ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

একবেলা আহারেই চলে তিনবেলা

তানজেরুল ইসলাম ও সুনান বিন মাহাবুব, পটুয়াখালী
🕐 ১১:২৪ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২৩, ২০২০

আদি পেশা ছেড়েও সুফল আসেনি। আর কী করবেন ভেবেও পাচ্ছেন না। টিকে থাকার লড়াইয়ে এখন চরম মানবেতর জীবনযাপন করছে তারা। শিশু আর বয়োজ্যেষ্ঠদের অবস্থা বেশি করুণ। বৈশ্বিক করোনা মহামারীর কবলে পড়ে ভবিষ্যৎ ভাবনা তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তাদের। কীভাবে চলবেন, কী খাবেন- জানেন না তারা। অথচ কিছু দিন আগেও বেদে সম্প্রদায়ের এসব সদস্য ছিলেন বেশ হাসিখুশিই। তিনবেলা ডাল-ভাতে মোটামুটি কেটে যেত। আর এখন একবেলা আহারেই পার করতে হচ্ছে দিন।

সমাজসেবা অধিদফতরের তথ্য মতে, দেশে প্রায় ১৩ লাখ ২৯ হাজার ১৩৫ জন অনগ্রসর জনগোষ্ঠী এবং ৭৫ হাজার ৭০২ জন বেদে জনগোষ্ঠী রয়েছে। বেদে জনগোষ্ঠীর শতকরা ৯৯ ভাগ মুসলিম এবং শতকরা ৯০ ভাগ নিরক্ষর। আগে তাবিজ বিক্রি করে বেড়ালেও ভবঘুরে এ সম্প্রদায়ের অধিকাংশই এখন হাতের কাজ ও দিনমজুরকে পেশা হিসাবে নিতে দেখা যায়। পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন তথ্য মতে, জেলায় অস্থায়ী বেদে জনগোষ্ঠী প্রায় ১ হাজার ৩০০ জন। চৌরাস্তা সংলগ্ন নদীর পাড়ে বসবাস করছেন প্রায় ৬০০ জন। এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন নদীপাড়ে নৌকায় বসবাস করছেন অন্তত ৫০ পরিবার। ভবঘুরে এসব নৌকার বাসিন্দারা কখনো লোহালিয়া নদীপাড়ে কখনো আবার বাঁধঘাট এলাকায় অস্থায়ী তাঁবু টানিয়ে বসবাস করেছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বাঁধঘাট এলাকায় ৩০টির অধিক তাঁবু রয়েছে। প্রতিটি পরিবারে শিশু-কিশোর মিলে ৫-৬ সদস্য। করোনা মহামারীর আগে তাবিজ-কবজ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করত। জেলায় করোনার প্রভাব দেখা দিলে বিভিন্ন এলাকায় প্রবেশে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। ফলে এ সম্প্রদায়ের পুরুষ ও নারীরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। বিকল্প উপার্জনের পথ হিসেবে কেউ কেউ দিনমজুরের কাজ বেছে নিলেও সেখানে মন্দাভাব। এমন এক পরিস্থিতিতে করোনাকালীন জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও র‌্যাবের পক্ষ থেকে কয়েকবার ত্রাণ সহায়তা করা হয়েছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় ছিল অপ্রতুল। গত কয়েক মাস ধরে বেদে পল্লীতে সরকারি ত্রাণ পৌঁছেনি।

পটুয়াখালী লোহালিয়া নদীর তীরে বেদে পল্লীর সর্দার জামাল হোসেন বলেন, করোনা শুরুর সময় তাদের আগে যারা লোহালিয়া নদীপাড়ে বসবাস করছিল তাদের অনেকেই জেলার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। অধিকাংশ পুরুষ কর্মহীন হয়ে পড়ায় দেখা দিয়েছে চরম খাদ্য সংকট। বেদে পল্লীর নারীরাও বিভিন্ন এলাকায় তাবিজ কবজ বিক্রি করতে পারছে না। বর্তমানে এক প্রকার ভিক্ষাবৃত্তি করেই তাদের বেঁচে থাকতে হচ্ছে।

 
Electronic Paper