৫৫ বছর পর ফের উদ্যোগ
ডোমার (নীলফামারী) প্রতিনিধি
🕐 ৯:৪৭ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২৯, ২০২০
৫৫ বছর পর নীলফামারী চিলাহাটি রেলওয়ে স্টেশন থেকে ভারতের হলদিবাড়ীতে বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি ইঞ্জিন পৌঁছেছে। এর মধ্য দিয়ে চিলাহাটি-হলদিবাড়ী রেলপথে ট্রেন চলাচলের দ্বার খুলল। আগামী ডিসেম্বর থেকে পুরোদমে ট্রেন চলাচলের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসক ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিকে কেন্দ্র করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ লাইনে ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করবেন। এদিকে গত মঙ্গলবার পরীক্ষামূলক রেলইঞ্জিন চিলাহাটি থেকে সীমান্ত পার হলে নীলফামারীর ডোমার উপজেলার লোকজনের মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। ট্রেন চলাচল পুরোদমে চালু হলে এ এলাকার অর্থনৈতিক পটপরিবর্তিত হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর আগে গত ৮ অক্টোবর বেলা ১১টার দিকে নীলফামারীর চিলাহাটি সীমান্ত ছুঁয়ে গেছে ভারতীয় রেলওয়ের পরীক্ষামূলক ইঞ্জিন। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে রেলইঞ্জিনটি শূন্যরেখা ছুঁয়ে ফিরে যায়।
নীলফামারীর চিলাহাটি ও ভারতের হলদিবাড়ী রেলপথ সংযোগের স্থাপন কাজ শেষ করেছে দুই দেশ। রেলের পশ্চিমাঞ্চল জোনের প্রকল্প পরিচালক আব্দুর রহিম জানান, মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ দল ট্রেনের একটি ইঞ্জিন নিয়ে ভারতীয় সীমান্ত এলাকা ডাঙ্গাপাড়ার ৭৮২ মেইন পিলারের সাব পিলার-৭৮২/৩-এস পিলারের পাশ দিয়ে রওনা হন। নানা রঙে সাজানো রেলইঞ্জিনটি হুইসেল বাজাতে বাজাতে ভারতে প্রবেশ করে। এর আগে ফিতা কেটে নবনির্মিত ওই পথে পরীক্ষামূলক রেল চলাচল উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান চৌধুরী। এ সময় ভারতের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন উত্তর-পূর্ব রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী জেপি শিং, উপ-প্রধান প্রকৌশলী ভিকেমিনা, নির্বাহী প্রকৌশলী পিকেজে, ভারতীয় ডেপুটি চিফ ইঞ্জিনিয়ার সন্দ্বীপ কুমার, প্রকল্প পরিচালক তপন দাস প্রমুখ। বাংলাদেশের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন নীলফামারী ৫৬ বিজিবির লে. কর্নেল মামুনুল হক মামুন, বাংলাদেশ রেলওয়ের চিফ ইঞ্জিনিয়ার আল ফাত্তাহ মোহাম্মদ মাসউদুর রহমান, পাকশী ডিভিশনের প্রকল্প পরিচালক মো. আব্দুর রহিম এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স লিমিটেডের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।
এ সময় সীমান্ত এলাকায় উভয় দেশের কর্মকর্তারা মতবিনিময় করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘আশা করছি, আগামী বিজয় দিবসে পণ্যবাহী ও স্বাধীনতা দিবসে যাত্রীবাহী ট্রেন চলবে। হয়তো বিজয় দিবসে যাত্রীবাহী ট্রেনও চলতে পারে। এ বিষয়ে দুই দেশের কূটনৈতিক বিষয়গুলো যখন আলোচনা হবে, তখন নির্দেশনা আসবে।’ চিলাহাটি রেলপথ নির্মাণের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আবদুর রহিম বলেন, ‘দুই দেশের রেললাইন নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। ভারত চলতি মাসের ৮ অক্টোবর তাদের অংশে পরীক্ষামূলক রেলইঞ্জিন চালিয়েছে। আজ (মঙ্গলবার) আমরা রেল ইঞ্জিন সফলভাবে চালিয়েছি।’
রেলওয়ে সূত্রমতে, ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট পাক-ভারত বিভক্তের পরও এপথে রেল চলাচল চালু ছিল। সে সময়ে এ পথে দুই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলাচল করত যাত্রী ও মালবাহী ট্রেন। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের পর বন্ধ হয় দুই দেশের মধ্যে রেল চলাচল। পরিত্যক্ত রেলপথটি চালুর উদ্যোগ নেন শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি সরকার। রেলপথটি চালু করতে ৮০ কোটি ১৬ লাখ ৯৪ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নেয় বর্তমান সরকার। ২০১৯ সালের ২১ সেপ্টেম্বর চিলাহাটি রেলস্টেশন চত্বরে প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন রেলপথমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন।