ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

একদিন আলুর দিন

শফিক হাসান
🕐 ২:৩২ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৭, ২০২০

তমালের হাঁটা-চলা নাকি বেখাপ্পা, ঘনিষ্ঠজনদের এমন অভিযোগ পুরনো। নিজে যেহেতু তেমন কোনো আলামত পায় না, অভিযোগটাকে কথার কথা হিসেবেই ধরে রেখেছিল এদ্দিন। কিন্তু আজ কী হয়ে গেল আলুর বাচ্চার সঙ্গে! বাস ছেড়ে যাচ্ছে, এখনই হাঁটার গতি না বাড়ালে মিস হয়ে যাবে— এমন ভাবনা থেকে দৌড় দিল তুষার। হঠাৎ কে যেন বলে উঠল— ‘ওই ব্যাটা মানুষের বাচ্চা, দেখে হাঁটতে পারিস না!’

আশপাশে তাকিয়ে ‘সন্দেহজনক’ কাউকেই খুঁজে পেল না সে। তখন আবার কথা বলে উঠল কেউ একজন— ‘এত তাড়া কীসের? জানিস না, আলু এখন সবচেয়ে দামি ও সম্মানী সবজি। আর তার গায়েই জুতা তুলে দিলি!’ 

চোখে অবিশ্বাস নিয়ে সামনে তাকাল তুষার। একটা পিচ্চি আলু তুই-তোরাকি করে কথা বলছে! তুষার তাচ্ছিল্যের স্বরে জবাব দিল, ‘লাগলইবা একটু ধাক্কা! তাতে কি চামড়া খসে গেছে!’

‘তুই দেখছি আচ্ছা বেয়াদব হে! জানিস না, আলুর স্ট্যাটাস এখন উচ্চে উঠে পুচ্ছ তুলে নাচছে!’

‘সরি। ভুল হয়ে গেছে জনাব আলু।’

‘ঠিক আছে, বস। তোর সঙ্গে একটু গল্প করি।’

বাস যখন চলে গেছে, আপাতত কিছু করার নেই। এদিকে সময়ের সবচেয়ে দামি সবজি আলু মুখ ফুটে কথা বলছে এটাও ব্যতিক্রম বিষয়। দাম বাড়লে কি কথা বেড়ে যায়! একটা কাগজ টুকিয়ে নিয়ে সুবিধাজনক জায়গায় বসে পড়ল তুষার। আলুকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘মাছ-মাংসসহ স্বতন্ত্র তরকারিতেও আপনি অনন্য। অদ্বিতীয় ব্যবহার। আপনাকে এখন বাংলাদেশি বুদ্ধিজীবী বলতে পারি?’

তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে আলু বলল, ‘ওরে পাগলা, থাম। চাটুকার আর বুদ্ধিজীবী এক নয়। যাদের বুদ্ধিজীবী হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয় তারা আসলে আমারই সৎ ভাই। ওরা ধুরন্ধর ও পল্টিবাজ। পচে যাওয়া মাল।’

‘তাই নাকি! এবার নিশ্চয়ই মজুদদারদের পাশাপাশি পটেটো চিপস ব্যবসায়ীরাও দাম বাড়াবে!’

‘রেখেছ মানুষ করে, আলু করোনি! এত দূরে যেতে হবে কেন? বাজারের ব্যাগে আমার অস্তিত্ব খুঁজে পেলে রিকশাওয়ালারাও এখন বিশ টাকা বেশি ভাড়া হাঁকছে! তারা বোঝে, যে ব্যক্তি আলু কেনার সামর্থ্য রাখে, সে অবশ্যই ধনাঢ্য। আড়তে আলু বহনকারী ভ্যানচালকরা রাতে বাসায় ফিরে বউয়ের কাছে গল্প করে— আইজ আলু সাবের লগে দেখা অইল!’

‘আপনার পর্যবেক্ষণ ঠিক। মজুদদার ও কালোবাজারিদের পোয়াবারো-তেরো এখন!’

‘তারা সব দিক ম্যানেজ করেই ব্যবসা চালিয়ে যায়। অন্যদিকে সাধারণ মানুষের ঘরে দশ কেজি আলু পাওয়া গেলেও দুগুকি (দুর্নীতির গুষ্টি কিলাই) অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা নেবে। খতিয়ে দেখবে উপার্জনের উৎস সাদা কিনা। খুঁত পেলে ভূত বানিয়ে ছাড়ছে। গা বাঁচাতে কালো টাকার মালিকরা সংগৃহীত আলু ফেলে দেবে পুকুরে, রাস্তায়। এমন দিনও নাকি আসবে হয়তো!’

‘আলু সাহেব, আপনি অবশ্যই বুদ্ধিজীবী। নইলে ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছেন কীভাবে! এখন দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পরামর্শ দেবেন কি?’

‘আলু কিনবি না, তাহলেই তো হয়! বিকল্প পন্থাও আছে। রেলগাড়ি ঝমাঝম/ পা ফুলে আলুর দম... গানটা ঘনঘন গাইতে পারিস। তারপর নিজেদের মধ্যে লাত্থালাত্থি করে আলুর দম বানানো যেতে পারে। এটা খাওয়া যাবে না যদিও। তাতে কী, দুর্মূল্যের বাজারে আলুর দম দেখতে পারাও কম নয়। শুনতে পাই, এখন নাকি অনেকেই গুগল থেকে ছবি নামিয়ে বাসার দেয়ালে সেঁটে রাখছে। স্মৃতি রোমন্থন করছে— আলু একসময় তাদের পাতেও ছিল! বস্তাভরা আলু থাকত চৌকির নিচে।’

‘আগামীতে নিশ্চয়ই আপনি আরও এগিয়ে যাবেন। কেমন পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেন?’

‘অ-তে আলু, ই-তে আলু, ঈ-তে আলু, অ-তে আলু, আ-তে আলু, ই-তে আলু...। আলুর বাইরে অন্যকিছু চাই না। সবজির রাজা হবে আলু।’

‘ব্যাচেলররা এখন নিশ্চয়ই আপনাকে খুব মিস করছে? আলুর ভর্তা আর পাতলা ডাল যাদের রোজকার মেন্যু, তারাও!’

‘আলু সবাই খায়, দোষ হয় ব্যাচেলরের! প্রতিদিনকার রান্নাবান্নায় কার হেঁসেলে আলু থাকে না! আমিও চাই, সবাই আমার মূল্য বুঝুক। স্বপ্নের গান তারা এভাবে গাইতে শিখুক— একদিন আলুর দিন/ আসবে ফিরে সুদিন!’

‘তা মন্দ বলেননি। হিমাগার ছেড়ে বাইরে এলেন। কেমন লাগছে, অনুভূতি কী?’

তুষারের কথায় এবার ক্ষেপে গেল পিচ্চি আলু— ‘যেখানেই থাকি, আমি আলুই। হিমে থাকলে যা গরমে থাকলেও তা-ই। আইসক্রিমের মতো গলে যাই না!’
‘সরি। তবে আলুর ডালে আপনাকে নিয়ে মস্করা করা হয়। একশ্রেণির মানুষ খরচ বাঁচাতে এত তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে রান্না করে! দাম বৃদ্ধির উছিলায় এখন পেঁয়াজ-মরিচও কম দিচ্ছে।’

‘সব তাচ্ছিল্যের প্রতিশোধই নিচ্ছি রে এখন। যাক, তোর বাস এসে গেছে। উঠে পড়। আর আমাকে তোর পকেটে ভরে নে। কোনো জাদুঘরে পৌঁছে দিস। তারা সাজিয়ে রাখবে। ভবিষ্যতের লোকজন দেখবে সর্বোচ্চ দামি সবজিকে। হাজার হোক দামি সবজি হিসেবে আমি এখন রাস্তায় পড়ে থাকতে পারি না। প্রেস্টিজে বাড়ি খায়।’ পরামর্শমতো কাজ করল তুষার। কথা বলা আলুকে পকেটে পুরে একধরনের গর্ব অনুভব করল। অজান্তেই মুখ ফুটে বেরিয়ে এল গানÑ জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো...।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper