ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ

সহসাই হচ্ছে না পূর্ণাঙ্গ কমিটি

সালাহ উদ্দিন জসিম
🕐 ৯:৫১ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২৯, ২০২০

পদায়ন বিতর্কে ঝুলে আছে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি। দলের হাইকমান্ড থেকে একাধিকবার সংশোধন (সংযোজন-বিয়োজন) করে কমিটি দিতে বললেও আশানুরূপ সাড়া দিতে পারেননি নগরের দুই শাখার চার নেতা। যার কারণে সৃষ্ট জটিলতায় সহসাই অনুমোদন পাচ্ছে না ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। মহানগর নেতারা ‘কমিটি আওয়ামী লীগ সভাপতির দফতরে জমা দেওয়া হয়েছে, তার অনুমোদন পেলেই প্রকাশ হবে’, বলেই দায় সারছেন। জানা গেছে, এ বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দিয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফি ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির।

১৫ সেপ্টেম্বর পূর্ণাঙ্গ কমিটির প্রস্তাবনা জমা দিয়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি বজলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি। এ কমিটি সংশোধন (সংযোজন-বিয়োজন) করে জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় সভাপতি। পরে তারা কিছুটা সংশোধন করে জমা দিলেও আশানুরূপ না হওয়ায় অনুমোদন পায়নি।

দলীয় সূত্র মতে, কমিটি গঠনের প্রক্রিয়ায় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নিজস্ব বলয়কে প্রাধান্য দিয়েছেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণে সিনিয়র অনেককে বাদ দিয়ে বেশির ভাগ জুনিয়রকে পদায়ন করা হয়েছে। উত্তরে নতুন মুখের বেশির ভাগই ব্যবসায়ী নেতাকে পদায়ন করা হয়েছে। অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগও আছে। ব্যক্তিগত বলয় শক্ত রাখতে গত কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পাঁচ নেতাকে পদাবনতি দেওয়া হয়েছে। আনুপাতিক হারে রাখা হয়নি নারী নেতৃত্ব।

কমিটি গঠনের প্রক্রিয়ার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফি তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ছিলেন পুরান ঢাকার কাউন্সিলর ও বৃহত্তর সূত্রাপুর থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি। মহানগরের গত কমিটিতে (আবুল হাসনাত-শাহ আলম মুরাদ) ১নং সহ-সভাপতি করা হয় তাকে। যদিও সে কমিটির একটা অংশের বাইরে কারও সঙ্গে তার তেমন সখ্য নেই। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হওয়ার পর থেকে ওয়ারী ও আশপাশের এলাকার কিছু নেতা এবং বেশ কিছু সাবেক ছাত্রনেতা তাকে ঘিরে রাজনীতি শুরু করেছেন। সিনিয়ররা তার কাছে ভিড়েননি বা তিনিও গ্রহণ করেননি। যার কারণে কমিটিতে সাবেক ছাত্রনেতাদের প্রাধান্য দিয়েছেন তিনি।

এদিকে সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরও বৃহত্তর লালবাগ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বিভক্তি মহানগরের গত কমিটিতেও সহ-সভাপতি হয়েছিলেন। নানা কারণে সভাপতির কাছাকাছি না যেতে পেরে গত কমিটির বেশির ভাগ নেতাই তার কাছে ভিড়েছেন। তিনি তাদের একটা অংশকে রেখেছেন। সাবেক ছাত্রনেতাদেরও পদায়ন করেছেন। যার কারণে কমিটিতে সদ্য সাবেকসহ ছাত্রনেতাদের পদায়ন হয়েছে চোখে পড়ার মতো। তাছাড়া পদায়নে দেখা হয়নি সিনিয়র-জুনিয়র। সম্পাদকের সিনিয়রকে একই দফতরে উপ-সম্পাদক রাখা হয়েছে।

এছাড়ও গত কমিটির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতা বাদ পড়েছেন। অপরদিকে, ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি বজলুর রহমানও পুরনোদের প্রাধান্য দিয়েছেন। অপরপক্ষে সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি কিছু নতুন মুখ রাখলেও তাদের মধ্যে ব্যবসায়ীই বেশি। এছাড়াও তারা গত কমিটির পাঁচ নেতাকে পদাবনতি দিয়েছেন। এরা হলেন- সাবেক দফতর সম্পাদক এম সাইফুল্লাহ সাইফুল, সাবেক কৃষিবিষয়ক সম্পাদক এম এ এম রাজু আহমেদ, সাবেক শ্রম সম্পাদক বরকত খান, সাবেক শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক জাফর নিজামী ও সাবেক সহ-দফতর সম্পাদক শাহারুখ খান মিরাজ। এদের সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে।

এছাড়াও ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ দুই কমিটিতেই নারীদের তুলনামূলক কম পদায়ন করা হয়েছে। যে বিষয়টি আওয়ামী লীগ সভাপতি সব সময়ই দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকেন। এ জন্য নির্বাচন কমিশন থেকেও নির্দেশনা আছে।

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, দলীয় প্রধানের পক্ষ থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের প্রস্তাবিত কমিটির অন্তত ২০ জনের নাম বাদ দিতে বলা হয়েছে। অনেককে থানা, ওয়ার্ড হয়ে মহানগরে নিয়ে আসার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। পুরনো কমিটির নেতাদের রাখারও নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রধান। উত্তরের কমিটিতে যাদের বিষয়ে অভিযোগ আছে, তাদেরসহ বেশ কিছু অসংগতি দূর করে কমিটি দেওয়ারও নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। কিন্তু এসব নির্দেশনা প্রতিফলনে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক মতৈক্যে আসতে পারেননি। নিজের লোকদের রাখার ব্যাপারে কঠোর তারা।

এদিকে এসব নানা জটিলতা নিরসন করতে ব্যর্থ হওয়ায় আওয়ামী লীগের ভ্যানগার্ড খ্যাত ঢাকার এই দুই কমিটি ঝুলে গেছে। সহসায় প্রকাশে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। অসমর্থিত একটি সূত্র বলছে, দুই নগরে কমিটির জটিলতা নিরসনে দলের শীর্ষনেতাদের কয়েকজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আরেকটি সূত্র বলছে, সর্বশেষ অনুষ্ঠিত দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী বৈঠক থেকে গঠিত ঢাকা বিভাগের টিমই এ বিষয়টি সুরাহা করবে। ঘটনা যাই হোক বেশ ভালো সংকটে পড়েছে নগরের দুই কমিটি।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির খোলা কাগজকে বলেন, ‘আমাদের কমিটি আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে জমা আছে। অনুমোদন পেলেই প্রকাশ করা হবে।’

তিনি স্বীকার করেন, ‘কয়েকজনকে বাদ দিয়ে পুরনো কয়েকজনকে পদায়নের বিষয়ে নেত্রীর নির্দেশনা আছে। আমরা সেটা নিয়ে কাজ করছি।’ তবে দলের দায়িত্বপ্রাপ্তদের বাইরে সুনির্দিষ্ট করে কাউকে দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়টি তার নলেজে নেই বলেও জানান হুমায়ুন কবির।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ সভাপতি বজলুর রহমান বলেন, ‘আমরা সভানেত্রীর দফতরে নামের লিস্ট দিয়েছি। নেত্রী (শেখ হাসিনা) সবাইকে চেনেন, জানেন। তিনি কমিটি করে দেবেন।’

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, ‘ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটির অনুমোদন হয়নি। অনুমোদন হলে আমরা শাখা সভাপতি-সম্পাদকের কাছে হস্তান্তরের পাশাপাশি আপনাদেরও জানাব।’

তবে কমিটি গঠনে নেতাদের মতানৈক্যের বিষয়ে সর্বশেষ কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। বলেছেন, জেলা ও মহানগর পর্যায়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এক হতে না পারলে বা দ্বন্দ্ব হলে তাদের বাদ দিয়ে ১নং সহ-সভাপতি ও ১নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককে দায়িত্ব দেওয়া হবে। এ জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের কাজ করতেও বলেছেন। গেল ২৩ অক্টোবর ধানমন্ডিতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে মতবিনিময় করার সময় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নেত্রীর নির্দেশনা মনে করিয়ে দেন।

তিনি বলেন, সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এক না হলে আমরা সে নির্দেশনা বাস্তবায়ন করব না।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের নভেম্বরে ঢাকা মহানগরে নতুন কমিটি হয়। উত্তরে নেতৃত্বে আসেন বজলুর রহমান ও এসএম মান্নান কচি, দক্ষিণে আবু আহমেদ মন্নাফি ও হুমায়ুন কবির। মূলত এরাই পূর্ণাঙ্গ কমিটি (প্রস্তাবিত) জমা দিয়েছে কেন্দ্রে।

 
Electronic Paper