ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

উডলট বাগান প্রকল্পে অনিয়ম

তানজেরুল ইসলাম ও আরিফ খান, গাজীপুর
🕐 ৯:৩৭ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২১, ২০২০

গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর রেঞ্জে উডলট (আকাশমণি) বাগানের ঝুলছে শত শত উপকারভোগীর ভাগ্য। বছরের পর বছর বিভিন্ন টালবাহানায় চুক্তিপত্র দিতে করা হচ্ছে বিলম্ব। দিচ্ছি-দেব বলে কয়েক দফায় হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে টাকা। তারপরও থেমে নেই সংশ্লিষ্ট কর্তারা। ঘোরানো হচ্ছে দিনের পর দিন। এদিকে ২০১৮ সালের ১৪ আগস্টে রাজেন্দ্রপুর রেঞ্জ পরিদর্শন শেষে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইউসুফ রেঞ্জের অর্ডারবুকে চুক্তিনামা দলিল না পাওয়ার কথা উল্লেখ করে তৎকালীন রেঞ্জ কর্মকর্তা কাজী মাহিনুর রহমানকে নির্দেশ দিলেও আজো হয়নি সেই নির্দেশনার বাস্তবায়ন। এতে সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা তরি তীরে এসে ডুবতে বসেছে বলে মনে করছেন অধিকার বঞ্চিত দরিদ্ররা।

সামাজিক বনায়ন বিধিমালা ২০০৪ (সংশোধিত মে, ২০১১) অনুসারে, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর উদ্যোগে সামাজিক বনায়ন কার্যক্রমের ক্ষেত্রে উপজেলা পরিবেশ ও বন উন্নয়ন কমিটি উপকারভোগী নির্বাচন চূড়ান্ত করার কথা। সে হিসাবে চূড়ান্ত হয় তালিকা। তারপর গাছ রোপণ করে দেখভালও করেন। ওই আইনে উল্লেখ করা হয় বন অধিদফতর, ভূমির মালিক বা দখলি স্বত্বাধিকারী কোনো ব্যক্তি অথবা সরকারি বা সংবিধিবদ্ধ সংস্থা, উপকারভোগী ও বেসরকারি সংস্থা পারস্পরিক চুক্তি সম্পাদন করতে পারবে। আরও বলা হয়, উডলট বৃক্ষরোপণের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ১০ বছর এবং সর্বোচ্চ ২০ বছর মেয়াদ শেষে দুই অথবা তিন কিস্তিতে সর্বোচ্চ ৪০ বছর পর্যন্ত নবায়নযোগ্য। বিধিমালা মতে, বন অধিদফতরের নিয়ন্ত্রাণাধীন বনভূমির উডলট বাগানের গাছ কর্তনের পর বন অধিদফতর ৪৫ শতাংশ, উপকারভোগী ৪৫ শতাংশ এবং বৃক্ষরোপণ তহবিলে ১০ শতাংশ টাকা জমা হওয়ার কথা। সব শর্ত মেনেই মণিপুর বিটে চুক্তি করেন তিন উপকারভোগী। ২০০৭-০৮ সালে পাঁচ হেক্টর বনভূমিতে গড়ে তোলা হয় উডলট বাগান।

গত বছরেই ওই বাগানের গাছ কাটার সময় হয়েছে। কিন্তু সেই চুক্তির দলিল দিতে প্রথম থেকেই টালবাহানা শুরু হয় বলে রয়েছে অভিযোগ। বছরের পর বছর কেটে গেলেও হস্তান্তর করা হয়নি এখনো। এদিকে চুক্তিপত্র হাতে না পেলে আইন অনুযায়ী লভ্যাংশ পাওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। এ সুযোগে নানা কায়দায় ফাঁদ পেতে উপকারভোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে টাকা। এর আগে একই বিটে ২০১৬-১৭ সালে ‘তৃতীয় আবর্তে’ ৩০ জন এবং পরের বছর ‘দ্বিতীয় আবর্তে’ ৭০ জন উপকারভোগী চুক্তিনামা দলিল থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

অনুসন্ধান বলছে, গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর তৎকালীন গাজীপুর শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ শামসুল আরেফীনের নেতৃত্বে উপজেলা পরিবেশ ও বন উন্নয়ন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার কার্যবিবরণীতে রাজেন্দ্রপুর রেঞ্জের রাজেন্দ্রপুর পূর্ব বিটে ২০১৭-১৮ সালে নতুন আবর্তে এক হেক্টরে তিন জন, ২০১৮-১৯ সালের নতুন আবর্তে ৪ হেক্টরে ১১ জন, ২০১৮-১৯ সালের দ্বিতীয় আবর্তে ৮ হেক্টরে ২০ জন এবং ২০১৮-১৯ সালের তৃতীয় আবর্তে ১৪ হেক্টর উডলট বাগানে ৩৮ জন উপকারভোগীসহ সর্বমোট ৭২ জন উপকারভোগীর নামের তালিকা চূড়ান্ত অনুমোদন পায়। একই সভায় সূর্যনারায়ণপুর বিটের ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ সালের নতুন, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় আবর্তের বাগানের ১৫৯ জন উপকারভোগীর নামের তালিকা চূড়ান্ত অনুমোদন হলেও চুক্তিনামা দলিল হাতে পাননি উপকারভোগীরা।

এ ব্যাপারে রাজেন্দ্রপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. হারুন-অর-রশিদ খান জানান, ‘রাজেন্দ্রপুর পূর্ব বিটে ২০১৯ সালে অনুমোদিত উপকারভোগীদের তালিকা তিনি হাতে পাননি!’ অন্যদিকে, তৎকালীন রাজেন্দ্রপুর পূর্ব বিট কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান জানান, ‘চূড়ান্ত তালিকা হাতে পাওয়ার পর উপকারভোগীদের চুক্তিনামা দলিল সম্পন্ন করার পরবর্তী ধাপের জন্য তিনি রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. হারুন-অর-রশিদ খানের কাছে পাঠিয়েছেন।’

সূর্যনারায়ণপুর বিট কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান জানান, ‘চুক্তিনামা দলিল প্রদানের কাজ প্রক্রিয়াধীন।’ যদিও সম্প্রতি তার বদলির আদেশ হয়েছে। আদৌ চুক্তিনামা দলিল কপালে জুটবে কি না এমন আশঙ্কা ওই বিটের উপকারভোগীদের।’

উপকারভোগী মিজান জানান, ‘চুক্তিনামা দলিলের জন্য সম্প্রতি তিনি রাজেন্দ্রপুর রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। তবে দলিল এখনো বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে আসেনি বলে তাকে জানানো হয়েছে।’ অথচ সংশ্লিষ্ট রেঞ্জ কর্মকর্তার দাবি ‘তিনি উপকারভোগীদের চূড়ান্ত তালিকা এখনো হাতে পাননি।’ চূড়ান্ত তালিকা ছাড়া চুক্তিনামা দলিলে স্বাক্ষরের জন্য বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কাছে প্রেরণের সুযোগ নেই। উপকারভোগী মোস্তফা কামাল ভূইয়া জানান, ‘বিগত ২০০৭ সাল থেকে তিনি উডলট বাগানের পরিচর্যা করছেন। গত ১০ বছর ধরে একের পর মণিপুর বিট কর্মকর্তার হাতে পায়ে ধরেছেন তিনি। তবে কেউ দলিলের ব্যবস্থা করেননি।

বন সংরক্ষক আরএসএম মুনিরুল ইসলাম জানান, ‘উপকারভোগীরা কেন দলিল হাতে পায়নি তা খতিয়ে দেখতে বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেবেন।’

 
Electronic Paper