন্দ্র করে হয়ে থাকে। এ জন্য ঋণ বিতরণও ঢাকাতে বেশি হয়ে থাকে। এ কারণে জেলা ভেদে ঋণ বিতরণের হারের চেয়ে আমানতের হার দ্বিগুণ থেকে চারগুণ পর্যন্ত বেশি হয়ে থাকে।
তথ্য অনুযায়ী, শুধু ঢাকা জেলার আমানতের পরিমাণ ৬ লাখ ৬২ হাজার ২৭৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা। ঢাকা জেলার এক কোটি ৩৮ লাখ ৪০ হাজার ৮০৪ জন মানুষের প্রতিজনের আমানতের পরিমাণ ৪৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা। কিন্তু ঢাকার মানুষের মাথাপিছু ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ৪৮ কোটি ১০ লাখ টাকা। মাথাপিছু ৩ লাখ টাকা বেশি করে ঋণ গ্রহণ করেছে। ঢাকায় ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ৬ লাখ ৬৫ হাজার ৫৭১ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
অন্যদিকে রাজধানীর বাইরে চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোতে মাথা প্রতি আমানত প্রাপ্ত ঋণের দ্বিগুণ। খুলনা বিভাগের জেলাগুলোতে আড়াই গুণ। রাজশাহী বিভাগের জেলাগুলোতে আমানতের হার প্রায় দুই গুণ। সিলেট বিভাগের জেলাতে আমানত ঋণের দুই গুণের বেশি। বরিশাল, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের আমানত ঋণের দেড় গুণ ঋণ।
আগে স্কয়ারের কারখানা পাবনাতে ছিল। এখন পাবনার পাশাপাশি ঢাকাতে স্কয়ারের কারখানা ও অফিস চলে এসেছে। স্কয়ারের বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান-সেবা প্রতিষ্ঠান ঢাকাতে। আরএফএল শুরুতে রংপুরে শুরু করলেও এখন ঢাকায় করপোরেট অফিসসহ আশপাশের জেলাগুলো বড় বড় কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিআরবি কুষ্টিয়ার প্রতিষ্ঠান হলেও এখন ঢাকায়। বিআরবির বড় বড় প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি করপোরেট অফিসও এখন ঢাকাতে চলে এসেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক ঋণ নিশ্চই ঢাকাতে দেখানো হয়েছে। এসব কারণে ঢাকায় আমানতের তুলনায় ঋণের হার বেশি বলে মনে করেন পিআরএর নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। ঢাকায় যে বিনিয়োগ হয়, কর্মসংস্থা হয় তা শুধু ঢাকার মানুষের জন্য নয়। ঢাকাতে বা আশপাশে শিল্পপ্রতিষ্ঠান হলে সেখানে ঢাকার বাইরের মানুষগুলোই কাজ করে। ঢাকাতে ঋণ ও বিনিয়োগের হার বেশি হওয়া মানে ঢাকাতেই বিনিয়োগ, বণ্টন বা কর্মসংস্থান ঢাকাকেই হচ্ছে- তা নয়, সারা দেশের মানুষেরই কর্মসংস্থান হচ্ছে।
ঢাকায় এখন বাড়তি মানুষের চাপ। কর্মসংস্থানের পাশাপাশি নাগরিক সুবিধার কারণে মানুষ ঢাকামুখী হয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন ধরণের শিল্পকারখানা ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে উঠছে। বিশেষ করে কৃষিনির্ভর শিল্পকারখানা গড়ে উঠছে। প্রাণ-আরএফএল রংপুর থেকে ঢাকাতে এলেও আবার নাটোর ও নরসিংদীতে কারখানা প্রতিষ্ঠা করেছে। এভাবে ঢাকার বাইরে শিল্পকারখানা যাচ্ছে। সরকার ঢাকার বাইরে কর্মসংস্থানের জন্য ইপিজেড, বিশেষ শিল্পাঞ্চলসহ অবকাঠামো তৈরি করছে। আগামীতে এর হার আরও বাড়ছে। আগামীতে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি ঢাকার আমানত-ঋণের মতোই ঢাকার বাইরে জেলাগুলোর আমানত-ঋণ বিতরণের হার সমান হয়ে আসবে বলে মনে করছেন উদ্যোক্তারা।