ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

অলস টাকা বাড়ছে বেসরকারি ব্যাংকে

জাফর আহমদ
🕐 ৯:০৯ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ১২, ২০২০

করোনার কারণে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো দেখে-শুনে ঋণ দিচ্ছে। ঋণ দেওয়ার আগে বারবার চিন্তা করছে ঋণে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারবে নাকি নতুন খেলাপি তৈরি হবে, ঋণ ফেরত আসবে কিনা। সে কারণে ঋণ বিতরণ হার কমে গেছে। আর বেড়ে গেছে বিতরণযোগ্য অলস টাকা বা তারল্য। বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিতরণ ঋণ-চিত্রে এমন তথ্য মিলেছে।

জানা গেছে, সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের হার ৮০ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ৯ লাখ ২২ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা আমানতের বিপরীতে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে ৮ লাখ ১ হাজার ৬১২ কোটি টাকা। অন্যদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে ৫৯ দশমিক ১১ শতাংশ। রাষ্ট্রায়ত্ত এ সব ব্যাংকের মোট ৩ লাখ ২৮ হাজার ৯১৪ কোটি টাকা আমানতের বিপরীতে ১ লাখ ৯৮ হাজার ৩৮৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা বিতরণ করেছে। অন্যদিকে বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের হার ৫৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এ সব ব্যাংকের মোট ৬১ লাখ ১৬২ কোটি ৭০ লাখ টাকা আমানতের বিপরীতে বিতরণ করেছে ৩৪ হাজার ৮৬০ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। কোনো প্রচলিত ধারার (কনভেনশনাল) ব্যাংকের সংগৃহীত মোট আমানতের সর্বোচ্চ ৮৭ শতাংশ বিতরণ করতে পারে। বাকি টাকা বিধিবদ্ধ জমা হিসাবে জমা রাখতে হয়। অন্যদিকে ইসলামী ব্যাংকগুলো মোট আমানতের ৯২ শতাংশ বিতরণ করতে পারে।

বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর তথ্যে দেখা যায়, কনভেনশনাল ও ইসলামী ব্যাংকের মোট আমানতের গড় ৮০ দশমিক ৪৮ বিতরণ করেছে। অন্যদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিদেশি ব্যাংকগুলো যথাক্রমে ৫৯ দশমিক ১১ ও ৫৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ বিতরণ করেছে। গত এক বছরে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর আমানত বেড়েছে ১৩ শতাংশ। আর ঋণ বেড়েছে ১০ শতাংশ।

বর্তমান সরকার চলতি মেয়াদে ব্যাংকিং খাতের তারল্য সংকটের মুখোমুখি হয়। গ্রাহকের ঋণের চাহিদা থাকার পরও ব্যাংকগুলোর কাছে টাকা না থাকার কারণে ঋণ বিতরণ করতে পারছিল না। চাহিদার চেয়ে কম তারল্য থাকার কারণে ঋণের সুদ হারও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল। এ অবস্থা বিবেচনা করে মোট আমানতে বিতরণযোগ্য টাকা বা এডিআর বাড়িয়ে দেয়। আমানত বৃদ্ধিতে যুক্ত করে নতুন নতুন সুবিধা। এর ফলে ব্যাংকগুলোর তারল্য বেড়ে যায়। কিন্তু এর অব্যবহিত পরেই করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হলে নতুন করে বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে যায়। চলতি বছরের মার্চ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত এ অবস্থা চলমান আছে। ফলে বাংকগুলোতে তারল্য বেড়েই চলেছে।

ব্যাংকের মোট আমানতের (কনভেনশনাল ব্যাংকের হিসাবে) মধ্যে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বিতরণ করতে পারে ৮ লাখ ২ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা। কিন্তু নতুন বিনিয়োগ কমে যাওয়া, নির্ভরযোগ্য গ্রাহক না থাকা ও ব্যাংকগুলোর অতি হিসেবি হওয়ার কারণে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর বিতরণ করতে পারছে না। এ সব ব্যাংকের বিতরণযোগ্য টাকার পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৪২ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা। সে হিসেবে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে (ইসলামী ব্যাংকগুলোসহ) বিতরণযোগ্য অলস টাকার পরিমাণ প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা। বিপুল এ অলস টাকার মধ্যে সব ব্যাংকে সমান নয়। ছোট্ট ব্যাংক ও বিতরণ করতে না পারা ব্যাংকের তারল্যের মধ্যে তারতম্য রয়েছে। যে সব বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের হাতে বেশি নগদ অলস টাকা রয়েছে সে ব্যাংকগুলো হলো- ডাচ বাংলা ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, কমার্শিয়াল ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক এবং সীমান্ত ব্যাংকে।

আমানতের বিতরণযোগ্য অংশের টাকার বিতরণ করতে না পারার পাশাপাশি আমানতের চেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ ঘটনাও রয়েছে। ঋণ কেলেঙ্কারি ও অব্যবস্থাপনার শিকার বেসরকারি সাবেক ফারমার্স ব্যাংক ও বর্তমান পদ্মা ব্যাংক আমানতের চেয়ে বেশি টাকা বিতরণ করেছে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির আমানতের পরিমাণ ৪ হাজার ৭৮০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। কিন্তু বিতরণ করেছে ৫ হাজার ৫৬৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা। আবার খেলাপি ঋণের বোঝাও বেশি ব্যাংকটির। ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩ হাজার ৩০৯ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ৬৬ শতাংশ।

 
Electronic Paper