সড়ক অচলের নির্দেশ ছিল সেই রাতে
মাহমুদুল হাসান
🕐 ১০:১১ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২৫, ২০২০
শুধু বক্তব্য কিংবা বিবৃতির মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে এবার দলীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নের দিকে যেতে চায় বিএনপি। ফলে যে কোনো সময় ‘হার্ডলাইনে’ যেতে পারে দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব। এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে সদ্য সমাপ্ত ঢাকা-৫ আসনে উপনির্বাচন থেকে। নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে ভোটে অনিয়ম হলে সেই রাতেই ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অচলের ঘোষণা দেন দলের এক শীর্ষ নেতা। তার দেওয়া এমন ঘোষণায় ভোটগ্রহণ শেষে রাতেই বাস্তবায়নের কঠোর নির্দেশনা আসে। কিন্তু কমিশনের বিধিনিষেধের বেড়াজালে শেষ পর্যন্ত পিছু হটেন ধানের শীষের প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমেদ।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-৫ আসনে উপনির্বাচন থেকেই রাজপথে ঘুরে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা নেয় বিএনপি। সেভাবেই দলীয় পরিকল্পনাও করা হয়। মনোনয়ন দেওয়া হয় দলের এক প্রবীণ সদস্যকে। ঘোষণা দেওয়া হয়, নির্বাচনে কোনো অনিয়ম হলে এখান থেকেই সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হবে। এই নিয়ে দলের হাইকমান্ডেরও সম্মতি ছিল। ভোটের দিন বিএনপির হাইকমান্ডের নজর ছিল ঢাকা-৫ আসনে।
দিন শেষে ভোট প্রত্যাখ্যান করে নতুন ভোট দাবি করলেও দলের সিনিয়র নেতারা সন্তুষ্ট হতে পারেনি। আগের ঘোষণা অনুযায়ী রাতেই সালাহউদ্দিনকে নির্দেশ দেওয়া হয়, ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অচল করে দেওয়ার জন্য। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আচরণবিধি নিয়ে সমঝোতা থাকায় সালাহউদ্দিন ও তার ছেলে ঢাকা মহানগর বিএনপি দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক তানভীর আহমেদ রবিন এতে সায় দেননি।
এদিকে দলের কেউ কেউ অভিযোগ করেন- সালাহউদ্দিনকে বিপদে ফেলার জন্য ভবিষ্যৎ চিন্তা না করেই এমন কর্মসূচি পালনের কথা বলা হয়। কর্মসূচি বাস্তবায়নে আগে থেকে কোনো পরিকল্পনার কথাও তাদের জানানো হয়নি। এ নিয়ে অবশ্য কেউ প্রকাশ্যে কিছু বলতে নারাজ।
দলীয় সূত্র আরও জানায়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সেই দিন রাতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ফোন করেন এবং ঘোষণা অনুযায়ী কর্মসূচি বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেন। তাকে লাইনে রেখেই সালাহউদ্দিন আহমেদকে ফোন করেন তারেক রহমান।
মহাসচিবের মাধ্যমে সালাহউদ্দিনকে বলা হয়, কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য। কিন্তু সালাহউদ্দিন জানিয়ে দেন, এই মুহূর্তে তা করা ঠিক হবে না। এতে নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধি অনুযায়ী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নির্বাচনী এলাকায় কোনো ধরনের সভা-সমাবেশ এবং বিজয় মিছিল করলে ও সমঝোতার শর্ত ভঙ্গ হবে। এতে ক্ষুব্ধ হন বিএনপির স্থায়ী কমিটির কেউ কেউ। বৈঠকেও তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ওই রাতেই কর্মসূচি বাস্তবায়নে সালাহউদ্দিকে স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য ফোনও করেন।
অপর একটি সূত্র জানায়, নির্বাচনের পর দলীয়ভাবে ঢাকা-৫ আসনের উপনির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে নতুন দাবি জানায় বিএনপি। নির্বাচনের বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য উপস্থাপন করেন। ওই দিন তিনি নির্বাচন প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দিলেও কোনো কর্মসূচির ডাক দেননি। সংবাদ সম্মেলন শেষে কোনো কর্মসূচি না থাকায় দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ফোন করেন মহাসচিবকে।
পরক্ষণেই বিএনপির মহাসচিব তড়িঘড়ি করে কর্মসূচি ঠিক করেন। কিন্তু ততক্ষণে মিডিয়াকর্মীরা গুলশান অফিস ত্যাগ করে চলে যান। পরে বিএনপি পক্ষ থেকে কর্মসূচি ই-মেইল বার্তায় পাঠানো হয়।
শূন্য হওয়া ঢাকা-৫ আসনে নানা সমীকরণ মিলিয়ে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নবী উল্লাহ নবীকে বাদ দিয়ে সালাহউদ্দিকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়। দলীয় প্রচারণায় বিএনপির কেন্দ্রীয়ভাবে একটি কমিটিও করা হয়। কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়ে গত ১২ অক্টোবর এক পথসভায় তিনি বলেছেন, ঢাকা-৫ আসনের উপনির্বাচনে ভোট কারচুপি হলে ১৭ তারিখ রাত থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট রুটে কোনো গাড়ি চলবে না।
রাজধানীর ডেমরা থানার সারুলিয়া এলাকায় সালাহউদ্দিন আহমেদের নির্বাচনী মিছিলপূর্ব ওই পথসভায় গয়েশ্বর বলেন, ১৭ অক্টোবর ঢাকা-৫ আসনের উপনির্বাচনে ধানের শীষে ভোট দিয়ে সরকারের অত্যাচার-নির্যাতনের জবাব দিতে হবে। আর কেন্দ্রে যাওয়ার পর যদি ভোট দিতে না দেওয়া হয় তাহলে সরকারকে দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে। শুধু তাই দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনসহ সিনিয়র অনেক নেতাই সালাহউদ্দিনের নির্বাচনী প্রচারণায় যোগ দেন। তবে প্রচারণায় নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি থাকলেও ভোটের দিন বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঠে পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে সালাহউদ্দিনের ছেলে ও ঢাকা মহানগর বিএনপি দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক তানভীর আহমেদ রবিন বলেন, ঢাকা-৫ আসনের ভোটে অনিয়মের বিরুদ্ধে আমরা প্রতিবাদ করেছি। আরপিও অনুযায়ী এবং নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে প্রার্থীদের সমঝোতা অনুযায়ী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নির্বাচনী এলাকায় সভা-সমাবেশ ও বিজয় মিছিল না করার নির্দেশনা থাকায় আমরা পরদিনই জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচি পালন করেছি এবং ৪৮ ঘন্টার পার হওয়ার পর আমরা নির্বাচনী এলাকায় প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছি।
দল থেকে ওই ধরনের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না, দল থেকে ওই ধরনের কোনো নির্দেশনা পাইনি।’