ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

শিক্ষা ও শিক্ষকের বিষয় ভাবনায় থাকুক

সাঈদ চৌধুরী
🕐 ১২:০৬ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৬, ২০২০

একজন শিক্ষক যিনি কিনা বেসরকারি কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন এখনকার বাজারে কীভাবে তার দিন কাটছে? বিভিন্ন পণ্যের বাজারদর থেকে শুরু করে যখন পুরো অর্থনীতির নিম্নগামী তখন কোনো ধরনের আয় ছাড়া চলা যে কত কষ্টের তা কেবল ভুক্তভোগীরাই জানে! গত সাত থেকে আট মাসে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে। অর্থনীতি ঝিমিয়ে চলেও গতি রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। সরকারও চেষ্টা করছে। কিন্তু এর মধ্যেও অনেকগুলো বিষয় কিন্তু ভাবনার আড়ালে থেকে গেছে।

 

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই। এতে সমস্যা আছে সেটাও সত্য। কিন্তু সরকারি ব্যতীত যারা শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে জীবন চলমান রাখতেন তাদের দৈন্য ও অনেক করুণ প্রতিচ্ছবি ভেসে আসছে। যে ছেলেটি টিউশনি করে মায়ের ওষুধ কিনত সে এখন কী করে নিজের খাবার জোটাচ্ছে? এত ব্যস্ততার ভিড়ে সে খবর কি আমরা রাখতে পারছি? তেমনি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনও গেছে পুরোপুরি থমকে। মোবাইল ফোনের আসক্তি চলে এসেছে শিশুদের মধ্যে, পড়াশোনায় মনোযোগ কমতে থাকছে প্রতিনিয়ত। শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ অনলাইন ক্লাস করতে পারলেও তাদের মোবাইল আসক্তির ফলে আরও বেড়েছে। অনৈতিকতার চর্চা বাড়বে এর ফলে নিঃসন্দেহে। তাহলে একদিকে শিক্ষকদের জীবিকা অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের নৈতিক অবক্ষয়ের আশঙ্কা, আরেকটি দিকে হলো শিক্ষায় অপরিপক্বতা।

সব মিলিয়ে করোনা আমাদের কাছ থেকে যা নিয়ে যাচ্ছে সেটা অপূরণীয় হয়েই থাকবে। তবুও কিছু বিষয় তো ভাবতে হবেই। এবং সেটা রাষ্ট্রযন্ত্র থেকেই ভাবতে হবে। সেটা যেমন সরকারি পর্যায়ের শিক্ষকদের কথা তেমনি বেসরকারি পর্যায়ের শিক্ষকদের কথাও। শিক্ষা নিয়ে গবেষণার জায়গা আরও বাড়াতে হবে। এইচএসসি পরীক্ষা পুরোপুরি বাদ না দিয়ে মূল্যায়নে টেস্ট এবং প্রথম বর্ষের পরীক্ষা মূল্যায়ন করে পাস দেওয়া যেতে পারত। অথবা দুই পরীক্ষার গড় নম্বরের সঙ্গে মোবাইল ফোনে বিষয়ভিত্তিক ভাইবা পরীক্ষা নিয়ে মূল্যায়নের ব্যবস্থাও করা যেত। এন্ড্রয়েড ফোন না থাকলেও সবারই সাধারণ মোবাইল ফোন আছেই। সব বিষয়ে এভাবে দশ মিনিট করে ভাইবা নিয়ে মূল্যায়ন করলেও সবাইকে এভাবে পাস দিতে হতো না। এভাবে সব শিক্ষার্থী পাসের ফলে একটি সময় গিয়ে চাপ বাড়বে। মেধার ক্ষেত্রেও এদের যথেষ্ট মূল্যায়ন হলো না।

মাধ্যমিকের সব ছাত্র-ছাত্রীকেও কোনো পরীক্ষা ছাড়াই পাস দেওয়ার ব্যাপারে কথা বললেন মন্ত্রী। এ্যাসাইনমেন্টের ব্যাপারটি ভালো লেগেছে। এর সঙ্গে আরেকটি কাজ করা যেতে পারত। প্রতিটি স্কুল অন্তত দুটি করে সৃজনশীল প্রশ্ন প্রণয়ন করে দিয়ে উত্তর চাইতে পারত। বই সামনে থাকলে শিক্ষার্থীরা কতটুকু পারদর্শিতার সঙ্গে উত্তর করতে পারে সেটা দেখাও যাচাইয়ের মধ্যেই পরে। তবে প্রশ্ন প্রণয়ন হতে হবে নিজেদের বিদ্যালয় থেকে। যে প্রশ্নগুলো মিলবে না কোনো নোটগাইড বইয়ের সঙ্গে। বিষয়গুলো সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ভেবে দেখতে পারে। এতে করে শিক্ষার চলমানতা যেমন থাকবে তেমনি আমরা মেধার কিছুটা হলেও পরীক্ষা নিতে পারব।

সাঈদ চৌধুরী : রসায়নবিদ ও কলাম লেখক

 
Electronic Paper