ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

আলুর পুনঃনির্ধারিত দাম মানছেন না বিক্রেতারা

ফাহিয়ান হামিম
🕐 ১১:২৭ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২৭, ২০২০

চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত আলুর মজুদ, তবুও লাগাম পড়ছে না দরে। সপ্তাহ দুয়েক আগে আলুর দাম নির্ধারণ করে দিলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন বিভিন্ন স্তরের আলু ব্যবসায়ীরা। সে সময় টিসিবি পণ্য হিসেবে সরকার ২৫ টাকা দরে রাজধানীর কয়েকটি পয়েন্টে আলু বিক্রি শুরু করে। বিভিন্ন স্থানের পাইকারি বাজার ও কোল্ড স্টোরেজে চলে অভিযান। করা হয় জরিমানা। এতে বিক্ষুব্ধ আলু ব্যবসায়ীরা কারওয়ানবাজারে আলু বিক্রি বন্ধ করে দেন। ফলে ফের নির্ধারণ হয় দাম। তিন স্তরে কেজিতে বাড়ানো হয় ৫ টাকা।

এর আগে খুচরা বাজারে আলুর নির্ধারিত দাম ছিল ৩০ টাকা। এখন পুনঃনির্ধারিত দামও মানছেন না বিক্রেতারা। হিমাগারে আলুর দাম কম থাকলেও দুদিনের ব্যবধানে আবারও বেড়েছে খুচরা বাজারে, কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। এদিকে সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে কমবে না আলুর দাম, বলছেন ভোক্তারা। অন্যদিকে হিমাগারে চলছে গোপন আঁতাত, বলে রয়েছে অভিযোগ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসাব মতে, এ বছর আলু উৎপাদিত হয়েছে এক কোটি ৯ লাখ টন। সংস্থাটির হিসাবে দেশে বছরে আলুর চাহিদা ৭৭ লাখ টন। আর বীজ আলু হিসেবে আরও ২০ টন আলুর প্রয়োজন হয়। প্রতি কেজি আলু উৎপাদনের খরচ পড়েছে ৮ টাকা ৪০ পয়সা। তবে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের হিসাব মতে, চলতি বছর ৮৫ লাখ টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। তাদের হিমাগারগুলোতে বর্তমানে আলু রয়েছে ৪০ লাখ টন। এর মধ্যে ১৫ লাখ টন বীজ আলু। মাসে দেশে আলুর প্রয়োজন হয় ৮ লাখ টন। এক জয়পুরহাটেই হিমাগারগুলোতে রক্ষিত আছে প্রায় ৪৪ হাজার মেট্রিক টন আলু। এরপরও সেখানের খুচরা বাজারেও কমেনি আলুর দাম। যদিও এরই মধ্যে বীজ আলু আছে ২৮ হাজার মেট্রিক টন। আর এই বীজ আলু বিক্রিযোগ্য নয়, পরের চাষের জন্য সংরক্ষিত।

সরকারের বেঁধে দেওয়া প্রথম দামের ক্ষেত্রে কৃষি বিপণন অধিদফতরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ বলেছিলেন, ‘কৃষকরা এ বছর ১০ থেকে ১২ টাকা কেজি ধরে আলু বিক্রি করেছে। কয়েক হাত ঘুরে হিমাগারে রাখার খরচসহ হিসাব কষলে তা কোনোভাবেই ২০ টাকার বেশি হয় না।’ হিমাগার সমিতির সভাপতি মো. মোশাররফ হোসেনের অভিযোগ, সরকার থেকে আলুর উৎপাদন যত দেখানো হয়েছে মূলত গত দুই বছর ধরে তার চেয়ে অনেক কম উৎপাদিত হয়েছে।

এ সময় কয়েকটি কারণে কৃষকরা লোকসানের মুখোমুখি হয়েছিলেন, অনেক আলু নষ্ট হয়েছে। আর ভোক্তাদের অভিযোগ, হিমাগারে নতুন দাম বাইরে ঝুলিয়ে রাখলেও গোপনে ৩০ থেকে ৩৩ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরা মূল্য আলুর জাত ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত। এ অবস্থায় আলু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে আলুর দর বাড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ সাধারণ ভোক্তাদের।

রাজধানীর মতিঝিল টিঅ্যান্ডটি বাজার, কমলাপুর, ফকিরাপুল, খিলগাঁও, মালিবাগ, মালিবাগ রেলগেট বাজার, রামপুরা, মগবাজার ও কারওয়ান বাজারের খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলু ৫০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। তুলনামূলক ছোট ও দাগ আলু একত্রে বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা কেজিতে। পাশাপাশি বৃদ্ধি পেয়েছে অন্যান্য সবজির দামও। এতে দরিদ্র, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তের বাজার করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। রেকর্ড পরিমাণ আলু উপাদনের জেলা হিসেবে পরিচিত জয়পুরহাটের পাইকারি এবং খুচরা বাজারগুলোতে মানভেদে ৪৫-৫০ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হচ্ছে। এতো চড়া মূল্যে এর আগে কখনো আলু বিক্রি হয়নি এই জেলাতে।

হিমাার মালিকরা বলছেন, তারা সরকার নির্ধারিত দামেই আলু বিক্রি করছেন। খুচরা ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। তবে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি বাজারে আলুর দাম অনেক বেশি। প্রতি বস্তায় ৫ কেজি আলু নষ্ট (কাটা ও পচা) হয়, পরিবহন ভাড়া, লেবার খরচ রয়েছে। এক্ষেত্রে দাম কমানো না হলে আমরা কম মূল্যে আলু দিতে পারব না।

বিক্রমপুর বাণিজ্যলয় ও আড়তদার ব্যবসায়ী হানিফ বলেন, ‘আমাদের মূল সমস্যা তৈরি করছে হিমাগার। সেখান থেকে ন্যায্যমূল্যে আলু ছাড়া হয় না। আমার আড়তে ৩৫ টাকায় আলু এসেছে, এখন আমি কত টাকায় বিক্রি করব বলেন? এরপরও লোকসান দিয়ে ৩০ থেকে ৩২ টাকার মধ্যে আলু ছেড়ে দিই, বিক্রি করতে হবে তাই।’

নিত্যপণ্যের লাগামহীন দাম বিষয়ে দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান ও কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘নিত্যপণ্যের লাগামহীন দাম নিয়ন্ত্রণে আসুক, এটা সব ভোক্তা চায়। তবে দাম কেন কমছে না এটা সবাই জেনেছেন। এ বিষয়ে সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে তবেই দাম কমবে আলু, পেঁয়াজসহ অন্য পণ্যের।’

 
Electronic Paper