নাড়ু চুরি
বিশ্বজিৎ দাস
🕐 ৪:১০ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৪, ২০২০
‘খবরদার। একদম হাত দিবি না।’ মা ধমকে উঠলেন।
থমকে গেল তোতন।
‘দুটো দাও না, মা।’
‘না, বিকেলে অনেক মেহমান আসবে বাসায়। তখন অনেক নাড়ু লাগবে। মেহমান চলে যাক। তারপর যত খুশি নাড়ু চাস, খেতে পারবি।’
তোতনের মা নারিকেলের নাড়ু বানিয়ে একটা কুলার উপর রাখছেন। চারদিকে নারিকেলের গন্ধে ম ম করছে।
‘দাও না মা।’ হাত পাতল তোতন।
‘দে তো করবী ওর হাতে দুটো নাড়ু। আর কিন্তু একদম চাইবি না। বুঝলি।’
করবী ওর হাতে দুটো নয়, চারটে নাড়ু দিল।
‘লক্ষ্মী ভাই, আগে মেহমান চলে যাক। তারপর যত খুশি নাড়ু খেতে চাস, খাবি।’
নাড়ু খেতে খেতে পূজার মণ্ডপে চলে এলো তোতন। ওদের বাড়ির পাশেই প্রতি বছর দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। তখন তোতনের খুব মজা। স্কুল বন্ধ। সারা দিন মণ্ডপ প্রাঙ্গণেই বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা করে ও। মাঝে মাঝে বাদাম, তিলের খাজা, মুড়িমাখা কত কিছু কিনে কিনে খায়।
‘কী খাচ্ছিস?’ রাজেশ জানতে চাইল। ওর বন্ধু।
‘নারিকেলের নাড়ু। তুই?’
‘আমিও নারিকেলের নাড়ুই খাচ্ছি।’ পকেট থেকে রাজেশও নাড়– বের করল।
‘আমার মা তো নাড়ু দিতেই চাইছিল না।’ তোতন বলল।
‘আমাকেও তো দেয়নি। আমি চুরি করে বয়াম থেকে নিয়ে এলাম।’
‘চুরি করে।’ তোতন বিস্মিত হলো।
‘মা বলেছে, নিজের বাসার কোনো কিছু না বলে খেলে সেটাকে চুরি করে খাওয়া বলে না।’
‘হুম। তাহলে তো আমাকেও নাড়ু কয়েকটা সরাতে হবে। কিন্তু...।’
‘কিন্তু কী?’
‘ নাড়ুর বয়ামগুলো আমাদের বাসায় রাখে ভাঁড়ার ঘরে। অনেক উপরে।’
‘অসুবিধা নাই। তুই আমাকে সঙ্গে নিয়ে যাস। আমি তোকে এমন বুদ্ধি দেব যে সহজেই তুই নাড়ু চুরি করতে পারবি।’ রাজেশ বলল।
‘ঠিক আছে, তাহলে আজ দুপুরেই হবে নাড়ু চুরি অভিযান। ঠিক আছে?’
‘ঠিক আছে।’
দুই.
দুপুরের খাওয়ার পর তোতনের মা, ঠাকুমা সবাই ভাতঘুম দেয়। করবী দিদি যায় পাশের বাসায় বান্ধবীর সঙ্গে গল্প করতে।
ঠিক ওই সময়েই তোতন আর রাজেশ প্রবেশ করল ভাঁড়ার ঘরে।
নাড়ুর বয়ামগুলো রাখা আছে সবচেয়ে উপরের তাকে। চেয়ারের উপর উঠেও নাগাল পেল না তোতন। বাধ্য হয়ে চেয়ারের উপর একটা টুল রাখল ও। এবার নাড়ুর বয়ামের নাগাল পেল। কিন্তু বেশ ভারি বয়ামটি। নামাতে চাইলেও পারল না।
‘এক কাজ কর। আমিও চেয়ারের উপর দাঁড়াচ্ছি। তুই আমার হাতে নাড়ু একটা একটা করে দে।’ ফিসফিস করে বলল রাজেশ।
সেটাই করল তোতন। বয়ামের মুখ খুলে একটা একটা করে নাড়ু পাচার করতে শুরু করল নিচে। অনেকগুলো পাচার করার পর হঠাৎ তোতনের মনে হল, রাজেশ নাড়ুগুলো রাখছে কোথায়?’ ওর পকেট তো আর অনেক বড় নয়। বড় জোর আটটা নাড়ু ধরবে।
‘নাড়ুগুলো রাখছিস কোথায় রাজেশ?’
কোনো জবাব নেই।
‘রাজেশ, নাড়ুগুলো কোন জায়গায় রাখছিস?’
এবারও কোনো সাড়া নেই রাজেশের।
‘রাজেশ।’ নিচে তাকাল তোতন। যা দেখল, আত্মারাম খাঁচাছাড়া হওয়ার জোগাড় হল ওর।
নিচে দাঁড়িয়ে ওর দিকে কটমট করে চেয়ে আছে করবী। রাজেশ আশপাশেও নেই!
পালিয়েছে!
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228