ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বিড়াল মারার গল্প

শিমুল শাহিন
🕐 ৩:৪৯ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২০, ২০২০

মিতাকে বিয়ের পর থেকে বন্ধুমহলে প্রায় সবাই আমার ঈর্ষায় কাতর! আমার বউ সুন্দরী বলে? উহু এটা প্রধান কারণ নয়। মিতা বেশ সাদাসিধে জীবনযাপন করে এটাই মূল কারণ। দামি শাড়ি, গয়না, সাজ-সজ্জায় মিতার এতটুকুও আগ্রহ নেই। কিন্তু অন্য বন্ধুদের তাদের বউয়ের সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে বিস্তর ঝামেলা লেগেই আছে।

আড্ডায় প্রায়ই শোনা যায়, একেকজনের একেকরকম অভিযোগ-অনুযোগ। একদিন শোনা যায় রতনের বউ রাগ করে বাবার বাসায় চলে গেছে স্বর্ণের মোটা চেইন কিনে দেয়নি বলে। একদিন শুনলাম সুজন বউকে ঈদে মনমতো শাড়ি কিনে দেয়নি বলে এখনো ওদের মাঝে কথা বলাবলি বন্ধ আছে। রফিক রীতিমতো বিরক্ত বউকে নিয়মিত পার্লার খরচ দিতে দিতে।

আমরা বন্ধুরা যখন সবাই আড্ডায় মিলিত হই তখন প্রায় সবাই আমাকে আর মিতাকে নিয়ে প্রশংসা করে। সবার একটাই প্রশ্নÑ একসময়ের ফ্যাশন সচেতন মিতা কেমন করে বিয়ের পর হঠাৎ এমন বদলে গেল! এমনই এক আড্ডায় সবুজ একদিন জিজ্ঞেস করল, ‘আচ্ছা দোস্ত, তোর বউ মিতা ভাবি তো বিয়ের আগে অনেক সাজগোজ করত, কেনাকাটা করত! বিয়ের পর হঠাৎ এমনে বদলায় গেল কেমনে?’

আমি হেসে চুপ করে থাকলাম। সবুজের প্রশ্নটায় উৎসুক হয়ে সবাই আমায় চেপে ধরল। বুঝলাম উত্তর দেওয়াই লাগবে। শেষমেশ হেসে বললাম, ‘শোন, বিড়ালটা বাসর রাতেই মেরে দিয়েছি!’ ওরা সবাই বলে উঠল, ‘সে তো কম-বেশি সবাই মারে, আমরাও মেরেছি!’

‘আরে ধুর, তোরা সবাই উল্টাপাল্টা বুঝিস!’

রাকিব বলল, ‘তবে, খুলে বল তো!’

ওদের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে আমার চোখের সামনে স্পষ্ট ভেসে উঠল বিয়ের দিনের সব ঘটনা। বাসর রাতের কথা! সেদিন বেশ রাত হতেই ঘরে ঢুকে দেখলাম খাটে বিশাল একটা ঘোমটা টেনে মিতা বসা। ওর পাশে বসে একটুখানি সময় নিয়ে বললাম, ‘আচ্ছা মিতা, তোমায় আমি কী দেখে এত ভালোবাসি জানো?’

ঘোমটার তলা থেকে মুখ বের না করেই সে সলাজে উত্তর দিল, ‘কী দেখে?’

বললাম, ‘নিশ্চয়ই তোমার বাবার টাকা দেখে নয়?’ আলতো করে মুখটা ঘোমটার নিচ থেকে বের করে সে বলল, ‘তা তো নয়ই!’ আবার বললাম, ‘নিশ্চয়ই তোমার দামি দামি শাড়ি-গয়নার পাহাড় দেখে নয়!’

সে আবার উত্তর দিল, ‘অবশ্যই তা নয়!’

‘তোমার পার্লারে গিয়ে অদ্ভুত সাজময় সৌন্দর্য দেখেও নয় নিশ্চয়ই?’

সে হেসে বলল, ‘ধুর, সে তো জানি! তবে কীসের জন্য আমায় এত ভালোবাসো?’

এ প্রশ্নের অপেক্ষাতেই আমি ছিলাম। আগে থেকে সাজিয়ে রাখা কথাগুলোই বেশ নাটকীয় ভঙ্গিতে বলে গেলাম, ‘তোমাকে সবচেয়ে ভালো লাগে সাদাসিধে থাকলে। তোমার ন্যাচারাল সৌন্দর্যটা আমায় অন্যরকম উদ্বেলিত করে। কথা দাও দামি গয়না, শাড়ি, মেকাপের আর্টিফিসিয়াল রূপে আমার সামনে এসে আমার ভালোবাসাটা কখনো ফিকে হতে দেবে না!’

মিতা তার হাত দু’খানি দিয়ে আমার বাড়ানো হাতটা ধরে বলল, ‘কথা দিলাম, তোমার ভালোবাসাটা ধরে রাখতে আজীবন সাধারণই থাকব, সাদাসিধেই থাকব।’

গল্পটা সবিস্তারে বলতেই আড্ডায় হাসির রোল পড়ল। একে একে সবাই আমার পিঠ চাপড়ে বলল, ‘সত্যিকারের বিড়ালটা তুই-ই মেরেছিস!’

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper