ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

গৃহবধূকে পাঁচ টুকরো করে হত্যার রহস্য উদঘাটন, গ্রেপ্তার ৫

নোয়াখালী প্রতিনিধি
🕐 ১:২৪ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২২, ২০২০

নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চরজব্বার ইউনিয়নের জাহাজমারা গ্রামের বিল থেকে নূর জাহান (৫৮) নামের এক গৃহবধূর পাঁচ খণ্ডিত লাশ উদ্ধার ও হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন হয়েছে। ১৫ দিন পর এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। যার মধ্যে দু’জন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। একই সাথে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বটি, চাপাতি, কোদাল, বালিশ ও মৃতের পরনের শাড়ী উদ্ধার করা হয়।

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় নোয়াখালী জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন পিপিএম।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন, জেলার পুলিশ কর্মকর্তাগণ ও সাংবাদিকবৃন্দ।

এ সময় ডিআইজি জানান, গত ৭ অক্টোবর বুধবার বিকালে সুবর্ণচরের জাহাজমারা গ্রামের একটি বিলের মাঝের বিভিন্ন ক্ষেত থেকে নূর জাহান নামের ওই গৃহবধূর ৫ খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করা হয়। পরদিন তার ছেলে হুমায়ন কবির হুমা (২৮) বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা একাধিক ব্যক্তিকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। কোন প্রকার ক্লুলেস এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন, হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণকারীদের চিহিৃত করা, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রসহ অন্যান্য আলামত উদ্ধারে জেলা পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন এর নেতৃত্বে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে নামে।

জেলা পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, অভিযানকালে সন্দেহজনকভাবে মৃত নারীর ছেলে হুমায়ন কবির হুমার বন্ধু নীরব (২৬) ও প্রতিবেশী কসাই নূর ইসলামকে (৩৮) আটক করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বটি, চাপাতি, কোদাল, বালিশ ও মৃতের পরনের শাড়ী উদ্ধার করা হয়। পরে তারা দুইজন স্বেচ্ছায় তাদের অপরাধ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দী প্রদান করে। তাদের জবানবন্দীর ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী আগের মামলার বাদী ও মৃত নারীর ছেলে হুমায়ন কবিরকে (২৮) গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে হুমায়নের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত তার মামাতো ভাই কালাম প্রকাশ মামুন (২৬), মামাতো বোনের স্বামী সুমনকে (২৫) গ্রেপ্তার করা হয়।

এসপি আরও বলেন, হুমায়ন কবিরের সৎভাই বেলাল গত দেড় বছর আগে ইটভাটায় মারা যান। মৃত্যুর আগে বেলালের গরু, পুকুরের মাছ ক্রয় বিক্রয়, ব্যবসার পুঁজির জন্য মা নূর জাহানকে জিম্মাদার রেখে ৪ লাখ টাকা সুদে নেন। ওই টাকা পরিশোধ করার আগে মারা যান বেলাল। বেলালের মৃত্যুর পর পাওনাধারগণ ওই টাকার জন্য হুমায়ন ও তার মাকে চাপ দিতে থাকে। হুমায়ন চেয়েছিল মৃত বেলাল ও তার মায়ের নামে থাকা জায়গা জমি বিক্রি করে ওই টাকা শোধ করতে। কিন্তু নূর জাহান বলে হুমায়নের জমি বিক্রি করে তার শোধ করতে।

এ নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায়স ঝগড়া হতো। এর মধ্যে তার মামা দুলাল মাঝির কাছ থেকে পাওয়া ৬২ হাজার ৫শ টাকার জন্য প্রায় দুলালকে জোর করতো নূর জাহান। এসব বিষয় নিয়ে তারা দুলালের ছেলে কালাম ও মেয়ের জামাই সুমন নূর জাহানের ওপর ক্ষিপ্ত ছিল। আর এই ক্ষিপ্ততার জের ধরে হুমায়ন, কালাম, সুমন প্রতিবেশী ইসমাইল, হামিদসহ মোট ৭ জন এ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করে।

পরিকল্পনা অনুযায়ি দেনামুক্ত হতে ওইদিন তারা নূর জাহানকে তার বাড়ীতে ঘুমের মধ্যে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে। পরে তারা লাশটি পাওনাদারদের জমির পাশে নিয়ে বটি, চাপাতি ও কোদাল দিয়ে ৫খন্ড করে জমিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেয়। ঘটনায় এ পর্যন্ত ৫জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপর আসামি ইসমাইল ও হামিদকে দ্রুত গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

 
Electronic Paper